সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

নানা সংকটে সেবাবঞ্চিত রোগীরা

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
  ১১ মে ২০২৫, ১৫:০২
নানা সংকটে সেবাবঞ্চিত রোগীরা
ছবি: যায়যায়দিন

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির একটি আধুনিক ভবন নির্মিত হলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এখানে আধুনিক ও সুসজ্জ্বিত অপারেশন থিয়েটার থাকলেও অপারেশন বন্ধ ১০ বছর ধরে। জেনারেটরটিও চালু হয়নি। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, সব সংকট কাটিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শষ্যায় উন্নীত করা হয়। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে মোট ডাক্তারের পদ ৩০ টি। বিশেষজ্ঞ পদ পুরুণ হয়নি দীর্ঘদিনেও। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট ও ২০ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও এ হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ২ জন কনসালটেন্ট ও ৫জন মেডিকেল অফিসার। জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জিক্যাল) একজন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটিশনে রয়েছেন। ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসারের পদটি শুন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্মলগ্ন থেকে। ইনডোর ও আউটডোর সেবাটি সেকমো (সাব অ্যাসিস্ট্যান্স কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) ও সাব-সেন্টারের চিকিৎসক দিয়ে চালানো হচ্ছে। তবে নার্স সংকটটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে।

সব ধরণের অপারেশন করার জন্য বরাদ্দ দেয়া একটি সুসজ্জিত রুম। দেয়া হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থার জন্য রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জেনারেটর। আছে প্রশিক্ষিত নার্স। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন ডাক্তার বাইরের ক্লিনিকে অপারেশন করেন। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে তাদের দিয়ে অপারেশন করানো হয় না। এদেরকে দিয়ে অপারেশন করানোর কোন অনুমতি নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর ফায়দা লুটছেন বিভিন্ন ক্লিনিক।

একটি সূত্র জানায়, অনেক ভাল ডাক্তার বদলি হয়ে এসেছিলেন এখানকার লোকজনকে সেবা দিতে। কিন্তু এখানকার কতিপয় ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন না করার জন্য হুমকি দেয়া ছাড়াও মারধর করার কারণে ডাক্তাররা থাকতে চান নি। বর্তমানে ডাক্তার সংকট রয়েছে। অপারেশন না করায় যেমন গরীব অসহায় রোগীদের অর্থদণ্ড হচ্ছে তেমনি ফায়দা লুটছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এ উপজেলার শিমুলতলার মনিরুল জানান, তার ভাবীর সিজারিয়ান অপারেশ করা হয়েছে গাংনী রাজা ক্লিনিকে। স্বল্প আয়ের মানুষ অথচ খরচ করতে হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হলে কোন অর্থ খরচ হতো না। একই কথা জানান মিনাপাড়ার আজিবুল। তার স্ত্রীকে সিজারিয়ান অপারেশন করান রাজা ক্লিনিকে। এখানে ওষুধ বেড ভাড়া আর ডাক্তার বাবদ খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা।

জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও সেটি অচল। বেশ কয়েকবার সারানোর জন্য টেকনিশিয়ান আনা হয়েছিল কিন্তু মেরামত করতে পারেননি।। বিদ্যুৎ চলে গেলে ওয়ার্ড থাকে অন্ধকারে। হারিকেন থাকলেও তেলের বরাদ্দ না থাকায় তা জ্বালানো হয় না। স¦াস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে কোন আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর বসে মাদকের আখড়া। ওয়ার্ডে রোগীদের বিছানার চাদর ময়লা ও ছেড়া। ঠিকমত পরিস্কার করা হয় না। পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন সামগ্রী না থাকায় টয়লেট ও ফ্লোর দুর্গন্ধ।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, ইতোমধ্যে তিনি ডাক্তার সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অপারেশন করাতে হলে সরকারী কিছু নিয়ম রয়েছে। বাইরে যে চিকিৎসক অপারেশন করেন তাতে কোন বাধা না থাকলেও সরকারি নিয়মে সেটি রয়েছে। ডাক্তার সংকট কাটিয়ে উঠলে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে