রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

জীবন বদলে দেওয়ার চাবিকাঠি মেডিটেশন

আমি আমার বিশ্বাস থেকে সুস্থ দেহ, প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন প্রত্যাশা করি। কাজেই আমরা, প্রতিদিন নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য সারাদিনে একটু সময় বের করে মেডিটেশন করব, নিজেকে সুস্থ রাখব। নিজের পরিবার এবং অন্যকে মেডিটেশন করতে সহায়তা দেব, উৎসাহিত করব।
কানিজ ফাতেমা দোলা
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জীবন বদলে দেওয়ার চাবিকাঠি মেডিটেশন
জীবন বদলে দেওয়ার চাবিকাঠি মেডিটেশন

জীবন বদলে দেওয়ার চাবিকাঠি : প্রতিটি মানুষের জীবনেই শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির প্রয়োজন। আমাদের নাগরিক জীবন এতটাই কর্মমুখর যে, এই ব্যস্ত ও জটিল হয়ে পড়ার কারণে নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। মেডিটেশন চর্চা করুন। দূর হবে আপনার ভয় হতাশা বিষাদ ও নেতিবাচক চিন্তা। আপনি থাকবেন সুস্থ, আশাবাদী ও কর্মোদ্যমী। মেডিটেশনের কথা বিশ্বাসের সঙ্গে ছড়িয়ে দিন আপনার পরিচিত পরিমন্ডলে।

বাড়ান রোগ প্রতিরোধ শক্তি : মেডিটেশন করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। বাড়বে আপনার সুস্থ জীবনের সম্ভাবনা। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাকারীরা তুলনামূলক সুস্থ ও কর্মোদ্দীপ্ত জীবনযাপন করেন সারা বছরজুড়েই। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মেডিটেশনে কার্যকত একথা বলা হয়েছে; বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জাতীয় নীতিমালায় মেডিটেশন চর্চার ফলে আপনার ঘুম হবে প্রশান্তিদায়ক ও তৃপ্তিময়।

উলেস্নখ্য, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়সি মানুষ অনিদ্রার অভিশাপে ভুগছেন।

সৌন্দর্য চর্চায় মেডিটেশন : নিয়মিত মেডিটেশন চর্চায় সৃষ্টি হয় আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি। ধূমপান, মাদকাসক্তিসহ যে কোনো বদভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হয়। এলার্জি, চুলকানিসহ বহু চর্মরোগের নেপথ্য কারণ, দুশ্চিন্তা, গস্নানি ও হতাশা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এ রোগগুলোর স্থায়ী সমাধান কোনো ওষুধ নয়, মেডিটেশন ও প্রণায়াম চর্চা, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। কোষের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ এবং টক্সিন দূর করে মেডিটেশন। দীর্ঘ সময় তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্ক থাকুক ক্ষুরধার : বয়স বাড়ার ফলে আলঝেইমার্স, পার্কিনসন্স ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্মৃতিজনিত রোগ প্রতিরোধে মেডিটেশন চর্চা সর্বাধিক কার্যকর। 'ব্রেনের হিপোকগমপাস অঞ্চলে গ্রেম্যাটারের পুরুত্ব বাড়ে যদি আপনি মেডিটেশন করেন মাইগ্রেন-সাইনুসাইটিসকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে স্ট্রেস। মেডিটেশন দেহে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মুক্তি দেয় এ দুটি রোগ থেকে। মেডিটেশন করলে শরীরে এন্দ্রোরফিন নামক ব্যথা নাশক হরমোন নিঃসরণ হয়। ফলে ধ্যানিরা মুক্ত থাকেন ব্যথার অনুভূতি থেকে। ধ্যান চর্চায় আসে মানসিক স্থিরতা ও নিজের প্রতি ভালোবাসা- যা জীবনে এনে দেয় নতুন ছন্দ। সৃষ্টি হয় আত্মবিশ্বাস। বাড়ে গ্রহণযোগ্যতা।

পেশির শিথিলায়ন : ক্রমিক রোগ নিরাময়ের অন্যতম শর্ত স্নায়ু ও পেশির শিথিলায়ন। মেডিটেশন ইয়োগা ও প্রার্থনা দেহ ও মনের টেনশন দূর করে শিথিল হতে সাহায্য করে। সমাজবিজ্ঞানীরা। বলছেন, যে পরিবারগুলোতে নিয়মিত ধ্যান চর্চা হয়, সেখানে পরস্পরের বোঝাপড়া ভালো এবং হৃদ্যতাও বেশি। মেডিটেশন মানুষের অন্তরে কৃতজ্ঞতাবোধ ও ইতিবাচক সৃষ্টি করে এবং পারস্পরিক সম্পর্কগুলোকে মজবুত রাখে। নিয়মিত রেমডিটেশন করলে স্বতঃস্ফূর্ত সাফল্য আসবে- একথা নতুন নয়। গবেষণায় পাওয়া নতুন কথাটি হলো- ধ্যানী দম্পতিরাই সুখী- যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ হ্যাম্পটনের আইরন ও ডেভিট টম্পকিনসনের দম্পতি ৪৭ বছর ধরে সুখী দাম্পত্য এবং ৩০ বছর ধরে সুখী জীবনযাপন করছেন এবং সেই সূত্র শিখিয়ে যাচ্ছেন অন্য দম্পতিদের। তারা বলেন, মেডিটেশন অতীতের ক্ষতগুলো সারিয়ে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। আমরা এক সাথে ধ্যান চর্চা করি এই অভ্যাস আমাদের বিবাহিত জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করেছে।

মাইন্ডফুল প্যারেন্টিংয়ের জন্য ধ্যান : পশ্চাত্যে 'মাইন্ডফুল প্যারেন্টিংয়ের কথা ইদানীং খুন বলা হচ্ছে। অর্থাৎ সন্তান লালনের প্রক্রিয়াটি শুধু মা-বাবার যত্ন নয়। এরই সঙ্গে দাবি করে মনোসংযোগও। এই মনোসংযোগের উৎসই হলো মেডিটেশন বা ধ্যান। সচেতন মা-বাবা সন্তানদের শৈশবেই মেডিটেশন শিখাচ্ছেন যেন তাদের মনোযোগ স্মৃতি শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং দৈনন্দিন জীবনের বাধাবিপত্তিগুলো যেন নিজেরাই অতিক্রম করতে পারে। শুরুতেই প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিট সন্তাদের সঙ্গে নিয়ে মেডিটেশন বসুন প্রতিদিনের এই নীরব কিছু মুহূর্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যেন গড়ে ওঠে নিবিড় মর্মতাপূর্ণ সম্পর্ক। একে অপরের প্রতি করবে শ্রদ্ধাশীল দায়িত্ব সচেতন ও সমমর্মী। কমবে অভিযোগ প্রবণতা, রাগ ক্ষোভ ও সহিংস আচরণ।

আমার বিশ্বাসের কথা আমি বলব : উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলছি আমি আমার বিশ্বাস থেকে সুস্থ দেহ, প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন প্রত্যাশা করি। কাজেই আমরা, প্রতিদিন নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য সারাদিনে একটু সময় বের করে মেডিটেশন করব, নিজেকে সুস্থ রাখব। নিজের পরিবার এবং অন্যকে মেডিটেশন করতে সহায়তা দেব, উৎসাহিত করব।

আমরা আমাদের ধ্যানও জ্ঞান শক্তি দিয়ে নিজের পরিবেশ ও দেশকে রক্ষা করতে পারব। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করে দিয়েছি তাই আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করুন মেডিটেশন দিয়ে।

কানিজ ফাতেমা দোলা : কবি ও নৃত্যশিল্পী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে