বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

বাড়ছে ভূমিধস যথাযথ উদ্যোগ জরুরি

  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাড়ছে ভূমিধস যথাযথ উদ্যোগ জরুরি

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। জানা যায়, দেশের অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিধসের পরিমাণ বাড়ছে এবং প্রতি বছর এটি ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া, অতিরিক্ত বৃষ্টির সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে মানুষের অপরিকল্পিত বসবাসের কারণে মৃতু্যহারও বাড়ছে ভূমিধসে। ২০২৪ সালে সারাদেশে ভূমিধসে ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলেই মারা গেছেন ২০ জন। সার্বিকভাবে ভূমিধস নিয়ে যেসব তথ্য উঠে আসছে তা উদ্বেগজনক। যা আমলে নিয়ে দ্রম্নত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার সেভ দ্য চিলড্রেন-এর আয়োজনে 'চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় ভূমিধস মোকাবিলায় অগ্রবর্তী পদক্ষেপ' শীর্ষক কর্মশালায় ভূমিধস সংক্রান্ত নানা তথ্য উঠে আসে। তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১৫টি বড় দুর্যোগে সারা বিশ্বে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৯৪ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়। এক হাজার ৫৩ জন মারা যান আর ক্ষতি হয় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমিধসের ঘটনাগুলোর রেকর্ড অনুযায়ী, দেশে গড়ে প্রতি বছর ১৯টি উলেস্নখযোগ্য ভূমিধসের দুর্যোগ ঘটে, যা প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৭ সালের ১১ জুনের একক বৃষ্টিপাতের ঘটনায় ১০০টি ভূমিধস ঘটে; যার ফলে, ১২৭ থেকে ১৩৫ জন মানুষের মৃতু্য হয়। এছাড়া, ২০২৪ সালের ১৮ ও ১৯ জুন ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৭৭৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। যার ফলে, প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত বছর চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসে অন্তত ২০ জনের মৃতু্য হয়েছে। ২০১৭ সালে সারাদেশে ভূমিধসে ১৫৮ জন মানুষ মারা গিয়েছেন।

উলেস্নখ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ভূমিধস বাড়ার বড় কারণ। অন্যদিকে, ২০০৭ ও ২০১৭ সালে ভূমিধসে মৃতু্যর হার বেশির কারণ হিসেবে জানা যায়, এর আগে ওই অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে- যাতে পাহাড় কাটা পড়েছে। এ ছাড়া ওই সময় বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছিল। আমলে নেওয়া দরকার, সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে- দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকা, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলটি ক্লে লোম মাটি (৬৭ শতাংশ) দ্বারা গঠিত- যা পানি ধারণক্ষমতায় দুর্বল। ভারী বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরিবর্তন ভূমিধসের প্রধান কারণ। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং ভূমিধস রোধে উদ্যোগী হতে হবে।

৬৫ শতাংশ মানুষ পার্বত্য অঞ্চলে খাস জমিতে বসবাস করেন। ৩৩ শতাংশ মানুষ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একবার হলেও ভূমিধসের শিকার হয়েছেন। এছাড়া, ২১ শতাংশ মানুষ ভূমিকম্প, ১৬ শতাংশ মানুষ ফ্ল্যাশ ফ্লাড ও ১৬ শতাংশ মানুষ ভূমিধস ও বন্যার একই সঙ্গে শিকার হয়েছেন। এই তথ্যগুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। সরকার ভূমিধসে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এই বিষয়ে যেন আগে থেকেই সতর্ক বার্তা জারি করা হয় সেই বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানা যাচ্ছে। যা আশাব্যঞ্জক।

সর্বোপরি, ভূমিধসের ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনা আমলে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, পাহাড় কাটা ও বন উজাড় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই পাহাড় কাটা, বন উজারসহ এই ধরনের কার্যকম রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। এসব কার্যক্রম মাটি ক্ষয়, প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার ব্যাঘাত এবং জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি করে। ভূমিধস বাড়ছে এটা আমলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে