বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

বিদু্যৎ বিভ্রাট মোকাবিলা

নাফিউল ইকবাল শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বিদু্যৎ বিভ্রাট মোকাবিলা

বিদু্যৎ একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি। বিদু্যৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে বাংলাদেশের বিদু্যৎ খাত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। লোডশেডিং বিদু্যৎ-বণ্টন ব্যবস্থার একটি অংশ যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে বৈদু্যতিক শক্তি বন্ধ করে সরবরাহে বাধা দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর বিদু্যৎ খাতের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, বাংলাদেশের বিদু্যৎ খাতের সার্বিক উন্নয়ন অনেকটাই মন্থর। 'এনার্জি আর্কিটেকচার পারফরম্যান্স ইনডেক্স-২০২৩' শিরোনামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদু্যৎ কাঠামোগত দক্ষতা সূচকে বিশ্বের ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭তম। লোডশেডিং পরিস্থিতির কারণে গ্রামীণ এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি নাকাল হচ্ছে। দেশের ১৫৩টি বিদু্যৎকেন্দ্রের মধ্যে ৪৯টি বিদু্যৎ কেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চলছে। অবশিষ্ট ১০৪টি বিদু্যৎ কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত প্রায় ৫৩টি জ্বালানির অভাবে বন্ধ করা হয়েছে। অর্থনীতির ভাষায় একটি দেশে মাথাপিছু বিদু্যতের ব্যবহার যত বেশি হবে, সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত বেশি হবে।

বাংলাদেশে বিদু্যৎ সংকটের প্রভাব কৃষি ও শিল্প সেবাসহ জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বিদু্যতের অভাবে শিল্প-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে এবং উৎপাদন খরচ বেড়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। বিদু্যতের অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মালিকরা। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। বিদু্যতের অভাবে অনেক পোশাক কারখানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকে, যা দেশের জন্য অশুভ লক্ষণ। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে বিদু্যতের চাহিদা ১৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বিদু্যৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট তবুও বিদু্যতের সংকট। যার প্রধান কারণ আমদানি ব্যয়। বাংলাদেশের বিদু্যৎ কেন্দ্রের জন্য বেশির ভাগ জ্বালানি আমদানি করতে হয় এবং ডলার সংকটের কারণে তা আরও কষ্টসাধ্য। আবার অনেক সময় আর্থিক সংকটের কারণে পিডিবি বেসরকারি বিদু্যৎ কেন্দ্রের বিল সময়মতো পরিশোধ করতে পারে না। ফলে বিদু্যতের উন্নয়নে জটিলতা দেখা দেয়। বিদু্যতের ঘাটতি মেটাতে মোট চাহিদার ১০ শতাংশ আমদানি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাস, জ্বালানি তেল, কয়লা এবং সৌরশক্তির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট বিদু্যতের ৫১ শতাংশই প্রাকৃতিক থেকে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক গ্যাস হলো বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য জ্বালানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম দুই থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় বিদু্যৎ সংকট তৈরি হয়েছে।

একটি দেশের বিদু্যৎ ক্ষেত্রে উন্নয়নের পরিস্থিতি পরিমাপের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। একটি দেশের বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিক্ষার ওপর প্রভাবক হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। বিদু্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদু্যৎ বিভ্রাট কমানো একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। বিদু্যৎ বিভ্রাটের প্রতিকারের জন্য নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিদু্যৎ বিভ্রাটের প্রতিকারের জন্য নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই পদক্ষেপে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিদু্যৎ আপচয় রোধ ও সচেতন হতে হবে। অত্যধিক লোডশেডিংয়ের কারণে বিভিন্ন জরুরি সেবা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে বিদু্যতের ঘাটতি চলতে থাকলে আমাদের জিডিপি কমে যাবে এবং চরম বেকারত্বের সৃষ্টি হবে। তাই বিদু্যৎ সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে স্থায়ীভাবে বিদু্যৎ সংকট নিরসনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে