বাংলাদেশের সমাজে পুলিশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা জনগণের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সক্রিয়। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশের কার্যক্রম ও জনমতের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য পুলিশের যে পরিবর্তন ও উন্নতি দরকার। বাংলাদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ মাঝে মাঝেই উঠে আসে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরির প্রধান কারণ হলো- অনৈতিক কার্যকলাপ। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সততা ও ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করার জন্য দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা এবং জনসাধারণের কাছে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে রিপোর্ট প্রদান করা জরুরি। অভিযোগ প্রক্রিয়াকে সহজ করা এবং জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য একটি সিস্টেম তৈরি বানাতে হবে। দক্ষতাই যেকোনো কাজের মূল ভিত্তি। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিভিন্ন দক্ষতা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, যেমন- মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশলগত প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, চাপ ব্যবস্থাপনা ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি, তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধিই বাংলাদেশ পুলিশকে সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারে। আরেকটি দিক হলো- জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক। জনগণের সঙ্গে পুলিশের ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি অবশ্যই নতুন বাংলাদেশের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জুলাই-আগস্ট বিপস্নবের পর পুলিশের প্রতি জমা ক্ষোভ ও ঘৃণা তা মুছে ফেলতে হলে অবশ্যই পুলিশ নিয়ন্ত্রকদের কাজ করতে হবে। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সংলাপ বাড়ানোর জন্য নিয়মিত সভা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। জনগণের সমস্যা সমাধানে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনগুলোতে সেবাকেন্দ্র গঠন করে জনগণকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া যায়। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের সব দেশেই পুলিশিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে সেবার মান বৃদ্ধি ও দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে সেবা প্রদান করছে পুলিশ। সুতরাং, প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও দ্রম্নততর করতে পারে। এই উদ্দেশে প্রয়োজন সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করা, অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে অপরাধ প্রবণতার পূর্বাভাস পাওয়া এবং সাইবার অপরাধ রোধে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার। বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য একটি গম্ভীর বিষয়। বিশাল জনসংখ্যা ও অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক পুলিশিংয়ের কাজকে ব্যাহত করে। এ ছাড়াও যথেষ্ট পুলিশ সদস্য না থাকা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, সুযোগ-সুবিধা না থাকা তাদের মানসিক চাপের বড় কারণ। মানসিক চাপ না কমাতে পারলে পুলিশ বাহিনী থেকে যথাযথ সেবা পাওয়া সম্ভব নয় ফলে ঊর্ধ্বতনের অবশ্যই এ বিষয়ে ভাবতে হবে। যেমন- পুলিশ সদস্যদের জন্য নিয়মিত কাউন্সিলিং সেবা প্রদান, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, মানসিক চাপ কমাতে সহকর্মীদের মধ্যে সমর্থনমূলক পরিবেশ তৈরি করা, প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদানসহ বেতন ও বোনাসের সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুলিশের মানসিক চাপ কমানো সম্ভব। অপরদিকে, পুলিশিং কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন। এর জন্য পুলিশের কার্যক্রমে জনগণের মতামত ও উদ্বেগ শোনার জন্য কার্যকর পস্ন্যাটফর্ম তৈরি করাতে হবে। সমাজের বিভিন্ন কার্যক্রমে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও জনগণকে পুলিশিং সম্পর্কে সচেতন করতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে, যাতে পুলিশ জনগণের কাছাকাছি থাকতে পারে। বাংলাদেশের পুলিশের আধুনিকীকরণের জন্য এসব বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৎ, দক্ষ এবং জনবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে পুলিশ জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশে পরিবেশ ও আর্থসামাজিক দুরবস্থা পুলিশিংয়ের কাজকে কঠিন করে ফেলে, তবে একটি শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাই পুলিশ বাহিনীর সমস্যা নিরসনে সরকারকে কাজ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম ও জনমত বৃদ্ধি পেলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেলে, সমাজে অপরাধ কমানো সম্ভব হবে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধ করা যাবে। পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
রাকিব হাসান
ঢাকা কলেজ