সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণ রোধে উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যে সব তথ্য ওঠে আসে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রসঙ্গত, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে মঙ্গলবার সকালে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৮৯। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া জরুরি যে, বায়ুর এ মান অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়। সোমবার বায়ুদূষণে ঢাকার স্কোর ছিল ১৭৬, অবস্থান ছিল চতুর্থ। মূলত বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক আইকিউএয়ারের সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে।

আমরা বলতে চাই, যে তথ্য সামনে আসছে, তা যেমন আমলে নিতে হবে- তেমনি বিভিন্ন সময়ে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য ওঠে এসেছে- সে সবও এড়ানোর সুযোগ নেই। বায়ুদূষণ কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। এর আগে এমনও জানা গিয়েছিল, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃতু্য হয়। ফলে দেশের সংশ্লিষ্টদের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্টদেরও কর্তব্য হওয়া দরকার- সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করা। আমরা এটাও বলতে চাই, বায়ুদূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এটাও জানা যায় যে, সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান, যেমন ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, পাওয়ার স্টেশন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।

লক্ষণীয়, আইকিউএয়ারের মানদন্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে 'মাঝারি' বা 'গ্রহণযোগ্য' মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা 'অস্বাস্থ্যকর' বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' বায়ু ধরা হয়। আর ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে 'দুর্যোগপূর্ণ' বা 'ঝুঁকিপূর্ণ' ধরা হয়। এটাও আমলে নেওয়া দরকার যে, আইকিউএয়ারের দেওয়া মঙ্গলবারের তালিকায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই (পিএম ২.৫) দূষণের প্রধান উৎস। এছাড়া লক্ষণীয়, এদিন ঢাকার বাতাসে যতটা এই বস্তুকণা ছিল, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মানদন্ডের চেয়ে ২০ গুণের বেশি। ফলে বায়ুদূষণের ভয়াবহতাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

স্মর্তব্য যে, ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে আইকিউএয়ার যে পরামর্শ দিয়েছে তার মধ্যে আছে বাইরে বের হলে মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাসার বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করা যাবে না। দূষণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরের জানালা বন্ধ রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, তেমনি দূষণ রোধে উদ্যোগী হওয়াও একইসঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এটাও এড়ানো যাবে না, বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা মানুষ। তাদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ফলে বিশেজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিতে হবে। এছাড়া এটাও, ঢাকার বায়ুদূষণের স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে আছে যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণ কাজের দূষণ, আশপাশের ইটভাটার ধোঁয়া ইত্যাদি এগুলোও এড়ানো যাবে না।

সর্বোপরি বলতে চাই, বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি এটাও জানা গিয়েছিল। ফলে বায়ুর মানের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। এছাড়া ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও এর জানা গেছে। ফলে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে