বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। সঙ্গত কারণেই প্রবাসী আয় বাড়ছে এমন তথ্য সামনে এলে তা আশাব্যঞ্জক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার যে, এই আয় এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং আশাপ্রদ।
বলা দরকার, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে দেশে প্রবাসী আয়ের জোরালো প্রবাহ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এক মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এলো। উলেস্নখ্য, দেশে এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। সেই মাসে ২৫৯ কোটি ডলার আয় এসেছিল। তথ্য মতে, গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। তবে এবার নতুন রেকর্ড করে ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ফলে, গত মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
আমরা বলতে চাই, এটা আমলে নেওয়া দরকার, প্রবাসী আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি এমন সময়ে এলো, যখন দেশের বাজারে ডলার সরবরাহে ঘাটতি অব্যাহত আছে। বৈদেশিক মুদ্রার এই ঘাটতি মোকাবিলায় প্রবাসী আয় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। ফলে, এই বিষয়টি যেমন সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে প্রবাসী আয়ে অগ্রগতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। এটা স্মর্তব্য যে, প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না অথবা কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে, বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে, প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুতও দ্রম্নত বাড়ে। এছাড়া, প্রবাসী আয় দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখে। ফলে, আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা বলতে চাই, এটা মনে রাখা দরকার যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উলেস্নখযোগ্য। ফলে, এই খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নেও সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। করোনা মহামারিকালে প্রবাসী আয়ে ধস নামার আশঙ্কা ছিল অনেকেরই। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত ছিল। এরও আগে জানা গিয়েছিল, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী আয় অর্জন কমলেও বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বেড়েছিল। আমলে নেওয়া দরকার, যখন কোভিড-এর প্রভাবে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল সারাবিশ্ব, তখনো প্রবাসী আয়ে দেশের অগ্রগতি হয়েছে- যা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ফলে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি দেশকে আরও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে দক্ষ জনশক্তির বিষয়টি আমলে নিয়েও এ ব্যাপারেও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। মনে রাখতে হবে, দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি যত বেশি বাড়বে, ততই নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে দেশে প্রবাসী আয়ের জোরালো প্রবাহ শুরু হয়েছে আর এরই ধারাবাহিকতায় এক মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এলো- যা ইতিবাচক। ফলে, সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করাও আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।