বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যের সম্পর্ক এ দেশের। ফলে, দুই দেশের সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার এটি নিশ্চিত করা জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, কূটনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি ও চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। এক্ষেত্রে বলা দরকার, উচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ের নানা ইসু্য আলোচনায় উঠে এসেছে। তথ্য মতে, বৈঠকে উভয়পক্ষ থেকেই তুলে ধরা হয়েছে দুদেশের স্বার্থ সম্পর্কিত নানা বিষয়। জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক শুরু হয় সোমবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। এতে ঢাকার হয়ে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন। অন্যদিকে, দিলিস্নর পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। জানা গেছে, দুই সচিবের মধ্যে একান্ত আলাপসহ সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে এই বৈঠক। বৈঠক ঘিরে দুদেশের জনগণের নজরও ছিল ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ার দিকে। আমরা মনে করি, এই বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
উলেস্নখ্য, বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সম্প্রতি দেওয়া নানা বক্তব্য, সীমান্ত হত্যা, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাসহ নানা বিষয় উপস্থাপন করা হয়। এসব বিষয়ে কড়া প্রতিবাদও জানিয়েছে ঢাকা। অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে বলা হয়েছে ঢাকার পক্ষ থেকে। আমরা মনে করি, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জরুরি, এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে এবং পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনায় রেখে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া, এ কথাও বলার দরকার, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, শান্তি, অগ্রগতিসহ সার্বিক কারণেও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জরুরি- যা অনুধাবন করতে হবে।
বলা দরকার, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না এটি তাদের জানানো হয়েছে। ভারতে বাংলাদেশ মিশনে হামলা ইসু্যতে আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার ইসু্যতে একটি গ্যাপ আছে, এ বৈঠকের পর তা দূর হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না, তাই ভারতকেও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে বলা হয়েছে। এছাড়া, ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু ইসু্যতে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই বলে ভারতকে সাফ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে নাক না গলানোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে একইসঙ্গে দুই দেশের স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে, সম্পর্কে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
বলা দরকার, বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক ইসু্যর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের বৈঠককে দুদেশের মধ্যকার আইস ব্রেকিং (জমে যাওয়া বরফ গলা) হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এমন সময়ে দুদেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়াটাই একটা সফলতা। আশা করা যায়, এই বৈঠকের পর দুদেশেই তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে উভয় দেশ উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করবে- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। আমরাও প্রত্যাশা করি, যে বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছে তা আমলে নিয়ে সম্পর্কে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনাসহ নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে- যা কাম্য নয়। আমলে নেওয়া দরকার, সার্বিক অগ্রগতি এবং উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যেতে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধত্বপূর্ণ তথা সুসম্পর্ক জরুরি। সঙ্গত কারণেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধসহ যে বিষয়গুলো সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনায় এসেছে তা আমলে নিতে হবে। দুই দেশের সম্পর্কে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।