মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হলেও সুফল মিলছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। এবার লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হলো সয়াবিন তেলের দাম। দাম বাড়িয়ে বাজারে ফিরলো লুকানো সয়াবিন তেল। গত সোমবার দাম বাড়ানোর এক ঘোষণায় আচমকা বাজার থেকে হারিয়ে যাওয়া লুকানো তেলের বোতল ফিরেছে দোকানে দোকানে, সেজেছে থরে থরে। বাজারে এখন বোতলজাত সয়াবিনের অভাব নেই। দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিন কান্ড ঘটিয়ে নিজেরাই প্রমাণ করে দিলেন এই কারসাজিতে তারাই ছিলেন। সংকট দেখিয়ে তারা সরকারকে চাপে ফেলে একদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন, অন্যদিকে, এই ক'দিন নানা অপকৌশলে ক্রেতাদের থেকে বেশি মূল্য নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা রীতিমতো দিনদুপুরে ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে তেলের কোনো সংকটই ছিল না। ফন্দি এঁটে কয়েকদিন ক্রেতার নাভিশ্বাস তুলে সরকারকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। এ দেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, অতীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা। ভোক্তাদের দাবি, আজ তেল, কাল চিনি, পরশু হয়তো অন্য কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুবিধা নেয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তাতে একদিকে ভোক্তার খরচ বাড়বে; অন্যদিকে, সরকারও পড়বে চাপে। তাই এখন যেসব তেলের বোতল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলো কখন আমদানি করা হয়েছে, আমদানি দর কত ছিল, কবে নাগাদ বাজারজাত করা হয়েছে এসব তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে ছোট ব্যবসায়ীর জন্য সৃষ্টি করতে হবে আমদানির সুযোগ।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সম্প্রতি খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৩.৮০ শতাংশ। চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এছাড়া, নভেম্বর মাসে বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসা সেবা, পরিবহণ ও শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে। দেশে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের কাছাকাছি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গড় চলন্ত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। সারাদেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাটবাজার থেকে নির্ধারিত সময়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই ভোক্তা মূল্যসূচক প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে জুলাই মাসে দেশে এক ধরনের অচল অবস্থা দেখা যায়। ঢাকায় পণ্যের সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছিল। অর্থনীতিবিদের মতে, মূল্যস্ফীতি সব পর্যায়ের ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ায়। বিশেষ করে দেশের নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
এটা সত্য, নিত্যপণ্যের চড়া দামে গত তিন বছর ধরে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সেই অবস্থার এখনো কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দাম আরও বেড়েছে। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে ভোক্তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি।