রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তিনশ’ কোটি চেয়ে ৮-১০ কোটি পেয়েছি: চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  ২৪ মে ২০২৫, ২১:৫৪
তিনশ’ কোটি চেয়ে ৮-১০ কোটি পেয়েছি: চসিক মেয়র
ছবি: সংগৃহীত

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অনুমোদন ও বরাদ্দ না পাওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলছেন, সিটি করপোরেশনের ১৫-২০ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৩০০ কোটি টাকা চাওয়া হলেও নালা, কালভার্ট পরিষ্কার করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮-১০ কোটি টাকা।

1

আজ শনিবার (২৪ মে) দুপুরে নগরীর টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে কথা বলছিলেন মেয়র।

তিনি বলেন, “২০২২ সালে একটা প্রকল্প জমা দেওয়া হয় ৩৯৮ কোটি টাকার। সেটা যেভাবে আছে, ওভাবে ওখানে পড়ে আছে। আমি বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে যাবার পর একটা জায়গায় এসেছে। ফাইনালি সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা কাটিয়ে ২৯৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। সেটা এখন যে পর্যায়ে আছে, ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি। উনাকে বলেছি জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে হলে এই প্রকল্পটি দিতে হবে। আমার যন্ত্রপাতি দরকার। যে যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো ১৫-২০ বছরের পুরনো। এ মেশিনগুলো নিয়ে যখনই কাজ করতে যাই ফেল করছে সেখানে। সেটা উনি বলেছেন, ‘দেখছেন’ ‘

মেয়র বলেন, ‘দ্বিতীয়ত বলেছি, ময়লাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। মানে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট। ইউকের একটা প্রজেক্ট উনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) সাবমিট করেছি। বলেছি এটা এলজিআরডিকে দিবেন।’

তিনি বলেন, ‘এলজিআরডি দিলে তিন-চার মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব। কিন্তু অদ্যাবধি সেটা আর হয়নি। এগুলো আপনাদের (সাংবাদিক) জানা উচিত আমরা কী উদ্যোগ নিয়েছি আর কী হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উনাকে দিয়ে এসেছি। আর কোথায় যাব?’

২৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পের বিষয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এটা আসলে দুর্ভাগ্যজনক আমাদের জন্য। একটা স্টেজে যিনি দায়িত্বে আছেন, উনাকে শেষ যখন জিজ্ঞেস করেছি, উনি আমাকে যে জবাবটি দিয়েছেন আমি সেটা বলতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি বললেন, ‘জলাবদ্ধতা কতটুকু কমে সামনের বর্ষায় দেখি তারপর বরাদ্দ দেব’। সো ফানি। আমার জলাবদ্ধতায় বাজেট কী দিয়েছে? ৫ কোটি টাকা নালা পরিষ্কার করার জন্য। আড়াই কোটি টাকা একটা বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের জন্য। দ্যাটস অল। ৮/১০ কোটি টাকায় সংস্কার করার জন্য দিয়েছে। আমরা এগুলো চাইনি। আমরা চেয়েছি মেশিনারিজ কেনার জন্য ৩০০ কোটি টাকা দেন। অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছি ‘

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা লিখেন যে জিনিসগুলো দরকার। গত ১৫-১৬ বছরে সিটি করপোরেশন একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। যে যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে আমরা আস্তে আস্তে ঠিক করছি।

তিনি আরও কলেন, ‘২০২২ সালে প্রকল্পটি দেওয়া হয়েছে। আজকে হল ২০২৫ সাল। জলাবদ্ধতার জন্য এই অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি। খাল-নালা পরিষ্কারের মেশিনারিজ যদি না থাকে কীভাবে জলাবদ্ধতার এত বড় বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন? পুরনো মেশিন দিয়ে নিতে গিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। ১৫-১৬ লাখ টাকায় একেকটা মেশিন আমরা ভাড়া করছি।’

চট্টগ্রাম সিটির জন্য সরকারি বাজেট বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র শাহাদাত বলেন, “ঢাকা শহরে যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, চট্টগ্রাম শহরে ৭০ লক্ষ মানুষের জন্য সে বাজেট দেয়া হয় কি? ৭০-৮০ লাখ মানুষের বাজেট কি এটাই?’

চসিক মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশন একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বছরে শিক্ষা খাতে ৮০ কোটি টাকা আমাকে ভর্তৃকি দিতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা খাত আছে। দেশের আর কোনো সিটি করপোরেশনে এগুলো নেই। জনগণ থেকে কর নিয়ে নিয়ে কি আমি মানুষকে সেবা দিব? তাহলে কি মানুষকে করের বোঝা চাপাব? আপনাকে তো বাজেট দিতে হবে। সে বাজেট আপনি ঢাকাতে দেন, চট্টগ্রাম শহরে দিতে চান না কেন?’

তিনি বলেন, ‘বরাদ্দ হচ্ছে মাত্র ৫ কোটি। কিন্তু তাতে প্রকল্প ১৪৮টা। মানুষ তো ভাববে যেন ৫ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এতই হাস্যকর যে, সেটাও আমাদের নয়, জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। বলার পর আমাদের ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে খালগুলো পরিষ্কার করার জন্য।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ভুঁইয়া নজরুল। স্থপতি জেরিনা হোসাইন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক নসরুল কাদির, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার পাশা, সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতেখার উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে