যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের কারণে যেমন যোগাযোগ বেড়েছে, তেমনি নানা ধরনের সুবিধা পাচ্ছে মানুষ। কিন্তু একইসঙ্গে এমন বিষয় যখন সামনে আসছে যে, ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সাইবারকেন্দ্রিক অপরাধ। তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, শুধু দেশে নয়, বিদেশেও একই অবস্থা। পুরো বিশ্ব এখন সাইবার অপরাধীদের দমন করতে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার না করেও সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। যদিও অধিকাংশ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, সাইবার হামলাসহ এ সংক্রান্ত নানা ইসু্যতে বছরে ক্ষতি হয় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই।
আমরা মনে করি, সাইবার অপরাধের বিষয়টি যেমন সহজ করে দেখার সুযোগ নেই, তেমনিভাবে ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখাও জরুরি। উলেস্নখ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রযুক্তি এমন একটি মাধ্যম, যেটি ব্যবহার না করার কোনো সুযোগ নেই। একজন মানুষ নূ্যনতম একটি মোবাইল ফোন হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। উদ্বেগের বিষয় হলে, মোবাইল যদি স্মার্ট ফোন না হয়ে বাটন ফোন হয়, তাহলেও তিনি সাইবার ঝুঁকি মুক্ত নন। কারণ তার মোবাইলে ব্যবহৃত সিমকার্ডটি ক্লোন হতে পারে। ক্লোন করা মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে অনায়াসে অপরাধ করা সম্ভব সাইবার অপরাধীদের পক্ষে। জানা যাচ্ছে, বিষয়টি তখনই নজরে আসছে, যখন ওই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আর সেই অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও একমাত্র বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে। ভয়াবহ ব্যাপার হলো- আসল মোবাইল নম্বরের মালিক জানেন, তিনি কোনো অপরাধী নন। তাই তিনি স্বাভাবিক কারণেই তার মোবাইল বন্ধ করবেন না। অথচ সাইবার অপরাধের মামলায় তার মোবাইল নম্বরটি দিয়ে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার তথ্য প্রমাণাদি থাকছে।
আমলে নেওয়া দরকার, এই বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে যে, প্রযুক্তি যত আধুনিক হচ্ছে, ঝুঁকিও ততটাই বাড়ছে। বিশেষ করে যারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপ, ইমু, ম্যাজেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ নানা অ্যাপস ব্যবহার করছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক অনেক বেশি। এছাড়া, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক আকর্ষণীয় ও চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে। ঘরে বসেই আয় করুন লাখ লাখ টাকা। ঘরে বসেই বিদেশে বাড়ি, গাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনুন। বিনিয়োগ করে আয় করুন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া বিদেশে আকর্ষণীয় বেতনে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন। বিভিন্ন পাবলিক ও চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপসে। এটাও জানা যায় চলতি বছর আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচার ও কর্মকান্ড প্রচারণার দায়ে দুই শতাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে। তারপরও সাইবার অপরাধীদের দমন করা যাচ্ছে না। রীতিমতো দিনকে দিন ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সাইবার অপরাধ। এছাড়া, এর আগে আলোচনায় এসেছে যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়বে, অপরাধের সংখ্যাও তত বাড়বে ফলে সাইবার ক্রিমিনালদের ব্যাপারে সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। সাইবার অপরাধকেন্দ্রিক যে তথ্য উঠে আসছে তা সন্দেহাতীতভাবেই ভয়ানক। এ ক্ষেত্রে সৃষ্ট পরিস্থিতি রোধে যেমন সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তেমনিভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। এছাড়া, মনে রাখা দরকার, সাইবার সূত্র বলছে, সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি- ফলে তরুণরা বিপথগামী হলে তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সাইবার অপরাধ রোধ হোক এমনটি কাম্য।