সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ যুদ্ধের শেষ কোথায়

অমিত কুমার দেবনাথ, শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

তৃতীয় বর্ষে পা রাখল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের দ্বারা পৃথিবীতে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই যুদ্ধেও এর বিকল্প কিছু হচ্ছে না বা ভবিষ্যতে হবে- এরকম কোনো নিশ্চিয়তা নেই। তার, নমুনা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলেই হাড়েহাড়ে টের পাওয়া যায়। কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইউক্রেন সফর শেষ হলো। তিনি নিজেও যুদ্ধের বিরুদ্ধে। তিনি নিজেও বলেছেন, যুদ্ধে কারও লাভ হয় না। কারও লাভ হলেও যে দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ হয়, তাদের হয় না। তবে, আশার কথা এটাই যে, শুরু যখন আছে তখন শেষ থাকবেই- এটা স্বাভাবিক। কবে নাগাদ শেষ হয় সেটাই দেখার বিষয়। ঞযবড়পৎধঃরপধষ ঢ়বৎংঢ়বপঃরাব বা তত্ত্বগত দৃষ্টিকোণ থেকে একটি চলমান সংঘাত বা যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার ছয়টি ভেরিয়েবল বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান তখনই হবে যখন রাষ্ট্র দুটির মধ্যে ছয়টি ভেরিয়েবলই প্রতীয়মান থাকবে। প্রথমত : যুদ্ধ করতে করতে যখন দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে ক্লান্তি চলে আসবে। রাশিয়া তুলনামূলক ইউক্রেনের চেয়ে লাভবান হয়েছে এবং তাদের সমৃদ্ধ অস্ত্রাগারের কারণে আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, রাশিয়ার ক্লান্তি আসার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে প্রায় পশ্চিমা বিশ্বে অস্ত্র সহায়তা চাইতে দেখা যায় এবং পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা করার নজিরও বিশ্ববাসী দেখেছে। তবে, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের সাহায্য-সহায়তার ওপর ইউক্রেনের ক্লান্তি আসা না আসা অনেকাংশে নির্ভর করছে। দ্বিতীয়ত : যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যখন রাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগণ, সিভিল সোসাইটি, প্রেসার গ্রম্নপ ইত্যাদি থেকে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। তবে এ ক্ষেত্রে এই নীতি কিছুটা ভিন্ন। গবেষক ইলিয়াস গটজ দেখিয়েছেন যে, মস্কোর পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে রুশ জনগণের চাহিদার চেয়ে পুতিনের মতাদর্শই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। উবপরংরড়হ-সধশবৎ ষবাবষ তত্ত্ব্বের বক্তারা যুদ্ধের মূল কারণ হিসেবে পুতিনের ব্যক্তিগত ওয়াল্ডভিউকেই দাবি করেন। তৃতীয়ত : যে রাষ্ট্রটি যুদ্ধের মূল কারণ, তার বিরুদ্ধে অন্যান্য শক্তিশালী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহল বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে থাকে। যুদ্ধের শুরুতেই আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে রাখতে চেষ্টা করেছিলেন। কিছু দিন রাশিয়া চাপে ছিল, এটাও সত্য। কিন্তু রাশিয়া; চীন ও ভারতের মতো বড় জনসংখ্যার দেশসহ বিকল্প বিভিন্ন বাজার পেয়ে এ সমস্যার সমাধান দ্রম্নতই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। তাই উপরিউক্ত মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা একদমই নেই বললেই চলে। চতুর্থত : আমরা কখনোই বাংলাদেশকে আমেরিকা বা চীনের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় দেখব না। কেননা, দুই দেশের মধ্যে কোনো দিক থেকেই কোনো রকম সামঞ্জতা নেই। কোনো রাষ্ট্র যখন দেখে যে, তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর্যাপ্ত সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সক্ষমতা তার রয়েছে তখনই দেশটি কোনো সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু, কিছু দিন যুদ্ধ চলার পড় যখন কোনো দেশ সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে তখন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ায় একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। পঞ্চমত : যে বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, সে বিষয়গুলো কমিয়ে আনা বা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়, তাহলেই যুদ্ধ বন্ধ করা যায়। রাজনীতিতে কখন কি হয়, তা বলা অত্যন্ত মুসকিল হলেও রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করলে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, এই মুহূর্তে আলোচনার টেবিলে বসার মতো অবস্থায় এখনো কোনো দেশ প্রয়োজন মনে করছে না বা সেই অবস্থায় নেই। ষষ্ঠত : উবপষরহব রহ পড়হভষরপঃ ংঁংঃধরহরহম ধপঃং. অর্থাৎ কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো একটি কনফ্লিক্টকে বেশি দিন চলার জন্য ফুয়েল জোগায়। যেমন যুদ্ধের প্রতি জনগণের সমর্থন। জনগণ যত দিন চুপ থাকে বা যুদ্ধকে সমর্থন করে, ততদিন যুদ্ধ চলমান রাখার অনুপ্রেরণা পায়। কিন্তু জনগণ যুদ্ধবিরোধী মনভাব পোষণ করলে সে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। উপরিউক্ত, ছয়টি বৈশিষ্ট্য যখন রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে প্রতীয়মান হবে তখনই যুদ্ধ বন্ধ হবে। যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য রুশ জনগণ সিভিল সোসাইটি, আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে, যুদ্ধ করতে করতে একসময় রাশিয়ার সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হ্রাস পাবে। অন্যদিকে, নাটো যখন ইউক্রেনেেক সহায়তা বন্ধ করে দিবে তখন চলমান যুদ্ধ বন্ধ হবে। তবে কানাডার রাজনীতি বিশ্লেষক মিশেল ব্রেচার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ্তুঢ়ৎড়ঃৎধপঃবফ ঈড়হভষরপঃ্থ হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। এই চৎড়ঃৎধপঃবফ পড়হভষরপঃ বলতে এমন যুদ্ধকে বোঝানো হয়, যেগুলো সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সহজে বন্ধ হয় না। আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ সহজে বন্ধ হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে