শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ম্যালেরিয়া রোগের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে

মো. আল-আমিন, ঢাকা কলেজ
  ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
ম্যালেরিয়া রোগের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে

ম্যালেরিয়া শব্দটি আমাদের জনজীবনে একটি আতঙ্কের নাম। আতঙ্ক না হয়ে তো কোনো উপায় নেই। আতঙ্ক হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এ নিষ্ঠুর ম্যালেরিয়া কেড়ে নেয় মানুষের জীবন। প্রতিবছর কম-বেশি মানুষই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যবরণ করেন। হাসপাতালগুলোয় গেলে দেখা মেলে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। তবে একটি ভালোর দিক হলো-২০০৮ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ম্যালেরিয়াজনিত অসুস্থতা শতকরা ৯৪ ভাগ এবং মৃতু্য শতকরা ৯৩ ভাগ কমেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট ম্যালেরিয়া রোগী ছিল ৭ হাজার ২৯৪ জন ও মৃতু্যবরণ করেছে ৯। উচ্চ ম্যালেরিয়া প্রবণ তিন পার্বত্য জেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৪ ভাগ পাওয়া গেছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের আওতাধীন ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের ৮টি জেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ জন। এখন স্বাভাবিকভাবেই মণিকোঠায় প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ম্যালেরিয়া আসলে কী? ম্যালেরিয়া কোথা থেকে আসে এবং কোন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করে। ম্যালেরিয়া হলো একটি মশাবাহিত রোগ। অর্থাৎ ম্যালেরিয়া রোগটি মশার কামড় থেকে সৃষ্টি হয়? যে কোনো মৌসুমেই ম্যালেরিয়া রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষত, বর্ষাকালে এর প্রকোপটা বেশি বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথম পালন করা হয় আফ্রিকায়। ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৬০তম অধিবেশনে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের প্রস্তাবনা করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ম্যালেরিয়া রোগটিকে জয় করতে হলে প্রধানত এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে এবং ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলোকে প্রতিহত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকার অভাবে প্রতি বছর বিশ্বে ২০ কোটির মতো মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ কোটির মতো। এর মধ্যে পার্বত্য জেলাগুলোয় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে ঢাকা বা অন্যান্য জেলাও ঝুঁকির বাইরে নয়। প্রতি বছর বিশ্বে ছয় লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে মৃতু্যবরণ করেন। দেশের মধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃতু্যহার সবচেয়ে বেশি রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ম্যালেরিয়াজনিত অসুস্থতা শতকরা ৭৯ ভাগ এবং মৃতু্য শতকরা ৯১ ভাগ কমেছে। ২০২২ সালে দেশে মোট ম্যালেরিয়া রোগী ছিল ১৮ হাজার ১৯৫ ও এ রোগে মারা গেছে ১৪ জন। উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৫ শতাংশ পাওয়া গেছে। ২০২২ সালে ম্যালেরিয়া নির্মূলের আওতাধীন ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের ৮টি জেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ জন। সর্বোপরি আমাদের ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচতে হলে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলোকে প্রতিহত করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। ম্যালেরিয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। তন্মধ্যে প্রধান লক্ষণ হলো- নির্দিষ্ট একটা সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা? এ সময় জ্বর ১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠানামা করে। নির্দিষ্ট বিরতিতেও জ্বর আসা যাওয়া করে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি লক্ষণ হলো -মাথাব্যথা, গায়ে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া, খিঁচুনি, নিয়মিত ঘুম না হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি, ম্যালেরিয়া কতটা ভয়ংকর হতে পারে। এজন্য এ লক্ষণগুলো দেখা দিলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। আসুন এ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসে আতঙ্ক না হয়ে সচেতন হই এবং মশারি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সতর্ক হই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে