সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ডলারের দাম বৃদ্ধি

মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা
  ১০ মে ২০২৪, ০০:০০
ডলারের দাম বৃদ্ধি

দীর্ঘদিন ১১০ টাকায় থাকা ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম একদিনে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তথ্য মতে, বুধবার ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- যেখানে বলা হয়েছে যে, মার্কিন ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে 'ক্রলিং পেগ' নামে নতুন পদ্ধতিতে ডলার কেনাবেচা হবে। এ পদ্ধতিতে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ক্রলিং পেগ মিড রেট (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। অর্থাৎ ডলারের মধ্যবর্তী রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। ফলে, তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে এবং আন্তঃব্যাংক লেনদেন করতে পারবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার আবারও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকে এখন বাড়তি সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বলা দরকার, বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আইএমএফের চাওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক যেন বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পথে এগোয়। এক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ব্যাংকভিত্তিক দুটো সংগঠন ডলারের দাম ঠিক করে আসছিল। সর্বশেষ তারা ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকায় নির্ধারণ করেছিল।

আমরা মনে করি, যেহেতু এখন থেকে 'ক্রলিং পেগ' নামে নতুন পদ্ধতিতে ডলার কেনাবেচা হবে, ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করা। এটাও লক্ষণীয়, ডলারের দাম একবারে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর অংশ হিসেবে। এর আগে দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদু্যৎ ও জ্বালানির দামের ওপর- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আর চাপ তৈরির কারণ হিসেবে এটাও জানা যাচ্ছে যে, ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনলেও বিদু্যৎ ও জ্বালানির মতো পণ্য আমদানিতে এত দিন ১১০ টাকা দামে ডলার দিত বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া এবং জনজীবনে আরও চাপ বাড়বে এমন আশঙ্কাও সামনে এসেছে, যা আমলে নেওয়া জরুরি।

আইএমএফের শর্ত মেনে অনেকটা তড়িঘড়ি করে বুধবার আর্থিক খাতের এসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এমনটিও খবরের মাধ্যমে জানা যায়। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিন ধরে সংকোচনমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে অর্থনীতিবিদরা আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ডেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তাদের বলা হয়েছে, সুদহার বাজারভিত্তিক করা হলেও তা বর্তমানের চেয়ে ১ শতাংশের বেশি যেন না বাড়ে। আর ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকার আশপাশে রাখতে বলা হলেও তা যেন ১১৮ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়। অন্যদিকে, এটাও আমলে নেওয়া দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপের প্রভাব সম্পর্কে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন ডলার এখন ১১৭-১১৮ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। সুদহার ইতোমধ্যে বেশ বেড়ে গেছে। সর্বোচ্চ সুদ সাড়ে ১৩ শতাংশ হলেও আমরা ১১-১২ শতাংশের মধ্যে ঋণ দিচ্ছি। ফলে খুব বেশি প্রভাব বাজারের ওপর পড়বে না। তবে জ্বালানি ও সার আমদানির জন্য কম দামে ডলার বিক্রি করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাবে বলেও তিনি জানান।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদু্যৎ ও জ্বালানির দামের ওপর, এটিও বিবেচনায় নিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে