সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

স্থানীয় সরকার সংস্কার : কিছু প্রস্তাবনা

গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। আর তাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও বেশি কার্যকর, শক্তিশালী, সেবাবান্ধব ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে এর কিছু সংস্কার জরুরি।
অমল বড়ুয়া
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
স্থানীয় সরকার সংস্কার : কিছু প্রস্তাবনা
স্থানীয় সরকার সংস্কার : কিছু প্রস্তাবনা

উপমহাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ইতিহাস বহুপুরনো ও প্রাচীন। রয়েছে সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ অব্দে সম্রাট অশোক তার শাসন ব্যবস্থায় তিন স্তর বিশিষ্ট প্রাদেশিক ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। 'প্রদেশক' ছিলেন প্রদেশ প্রধান, জেলা পর্যায়ে ছিলেন 'রাজুক'। মেগাস্থিনিস এই রাজুককেই 'অগ্রনমই' নামক কর্মকর্তা বলে উলেস্নখ করেছিলেন। 'রাজুক' গ্রামীণ প্রশাসনের ভিত রচনা করেছিলেন। জেলা ও গ্রাম এ-দুইয়ের মধ্যবর্তী প্রশাসনিক স্তর বিদ্যমান ছিল। এই প্রশাসনিক বিভাগ পাঁচ বা ১০ জন গ্রামবাসীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। এই প্রশাসনিক স্তরের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী হলেন- গোপ ও স্থানিক। গ্রাম ছিল প্রশাসনের ক্ষুদ্র ইউনিট কিন্তু গ্রামগুলো পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। গ্রামগুলোর নিজস্ব প্রশাসন ব্যবস্থা ছিল যারা সরাসরি 'গোপ'র কাছে জবাবদিহি করত। গ্রাম প্রধানকে 'গ্রামিক' বলা হতো; গ্রামের বয়োজ্যৈষ্ঠদের মধ্য থেকে গ্রামিককে নির্বাচিত করা হতো। তিনি গ্রামের কর সংগ্রহ, শৃঙ্খলা ও সুরক্ষার বিষয়গুলো দেখা শোনা করতেন।

৪০০ খ্রিষ্টাব্দে গুপ্ত সম্রাটরা কর্তৃক শাসিত বাংলায় সুদৃঢ় ও সুশৃংখল প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিরাজমান ছিল। তাদের প্রশাসন অনেক বিভাগে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো 'ভুক্তি'- গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে তিনটি ভুক্তির উলেস্নখ পাওয়া যায়- পুন্ড্রবর্ধন (সমগ্র উত্তরবঙ্গ), বর্ধমান (প্রাচীন রাঢ়র দক্ষিণাংশ) ও নব্যবকাশিকা যাতে সুবর্ণবীথি অন্তর্ভুক্ত ছিল; 'বিষয়'- হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্তর- যা বর্তমান আধুনিক জেলার অনুরূপ; 'মন্ডল'- হলো তৎপরবর্তী প্রশাসনিক স্তর। বিষয় বা জেলার পরবর্তী বিভাগ হচ্ছে 'বীথি'। প্রাচীন বাংলার সামগ্রিক প্রশাসন ব্যবস্থায় 'গ্রাম'-এর ভূমিকা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রশাসনিক স্তরবিন্যাসে গ্রাম হচ্ছে সবচেয়ে ছোট প্রশাসনিক ইউনিট। গ্রামের নামের শেষে 'অগ্রহার' শব্দটি যুক্ত থাকত। পূর্ববর্তী রাজবংশের শাসনের ধারাবাহিকতায় পাল শাসনামলেও প্রশাসনিক স্তরবিন্যাস হিসেবে 'ভুক্তি, বিষয়, মন্ডল, বীথি ও গ্রামসহ ছোট ছোট প্রশাসনিক বিভাগ প্রচলিত ছিল। পাল যুগের লিপিমালায় ভুক্তির উলেস্নখ পাওয়া যায়। এছাড়া, আরও কিছু ছোট ছোট প্রশাসনিক বিভাগ ছিল। এ গুলো হলো- খন্ডল, আবৃত্তি ও ভাগ। এর ধারাবাহিকতায় ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বে গ্রামগুলো ছিল স্বনির্ভর। পঞ্চায়েত নামে পরিচিত প্রতিটি গ্রামের নিজস্ব কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন ছিল। গ্রামের প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে এটি গঠিত হতো। সামাজিক বিষয়সমূহের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল তাদের। কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য তারা সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবহার করতেন। পঞ্চায়েত স্বাভাবিকভাবেই জনমতের ওপর ভিত্তি করে সমাজের সামাজিক চাহিদা পূরণ করে। উনিশ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারের বর্তমান কাঠামোটির উদ্ভব ঘটে। ১৮৭০ সালের গ্রাম চৌকিদারি আইনের অধীনে কিছু পলস্নী সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলে ইউনিয়নের সৃষ্টি হয়। যার মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। 'বেঙ্গল লোকাল সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট'র অধীনে ১৮৮৫ সালে ইউনিয়ন কমিটিগুলো গ্রাম পর্যায়ে, উপ-বিভাগীয় স্তরে স্থানীয় বোর্ড এবং জেলা স্তরে জেলা বোর্ড গঠিত হয়।

বাংলাদেশ সংবিধানে স্থানীয় সরকার বিষয়ক ৪টি (অনুচ্ছেদ-৯, ১১, ৫৯ ও ৬০) অনুচ্ছেদে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য স্থানীয় সরকারকে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার বিদ্যমান। প্রথম স্তরের প্রশাসনিক বিভাগ পর্যায়ে কোনো স্থানীয় সরকার নেই। দ্বিতীয় স্তরের প্রশাসনিক একক জেলাপর্যায়ে স্থানীয় সরকার (৬৪টি জেলায় জেলা পরিষদ), উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ এবং গ্রাম এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ, ছোট শহর এলাকায় পৌরসভা ও বড় শহরে সিটি করপোরেশন হলো স্থানীয় সরকারের অংশ।

বর্তমানে স্থানীয় সরকার কাঠামোয় তিনজন মহিলা সদস্যের জন্য আসন সংরক্ষিত রয়েছে- যা ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের সরকার চালু করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের তিন পার্বত্যাঞ্চলে 'জেলা-পরিষদের' পাশাপাশি রয়েছে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের পলস্নী অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ইউনিট। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪,৫৭১টি ইউনিয়ন আছে। জনগণের প্রয়োজন ও আশা আকাঙ্ক্ষার ধারক ও বাহক হিসেবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কাজ করছে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। আর তাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও বেশি কার্যকর, শক্তিশালী, সেবাবান্ধব ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে এর কিছু সংস্কার জরুরি।

প্রথম, দলীয় মনোনয়নে ও প্রতীকে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন) নিবার্চন বাতিল করা উচিত। প্রতিটি নির্বাচনে 'না' ভোট থাকা জরুরি। 'না' ভোট তিনভাগের একভাগ হলে প্রার্থীরা অযোগ্য ঘোষিত হবেন। এই বিধান সংসদ নির্বাচনেও থাকা বাঞ্চনীয়। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হওয়া উচিত সর্বনিম্ন স্নাতকোত্তর। কারণ দেশের বর্তমান শিক্ষিতের হার বেশি এবং এলাকায় মানসম্পন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন রয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট থাকেন দেশের সুধিজন। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জনপ্রতিনিধিকে তাদের সঙ্গেও কাজ করতে হয়। তাই যারা জনপ্রতিনিধি হবেন তাদের বুদ্ধিমত্তা, বিবেক, বিবেচনাবোধ ও বিচক্ষণতাসহ নেতৃত্বগুণ থাকা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সঠিক মান নির্ধারণ করা গেলে উপযুক্ত নেতৃত্বের সঙ্গে সততা ও দেশপ্রেমকেও উদ্বুদ্ধ করা হবে। তৃতীয়, স্থানীয় সরকার দেশের তৃণমূল পর্যায়ের সংস্থা। তাই এর গণতন্ত্রায়ন জরুরি। প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন পেশার (ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী, কৃষক, ধর্মীয় গুরু, লেখক-সাংবাদিক ও ছাত্র প্রতিনিধি) মনোনিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি 'ন্যায়পাল কমিটি' থাকা জরুরি। এতে করে স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সুশাসন সুনিশ্চিত হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ যে কোনো অপরাধ ও অপকর্মের জন্য 'ন্যায়পাল কমিটি' সাময়িক বরখাস্ত করার ক্ষমতার অধিকারী হবেন এবং স্থায়ী অপসারণ ও বিচারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।

চতুর্থত, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সম্মানজনক সম্মানী বা বেতন-ভাতা দেওয়া উচিত- যা বর্তমান বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। চেয়ারম্যানের বেতন ৬০-৭০ হাজার টাকা ও সদস্য বা কাউন্সিলরদের বেতন ৩০-৪০ হাজার টাকা হওয়া উচিত। উপযুক্ত বেতন-ভাতা পেলে জনপ্রতিনিধিরা দুর্নীতি করবে না। পঞ্চমত, স্থানীয় সরকারের (উপজেলা ও ইউনিয়নেরও) নির্দিষ্ট বাজেট থাকবে। এর ৫০ শতাংশ স্থানীয় সরকারের আওতাধীন এলাকা হতে বিভিন্ন ফি, জরিমানা, কর, ট্যাক্স, ভ্যাট, ট্রেড-লাইসেন্স, ইজারা (বাজার, পুকুর, দীঘি, নদনদীর ঘাট, গুদাম), বিভিন্ন নিবন্ধন ফি, অনুমোদন ফি, বনায়ন (সড়ক, সরকারি বনভূমি, জমিতে বনায়ন) ব্যক্তি ও সংগঠনের অনুদান থেকে প্রাপ্ত অর্থ বা আয় দ্বারা পূরণ করবে এবং বাকি অংশ উন্নয়ন বাজেট হিসেবে (রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামোর উন্নয়ন) কেন্দ্রীয় সরকার প্রদান করবে। এর ফলে, স্থানীয় সরকার আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনে সক্ষম হবে।

কেন্দ্রিয় সরকারের বাজেট প্রণয়নে স্থানীয় সরকারের বাজেটকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ষষ্ঠত, স্থানীয় সরকার যেহেতু শুধু তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই স্থানীয় সরকারকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা উচিত। যারা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ভূমিদসু্য, অপরাধী এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত বা সহায়তাকারী তাদের কোনোভাবেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। অপরাধীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা গেলে সমাজের ভালো ও সৎ লোকরা জনসেবার ব্রত নিয়ে জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন। এতে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে এবং একটি সুখ-শান্তিময় কল্যাণকর সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হবে। সপ্তমত, অনাস্থা ভোটের বিধান রাখা আবশ্যক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দুর্নীতি অপরাধ ইত্যাদির কারণে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের নির্ধারিত অনাস্থা ভোটে তাকে অপসারণ করা যাবে। এতে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কল্যাণে আত্মনিবেদিত থাকবে। ফলে, জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চালু হবে। দুনীতির লাঘব হবে।

অষ্টমত, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার ব্যব্যবস্থায় উন্নীত করা জরুরি। স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা, নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন কাজে স্থানীয় মানুষের পরামর্শ, অংশগ্রহণ ও তদারকি নিশ্চিত করা জরুরি। এতে করে সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে উঠবে। স্থানীয় সরকারের কাজের সফলতা-ব্যর্থতা নির্ণয়, উন্নয়ন-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন বিষয়ে অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন ও কৈফিয়ত বিষয়ে গণশুনানির ব্যবস্থা রাখা অত্যাবশ্যক। আয়-ব্যয়ের অডিট প্রতিবেদন সবার জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করতে হবে এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিটি অফিসে দৃশ্যমান 'সিটিজেন র্চাটার' প্রদর্শন করতে হবে। সরকারি সব সেবা, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিপূরক হিসেবে স্থানীয় সরকার কাজ করলে উন্নয়ন বৈষম্য থাকবে না। নবম, দুর্নীতি দমন, সেবা লাভে দীর্ঘসূত্রিতা ও ভোগান্তি লাঘবে 'ই-লোকাল গর্ভনমেন্ট সেবা' চালু করা উচিত। জন্ম-মৃতু্য নিবন্ধন সেবা, ভূমিসেবা, স্বাস্থ্যসেবা, বিচারসেবা, নিরাপত্তা সেবা ইত্যাদি সরাসরি স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ থাকা উচিত। এসব সেবা সরকারি অফিসের নিয়ন্ত্রণে থাকলে জনগণ সেবা লাভে বঞ্চিত ও ভোগান্তির শিকার হয় এবং দুর্নীতিও হয়। দশমত, স্থানীয় সরকারের বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর পরিবর্তে দ্বিকেন্দ্রিক কাঠামো করা গেলে ভালো হয়।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন দরকার; যেমন-১. স্থানীয় সরকারের সব প্রতিনিধি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন, ২. স্থানীয় সরকার আমলাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকবে; ৩. স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকবে এবং ৪. স্থানীয় সরকারের কাঠামো পুরোপুরি জনগণের দ্বারা শাসিত রাজনীতিমুক্ত সাধারণ মানুষের সংগঠন হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সর্বশেষ কেন্দ্র হিসেবে স্থানীয় সরকারকে গড়ে তুলতে পারলে উন্নয়নের সুফল লাভ করবে দেশের আনাচে-কানাচে অনাদর অবহেলায় পড়ে থাকা প্রান্তিক জনগণ।

অমল বড়ুয়া : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে