শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গরমে খাদ্যাভাস ও জীবনযাপন

গরমে যেসব খাবার খাওয়া যাবে, এমন খাবার সম্বন্ধেও আমাদের জেনে রাখা ভালো। আর সে মতো যদি আমরা চলতে পারি তাহলে আমাদেরই উপকার হবে।
আলকামা সিকদার
  ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
গরমে খাদ্যাভাস ও জীবনযাপন

বাংলাদেশের বুক চিরে চলছে তীব্র তাপ প্রবাহ। অসহ্য এই গরমে জনজীবনসহ প্রাণিকুলও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই এ সময়ে আমাদের মানবদেহে ঘাটতি ঘটে নানা রকম উপাদানের। এসব উপদানের ঘাটতি পূরণ করার জন্য খানাখাদ্যের জন্য আমরা হন্যে হয়ে পড়ি চেনাঅচেনা নানা প্রকার মুখোরোচক খাবারে। কিন্তু গরমের এই তীব্রতার মধ্যে যা ইচ্ছা তাই খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার দাবারে আনতে হয় নানা পরিবর্তন। তাই এই গরমের মধ্যে খেতে হয় সচেতনভাবে খাবার। যদিও সব খাবারই শরীরের জন্য কিছু না কিছু উপকারি। কিন্তু আবার কিছু আছে ক্ষতিকরও। তাই খানাখাদ্যে যাতে আমরা এই দেহকে ক্ষতির মধ্যে না ফেলি তার দিকেও নজর রাখতে হবে।

খাবারে অসচেতনতার কারণে মানুষ যে ক্ষতির মধ্যে পড়ছে তা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন-ই খবর আসছে যে, দেশজুড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। তবে বছরের এ সময়ে ডায়রিয়া আসলে কেন হয়? ডায়রিয়ার মূল কারণ কিন্তু খাবারে গন্ডগোল থেকে। এ পরিস্থিতিতে ডায়রিয়ার মতো অসুখ এড়াতে এবং নিজেদের সুস্থ রাখতে খাবার-দাবারে সতর্কতা অবলম্বন করা অতিব জরুরি। কেননা, অসতর্কতার কারণে ঘটতে পারে মৃতু্য পর্যন্ত। তাই এই গরমে অহেতুক যে কোনো খাবারই আমরা খাব না। কোনো খাদ্য গ্রহণের পূর্বে অন্তত একশতবার ভেবে দেখব এটা এ সময়ের জন্য উপযোগী কিনা?

1

চিকিৎসকরা মনে করেন, প্রচন্ড গরমের কারণে শরীর থেকে রিতিমত যে ঘাম বের হয় তার কারণে শরীরের পানি কমে যাওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে। বিশেষ করে পানিশূন্যতা, এছাড়াও গরমের কারণে পেটে সমস্যা, হঠাৎ সর্দি লেগে যাওয়ার মতো সমস্যা, ত্বকের সমস্যায় দেখা যায়। হাত, পা বা পায়ের গোড়ালি বা ঠোঁট ফেটে যায়। শরীরের চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়, তাই এ সময় শরীরের ভেতর এবং বাইরে থেকে নিতে হবে যত্ন। এ সময় নিজেকে কিছু অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আনতে হবে।

যেমন এই গরমে ঠান্ডা লাগার কারণে যারা কুসুম গরম পানি পান করেন তাদের এই অভ্যাস পরিহার করতে হবে। কেননা, এমনিতেই শরীর যে পরিমাণ গরম হচ্ছে তাতে করে গরম পানি পান করলে শরীরের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। প্রয়োজন হলে মৌরি ও মেথি ফুটিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে পান করুন। ফলে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। এ ছাড়াও বিশেষ নজর রাখতে হবে যেন সে পানি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ হয়।

বিশেষ করে এ মৌসুমে ঠান্ডা জাতীয় খাবার বেশি বেশি খান। পান করুন ডাবের পানি, আখের রসসহ এ জাতীয় পানীয়। শুকনা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে যদি শুকনা খাবার খেতেই হয় তাহলে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি পান করুন। যাতে কোনো অবস্থাতেই শরীর শুষ্ক না হয়। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ বেশি বেশি ঠান্ডা ও বিশুদ্ধ পানি পান করুন। কেননা, শ্রমজীবীদের কাজ করতে যেয়ে প্রচুর পরিমাণে শরীর থেকে ঘাম ঝরে গিয়ে পানির পরিমাণ কমে যায়। এটা পূরণ করতে না পারলে ধীরে ধীরে পানি শূন্য হয়ে শরীর দুর্বল হয়ে কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। তাই কাজে কর্মের সময় সচেতন থাকতে হবে বিশেষ ভাবে।

রান্না বান্নায় মুখোরোচক তরকারি খাবারে মসলার ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে দিন। অতিরিক্ত তেল, টক, কিংবা এসিড জাতীয় খাবার খাবেন না। মরিচ, আদা, রসুনের পরিমাণ কমিয়ে রান্না করুন। গরমের সময়ে অল্প মসলায় রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। কেননা, মসলা, তেল জাতীয় খাবার এমনিতেই গরম জাতীয়। এ ছাড়াও ডিম জাতীয় খাবার ও ভাজা পোড়া খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠান্ডা মনে করে আইসক্রিম ও বরফ জাতীয় কোমল পানীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, এই কোমল পানীয় শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে শরীরের শুষ্কতা তৈরি করে। ফলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে শূন্যতা তৈরি হতে পারে। বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন, পিৎজা ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত নয়। কারণ এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ শর্করা ও চর্বি থাকায় হজম করতে সময় লাগে। ফলে, এগুলো রক্তচাপকে প্রভাবিত করে, প্রদাহ বাড়ায়। এই গরমে উচ্চ রক্তচাপ হলে মৃতু্যর আশঙ্কাই বেশি থাকে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে এসব খাবারে তারা আরও বেশি মনোযোগী হোন এবং সতর্কতা অবলম্বন করুন।

শীতকালে যে চা-কফি আমরা শরীর গরম করার জন্য পান করি তাহলে এই গরমে আমরা সেই পানীয় কেন পান করে নিজের দেহের ক্ষতি করি? তাই যথা সম্ভব, গরম জাতীয় পানীয় যতপারি পরিমাণে কম পান করব। দুগ্ধজাতীয় খাবার, স্টেক, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকব। চিনি ও লবণ এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই যত পারি এসব খাবার পরিহার করে চলব।

গরমে যেসব খাবার খাওয়া যাবে, এমন খাবার সম্বন্ধেও আমাদের জেনে রাখা ভালো। আর সে মতো যদি আমরা চলতে পারি তাহলে আমাদেরই উপকার হবে।

যেমন কম মশলা জাতীয় খাবার, কারণ এগুলো সহজে হজমযোগ্য। শাকসবজি ঝিঙে, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা, শাকের ডাঁটা ইত্যাদি পাতলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে এগুলো একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা জোগাবে, অপরদিকে শরীরের গরম অনুভব থেকে নিজেকে রক্ষা করা হবে। এ ছাড়া সবুজ জাতীয় সবজি ও প্রচুর গরম সহনীয় ফল যা শরীরের জন্য শীতল এগুলো খাওয়া এবং পাতলা সু্যপ, নিরাপদ পানি, ডাবের পানি, লেবু পানি, ফলমূল, কাঁচা আমের শরবত, টকদই, ডিটক্স খাবার খাওয়া যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার হলো- পানি, লেবুর রস, শশা, গাজর, পুদিনা ইত্যাদির রসের সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের পানীয়। এ জাতীয় খাবার শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমন নিরাপদও। আর আমরা যে খাবার খাব তার জন্য পাত্রও থাকতে হবে নিরাপদ। বিশেষ করে এই গরমের সময়ে আমরা পস্নাস্টিক বা স্টিলের পাত্রের বদলে মাটির পাত্রে খাবার ও পানি খাওয়ার অভ্যাস করব। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে। মাটির কলসিতে পানি রাখলে তা ফ্রিজ ছাড়াই আপনাকে ঠান্ডা পানি দেবে। শরীর রোগবালাই মুক্ত ও নিরাপদ থাকবে।

তাই আমরা এই গরমে যেমন নিয়ম মেনে চলব। খাবার গ্রহণেও তেমন সতর্কতা অবলম্বন করব। যেখানে সেখানে খাবার খাবনা। বিশেষ করে ফুটপাতের জার্মফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকব। পানি পানেও সতর্ক থাকব। যদি পারি ফুটানো পানি পান করব। আর সামর্থ থাকলে মিনারেল ওয়াটার কিনে পান করব। সর্বশেষ কথা হচ্ছে আমাদের এই মৌসুমে সব কাজকর্মেই সতর্ক থেকে চলা ফেরা করতে হবে। না হলে অল্প সময়েই ঘটে যেতে পারে যে কোনো দুর্ঘটনা। আর নিশ্চই আমরা চাই না অসতর্কতার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাক।

আলকামা সিকদার : গণমাধ্যমকর্মী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে