শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

অপরাধের জঘন্যতম রূপ শিশুহত্যা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্তমানে শিশু নির্যাতন, অপহরণ বা হত্যার ঘটনাগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আসিফ আল মাহমুদ
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অপরাধের জঘন্যতম রূপ শিশুহত্যা

দেশ জুড়ে একের পর এক ঘটে চলেছে ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুদের নির্যাতন, অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আর হত্যার ন্যায় ন্যক্কারজনক সব ঘটনা! ক্রমবর্ধমান এসব ঘটনায় অপরাধজগতে যুক্ত হয়েছে নতুন এক মাত্রা! পূর্বশত্রম্নতার জের ধরেই হোক অথবা অন্য যে কোনো উদ্দেশ্যেই হোক, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘৃণ্য ঘটনায় কোমলমতি, অসহায় আর অবুঝ শিশুদেরই টার্গেটে পরিণত করে থাকে অপরাধীচক্র! খুব সহজেই শিশুরা দুর্বৃত্তদের নিশানায় পরিণত হচ্ছে। সন্ত্রাসী, অপরাধী এমনকি খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাত থেকেও রেহাই পাচ্ছে না নিরীহ শিশুরা! কারণ শিশুদের টার্গেট করায় ঝুঁকি কম থাকে এবং তারা প্রতিবাদ করতে পারে না। বস্তুত প্রতিরোধ করার মতো তেমন কোনো ক্ষমতাও নেই তাদের। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখন দুর্বৃত্তরা টার্গেট করছে কোমলপ্রাণ, অবুঝ, অসহায় শিশুদেরই।

সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলা এসব মর্মভেদী শিশু নিপীড়নের ঘটনায় সন্তানকে ঘিরে বাবা-মা'রা যেই রঙিন স্বপ্ন দেখেন তা আজ মলিন হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই সাজানো সংসারে নেমে আসছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার! বেশিরভাগ শিশুকেই পারিবারিক কলহ, প্রতিহিংসা আর লালসার জেরে অপহরণের পর নৃশংসভাবে খুন করছে দুর্বৃত্তরা! আজকাল বেদম প্রহারের কারণেও শিশুমৃতু্যর ন্যায় ঘৃণ্যতম অপরাধের খবর হরহামেশাই পাওয়া যায়।

মানবিক বোধসম্পন্ন সব মানুষ আজ একাট্টা হয়ে শিশু হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। অধিকন্তু এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সবার একটাই চাওয়া, যেন এভাবে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। অচিরেই বন্ধ করতে হবে শিশু নির্যাতন, অপহরণ কিংবা হত্যার মতো জঘন্য এসব বর্বরোচিত নৃশংসতা। অনেক ক্ষেত্রে আবার শিশুকে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো নিচ ঘটনাও ঘটছে- যা নিয়ে পরবর্তী সময়ে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয় ও মুহূর্তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে!

শিশু এবং সামাজিক অপরাধ বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন যে, শিশুদের ওপর যখন নির্যাতন করা হয় তখন তারা প্রতিবাদ করতে পারে না এমনকি ভয়ে কাউকে বলতেও পারে না। মূলত এ কারণেই প্রতিনিয়ত শিশু নির্যাতনের ঘটনা লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। শিশুদের সহজে অপহরণ করা যায়, গুম করা যায় এমনকি প্রাণে মেরে ফেলাও যায় বলেই তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রাও বেশি হয়। নিঃসন্দেহে সামাজিক অস্থিরতা আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি এর পেছনে অনেকাংশেই দায়ী। শিশুদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শিশু সনদের আদলে ২০১৩ সালে যে আইনটি করা হয়েছিল, তা মূলত শিশুদের রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটি হচ্ছে না। অসহিষ্ণু সমাজে শিশুরা ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে! শিশুদের ওপর নির্যাতন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পরিবারবর্গ কিংবা পরিচিতরাই করে থাকে। টাকার জন্য অথবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যদি কাউকে অপহরণ করার কথা চিন্তা করা হয় তাহলে সাধারণত শিশুদেরই টার্গেট করা হয়। চেনা মানুষ কিংবা আপনজন যখন কোনো শিশুকে কাছে যেতে ইশারা করে তখন শিশুটি তার সঙ্গে চলে যায়। শিশুরা বোঝে না কোথায় তার বিপদ হতে পারে। এমনও দেখা যায়, পরিচিত লোকেরা যখন অপহরণ করে তখন চিনে ফেলার কারণে শিশুটিকে শেষপর্যন্ত মেরে ফেলার ঘটনাও আছে।

তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। যারা শিশুদের টার্গেট করে অপরাধ করছে, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্তমানে শিশু নির্যাতন, অপহরণ বা হত্যার ঘটনাগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আসিফ আল মাহমুদ : নবীন লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে