সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৪ শতাংশ কৃষিপণ্য নষ্ট হচ্ছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণ করা কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, যদি কৃষিপণ্য নষ্ট হয় তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। ফলে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা অপরিহার্য। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দেশে প্রতি বছর উৎপাদিত ফল ও কৃষিপণ্যের ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এর মূল কারণই হলো সেগুলোর সংরক্ষণ সুবিধা না থাকা। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া জরুরি, এমন পরিস্থিতিতে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে দেশের, বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে দেশবাসীকে।

বলা দরকার, নিত্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বাড়ার বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। অন্যদিকে, দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্নমধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের দিশেহারা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে কৃষি পণ্য সংরক্ষণের অভাবে যদি বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, আবার বেশি দামে দেশবাসীকে পণ্য কিনতে হয়- তবে তা কতটা উদ্বেগের সেটা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। তবে আশার খবর হলো, এসব পণ্য সংরক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হিমাগার খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং তাদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। তথ্য মতে, বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিনিয়োগ ভবনে 'কোল্ড চেইন ইনভেস্টমেন্ট কনফারেন্স-২০২৪' শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। আমরা মনে করি, বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে এবং কৃষি পণ্য সংরক্ষণে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এটাও সামনে এসেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে সে দেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের একটা বিশেষ সুযোগ তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের সুযোগ নিতে তাদের বিশেষ করে চেইন কোল্ড স্টোরেজ খাতে বিনিয়োগে সুদহারে কীভাবে ভর্তুকি দিয়ে সহযোগিতা করা হবে সে বিষয়ে আলোচনায় বসবে এমনটিও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, এটাও আমলে নেওয়া দরকার, কেন হিমাগার খাতে বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধার কথা ভাবা হচ্ছে, তার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেছেন, 'প্রতি বছর দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা চেইন হিমাগার তৈরি করে যদি তা রক্ষা করতে পারি তাহলে আমি শতভাগ নিশ্চিত যে, আমাদের রপ্তানি বৈচিত্র্য বাড়বে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রতি বছর আমাদের বিপুল কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।'

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃষি বিনিয়োগ পরামর্শক সংস্থা লিক্সক্যাপ অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইলিয়াম ফেলো মূল প্রবন্ধে বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ৪৪ শতাংশ ফল ও শাকসবজি নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে, আনুমানিক বার্ষিক ২৪০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। 'কোল্ড চেইন লজিস্টিকসে বিনিয়োগ এই ফসল পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি উলেস্নখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারে এবং বাংলাদেশকে আমদানি করা খাবারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারে।' অন্যদিকে, যথাযথ কোল্ড চেইন স্টোরেজ এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে বিনিয়োগ আমদানি নির্ভরতা এবং ফসলপরবর্তী ক্ষতি হ্রাস করবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এটি মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রধান খাদ্যের সরবরাহ সমতলকরণের মাধ্যমে দেশের জন্য একটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব রাখতে পারে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশের কৃষিপণ্য ৪৪ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে এটা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে এসব পণ্য সংরক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হিমাগার খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং তাদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার- তা আশাব্যঞ্জক। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কৃষিপণ্য সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে