মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় অস্বাভাবিক ব্যয় কেন!

নতুনধারা
  ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

৩০ মার্চ ২০২৪ শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে করা 'বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি উত্তর টেকসই পুনরুত্থান' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে শিক্ষার এমন আরও নানা রকমের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 'এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩' নামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে একজন শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের জন্য পরিবারের মাথাপিছু ব্যয়ের অস্বাভাবিক হিসাব। আমাদের দেশের মানুষের অর্থসামাজিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অস্বাভাবিক শুধু নয়, অসম্ভব। ২০২২ সালে একজন পোশাক শ্রমিকের মাসিক ন্যূনতম মজুরি ছিল ৮ হাজার টাকা, একজন চা-শ্রমিকের নূ্যনতম মজুরি ছিল ৩ হাজার ৬০০ টাকা। ২০২৩ সালে এসে একজন পোশাক শ্রমিকের মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা হয়, একজন চা-শ্রমিকের বেতন ৫ হাজার ১০০ টাকা।

গণসাক্ষরতা অভিযানের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী পিছু পরিবারে গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই এ খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৪৭ টাকা। ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী পিছু পরিবারের ব্যয় ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা। সূত্র: (প্রথম আলো) অর্থাৎ পোশাক শ্রমিক ও চা-শ্রমিকদের মজুরি অনুপাতে তাদের সন্তানদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে অধ্যয়ন করা অসম্ভব, যা তাদের আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ। মধ্যবর্তী পরিবারের বার্ষিক সর্বোচ্চ আয় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার কিংবা এর চেয়ে স্বল্প পরিমাণে বেশি। সেই পরিবারের সন্তানদের জন্যও এই ব্যয় অস্বাভাবিক। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, এই অস্বাভাবিক ব্যয় মিটিয়ে কীভাবে এসব পরিবারের সন্তানেরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে?

বেশির ভাগ পরিবারকে ধার কিংবা ঋণের সাহায্য নিতে হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার ব্যয় বহন করা পুরোপুরি অসম্ভব। যারা এর মধ্যেও অস্বাভাবিকতা গ্রহণ করে সন্তানদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সম্পূর্ণ করিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগ সন্তানের জন্য উচ্চমাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা স্পর্শ করাই দুষ্কর। গণসাক্ষরতা অভিযানের মতে, এই অস্বাভাবিক ব্যয়ের মূল কারণ কোচিং, প্রাইভেট ও নোট গাইড। আর এই কোচিং, প্রাইভেট ও নোট গাইড নির্ভরতার হার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ৯২ থেকে ৯৩ শতাংশ। শিক্ষাব্যবস্থায় সঠিক ব্যবস্থার আয়োজনের ঘাটতি থাকাতেই তো শিক্ষার্থীরা কোচিং, প্রাইভেট ও নোট গাইডে নির্ভরশীল হয়েছে। এর জন্য দায়ী শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকদের আশ্রয়ে এসব কোচিং, প্রাইভেট ও নোট গাইড কোম্পানি শিক্ষাকে দখল করেছে। ফলে শিক্ষার ব্যয় অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে। শিক্ষাকে বেসরকারীকরণের অন্যতম একটি প্রক্রিয়া এসব কোচিং, প্রাইভেট ও নোট গাইড নির্ভরশীলতা। অর্থাৎ রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করার একটি প্রক্রিয়া গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। একটি মধ্যবর্তী পরিবারের আয়ের ৬০ শতাংশের বেশি ব্যয় একজন শিক্ষার্থীর মাথাপিছু করতে হয়। বাকি পারিবারিক ব্যয় যদি বাদ দেওয়া হয়, অন্তত ওই শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসেবা, সেটি কীভাবে সংগ্রহ করা হবে?

দেশের জাতীয় বাজেটেও শিক্ষায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকার কৃপণতা করেছে আবার যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটির সঙ্গে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত নয়- এমন প্রকল্প যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থা একটা দুর্বল পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেসরকারি কোম্পানিগুলো শিক্ষাকে ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করে নিচ্ছে। সুতরাং সরকারকে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষার আধুনিকায়ন, বিজ্ঞানভিত্তিক কাঠামো ও এক ধারার শিক্ষা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষাকে সম্পূর্ণ বাণিজ্যমুক্ত করে, শিক্ষাকে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করলেই দেশের শিক্ষা আলো দেখবে। পাশাপাশি শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব, অন্তত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সম্পূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব সরকারকে বহন করার উদ্যোগ নিতে হবে। নূ্যনতম মৌলিক অধিকার শিক্ষা। সেটি থেকে যদি দেশের নাগরিক বঞ্চিত হয়, নাগরিকদের যদি মৌলিক অধিকার কিনে মেটাতে হয়, নাগরিকদের এর চেয়ে উচ্চতর বেদনা কী হতে পারে?

জসীমউদ্দীন ইতি

ঢাকা

মা-বাবার স্থান হোক সন্তানের কোলে বৃদ্ধাশ্রমে নয়

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় যে, অনেকেই বৃদ্ধ মা-বাবাদের বোঝা মনে করে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাদের দ্বায়ভার নিতে চায় না, ফলে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। বৃদ্ধাশ্রমের উৎপত্তি হয়েছিল মূলত গরিব, সহায়-সম্বলহীন, সন্তানহারা বৃদ্ধদের শেষ জীবনে বিশেষ সেবা প্রদান করার জন্য। কিন্তু বতর্মান সময়ে বৃদ্ধাশ্রম বলতে বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য পরিবার ও স্বজনদের থেকে আলাদা আবাস বা আশ্রয়ের স্থান। মনে রাখতে হবে, আমাদের বড় হওয়ার পেছনে মা-বাবার অবদান অমূল্য এবং অসীম। তারা আমাদের বড় করতে নিজেদের আরাম হারাম করে তিলে তিলে সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন। এমনকি প্রশিক্ষণ, সার্বিক সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং উৎসাহ দিয়ে সর্বদা পাশে থেকেছেন। ভুলে গেলে চলবে না, আমরাও একসময় শিশু ছিলাম। আমরা তো কখনো তাদের কাছে বোঝা হয়েছিলাম না। বৃদ্ধ বয়সেও মা-বাবা শিশুদের মতো হয়ে যান। শিশুসুলভ আচরণ করেন। তাই আমাদের সবার উচিত, মা-বাবার অবদানের কথা মাথায় রেখে, তাদের পরিবারের সঙ্গে রেখে যথাযথ সেবা ও সম্মান প্রদান করা। ' মা-বাবার স্থান হোক সন্তানের কোলে, বৃদ্ধাশ্রমে নয়'-এটি একটি গভীর ও মূল্যবান সম্পর্কের প্রস্তাবনা, যা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের আন্তরিকতা সৃষ্টি করতে সাহায্য করতে পারে।

ফেরদৌস আহমেদ

শিক্ষার্থী

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে