বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশের স্বাস্থ্য খাত

সম্প্রতি 'কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি' শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজুলেশনটি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন স্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এই রেজুলেশনটি কো-স্পন্সর করে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী এই উদ্যোগকে ব্যাপক স্বীকৃতি দিয়ে 'দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ' হিসেবে আখ্যায়িত করে।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল
  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশের স্বাস্থ্য খাত

কমিউনিটি ক্লিনিক হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম- যা কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল পস্ন্যানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং দেশ-বিদেশে নন্দিত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। জনমুখী এ কার্যক্রম ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয়- যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ২৬ এপ্রিল, ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন।

স্বাধীনতাপরবর্তী যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশকে গড়তে এবং স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সরকার তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণের পদক্ষেপ হিসেবে থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত ১৯৭৮ সালের আলমা-আটা শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ ছিল। আলমা আটার ঘোষণা ছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার মাধ্যমে '২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য'। কিন্তু ১৯৯৬ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়ন চিন্তায় পরিবর্তন নিয়ে আসে। এ সময় গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে 'কমিউনিটি ক্লিনিক' স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মূলত জনগণের অংশগ্রহণে গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পৌঁছে দেওয়াই ছিল এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।

কমিউনিটি ক্লিনিক শুরু থেকেই স্বাস্থ্যসেবার মূলধারার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই ২০১১ হতে আরসিএইচসিআইবি প্রকল্পের পাশাপাশি এইচপিএনএসডিপির আওতায় কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল পস্ন্যানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আরসিএইচসিআইবি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে জুলাই ২০১৫ থেকে সিবিএইচসি অপারেশনাল পস্ন্যানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সব কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে- যা ডিসেম্বর ২০১৬তে সমাপ্ত হয়। পরবর্তী সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৪র্থ সেক্টর (৪র্থ এইচপিএনএসপি) কর্মসূচিতে সিবিএইচসি অপারশনাল পস্ন্যান জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়িত হয়। কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে গতিশীল ও টেকসই করার লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল পাস হয়। এরপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে ৮ অক্টোবর ২০১৮ আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় (২০১৮ সালের ৫২নং আইন)। এই আইনের ক্ষমতাবলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতাধীন কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারশনাল পস্ন্যানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ পরিচালিত হচ্ছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর একটি অনন্য উদাহরণ। সব কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে জনগণের দান করা জমিতে। সরকার ভবন নির্মাণ, সেবাদানকারী নিয়োগ, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সরবরাহ করছে। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করছে সরকার এবং জনগণ সম্মিলিতভাবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নিয়ে ১৩-১৭ সদস্যবিশিষ্ট (এর মধ্যে অন্ততপক্ষে ৪ জন মহিলা) একটি কমিউনিটি গ্রম্নপ (সিজি) আছে। এই পরিচালনা কমিটির (সিজি) সভাপতি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার। সিসি পরিচালনা ও জনগণকে সিসি থেকে সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে প্রতিটি কমিউনিটি গ্রম্নপকে সহযোগিতার জন্য ১৩-১৭ সদস্যবিশিষ্ট ৩টি সাপোর্ট গ্রম্নপ গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের সবগুলো সিসি'র প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সরকারি সেবাদানকারীরা এই কমিটিগুলোকে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও সেক্রেটারিয়েল সাপোর্ট প্রদান করে থাকে। সিবিএইচসি কার্যক্রমের আওতায় কমিউনিটি গ্রম্নপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রম্নপ সদস্যদের প্রশিক্ষণ/ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রদানকৃত উলেস্নখযোগ্য সেবাসমূহ: প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, গর্ভবতী ও প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, পুষ্টি সেবা, ইপিআই, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা সেবা, অসংক্রামক রোগ শনাক্তকরণ ও রেফারেল, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিত দম্পতিদের সেবা, কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকা প্রদানে সহযোগিতা প্রদান, স্তন ও জরায়ু মুখে ক্যানসার প্রতিরোধ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভায়া স্ক্রিনিং, রেজিস্ট্র্রেশন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে প্রেরণ, জন্ম ও মৃতু্য নিবন্ধীকরণ, জরুরি ও জটিল রোগীর রেফারেল সেবা, স্বাভাবিক প্রসব (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্ম এলাকার জনগণকে খানাভিত্তিক অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও হেলথ আইডি কার্ড প্রদানসহ অন্যান্য সেবা।

সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত সপ্তাহে ৬ দিন (শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার) সকাল ৯:০০টা থেকে বিকাল ৩:০০টা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) প্রতি কর্মদিবসে কমিউনিটি ক্লিনিকে উপস্থিত থেকে সেবাপ্রদান করেন এবং সিএইচসিপির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী প্রত্যেক সপ্তাহে নূ্যনতম ৩ দিন করে (পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে) কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করেন। কমিউনিটি গ্রম্নপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রম্নপের সদস্যরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা প্রদান ও মান উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করছেন। এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন- এমন গ্রাম্য চিকিৎসক, দাই এবং অন্যান্য সেবাদানকারী, মাদার সাপোর্ট গ্রম্নপ ও এনজিও কর্মীদের ইউএইচঅ্যান্ডএফপিও, ইউএফপিও এবং এমওএমসিএইচ কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাদের সেবা নিশ্চিত করে চলেছেন।

২০০৯ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১৪ কোটির অধিক ভিজিটের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবাগ্রহণ করেছেন। যাদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু। গড়ে প্রায় প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ৩৮ জন সেবাগ্রহীতা সেবা গ্রহণ করে থাকে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবাগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ১ কোটি জরুরি ও জটিল রোগীকে উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়েছে। ৪০০০-এর অধিক কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় ১ লাখ স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে।

উলেস্নখ্য যে, সব কমিউনিটি ক্লিনিক টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিগত ৪ বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবাগ্রহণকারী: বিগত ৪ বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে মোট ৩৫ কোটি ৬০ লাখের অধিক সেবাগ্রহীতা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে ৮ লাখ ৯০ হাজার জন গর্ভবতী মহিলা গর্ভকালীন সেবাগ্রহণ করেছেন। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে ৮০ হাজারের অধিক স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে। ৩০ লাখ ২৬ হাজারের অধিক ৫ বছরের কম বয়সি শিশুকে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিকে বর্তমানে ২৭ প্রকার ওষুধ এবং ২ প্রকার পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে বছরে ১.৫০ লাখ টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে অন-লাইন রিপোর্ট এবং তথ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণের নিমিত্তে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ইন্টারনেট সংযোগসহ ১টি করে ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমানে ৯৫.৪৭% কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে অন-লাইন রিপোর্টিং হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিভিন্ন প্রকার রেজিস্টার, ফরম, এএনসি কার্ড, জিএমপি কার্ড ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে। এসব রেজিস্টারে তথ্য সরক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের ৭টি বিশেষ বিষয়কে কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্রান্ডিং করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে 'শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ'- এ স্স্নেস্নাগানটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্রান্ডিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্রান্ডিংয়ের লক্ষ্যে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন : সব কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও বিভাগীয় কার্যালয়ে (স্বাস্থ্য) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এবং স্স্নেস্নাগানসংবলিত লোগোসহ সাইনবোর্ড ও স্টিকার স্থাপন, টিভি স্পট সম্প্রচার, দুর্গম এলাকাগুলোতে জনসংযোগ কার্যক্রম ইত্যাদি।

গ্রামাঞ্চলে আগে হাসপাতাল-ক্লিনিক তো দূরের কথা ভালো ওষুধের দোকানও পাওয়া যেত না। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের সুবাদে এখন মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, পরামর্শ ও ওষুধ পাচ্ছে ঘরের কাছেই। দিন দিন এর সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও বাড়ছে। সরকারের পৃথক দু'টি জরিপেও এসব ক্লিনিক নিয়ে ৮০ থেকে ৯৮ শতাংশ মানুষ তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (নিপোর্ট) এক জরিপে দেখা গেছে, বাড়ির পাশের ক্লিনিক থেকে ওষুধ আর পরামর্শ পেয়ে ৮০ শতাংশ মানুষই সন্তুষ্ট। জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর জরিপে দেখা যায়, সেবা নিয়ে ৯৮ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। প্রান্তিক মানুষ এখন স্বাস্থ্যসেবার আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে। স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা এমডিজি পুরস্কার, সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও গ্যাভি পুরস্কার এবং ভ্যাক্সিন হিরো পুরস্কারের মতো অনেক সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান বাংলাদেশ সফরের সময় গ্রামে গিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখেছিলেন এবং এই উদ্যোগকে 'স্বাস্থ্য খাতে' বিপস্নব হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। এ কথা সর্বাংশে সত্য যে, এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল, যা আজ বিশ্বনন্দিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই অভিনব ধারণা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে আজ প্রমাণিত। এর ফলে, দেশের তৃণমূল ও সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন উন্নতি সূচকে ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ আরও অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে। এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আগামীর 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণসহ সত্যিকারভাবেই একটি স্বাস্থ্যকর জাতি গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সম্প্রতি 'কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি' শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজুলেশনটি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন স্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এই রেজুলেশনটি কো-স্পন্সর করে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী এই উদ্যোগকে ব্যাপক স্বীকৃতি দিয়ে 'দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ' হিসেবে আখ্যায়িত করে।

\হবিশেষজ্ঞদের মতে, রেজুলেশনটির সফল বাস্তবায়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল : চিকিৎসক, কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে