বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

অনলাইন জুয়ার প্রবণতা

দিন দিন দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আর সীমাবদ্ধতার বাধ্যবাধকতা রাখছে না এই অনলাইন জুয়া। সময়ের পরিক্রমায় এখন এই জুয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর- কিশোরীদের মধ্যেও। যার ফলে, বৃদ্ধি পাচ্ছে সমাজের অপরাধ প্রবণতামূলক কাজের পরিমাণ। কিশোর গ্যাং এসবের জুয়াড়ির টাকা সংগ্রহের জন্য সর্বোপরি কাজের প্রতি স্পৃহা জাগ্রত করছে। ফলে, হত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজের প্রতিও তাদের বিবেক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না।
আরিফ আনজুম
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন জুয়ার প্রবণতা
অনলাইন জুয়ার প্রবণতা

তরুণ সমাজ যেমন টগবগে রক্তের মানব শরীরের অধিকারী ঠিক তেমনি অর্থের প্রতি আসক্তিও ঘটে। অল্প টাকা বিনিয়োগ করে যদি হাজার টাকা কামানো যায়, তাহলে এই সংকটকালে সবার আগ্রহ থাকবেই; কারও আগ্রহ না হলেও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে আগ্রহ একটু বেশি। কারণ হিসেবে বলা যায়, দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রাম্য অঞ্চলে গড়ে তোলা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের আয় করার মাধ্যম সংকীর্ণ। তাছাড়া, সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন কোনো ভাতা বা আয়ের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না যে, তারা নির্দ্বিধায় পড়ালেখা চালিয়ে যাবে। তাই কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী সহজ আয়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইনে জুয়ার পস্নাটফর্মকে। অবৈধ উপায়ে আয়ের মাধ্যম বলতে অনলাইন জুয়া বা সরাসরি জুয়া খেলে অবৈধ উপার্জনকে বোঝানো হয়েছে। অনলাইন জুয়া হলো এমন ধরনের খেলা- যা লাভ বা লোকশানের মধ্যে ঝুলন্ত থাকে। এ খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ নির্ধারণ করা হয়- তারপর কোনো একটি বিষয়ে দুই পক্ষ চুক্তি করে হারজিত নির্ধারণ করে, যে পক্ষ হেরে যায়, সে অপর পক্ষকে সেই নির্ধারিত অর্থ প্রদান করে।

শিক্ষার্থীরা এ অনলাইন জুয়ার মাধ্যম থেকে সাময়িকভাবে সচ্ছল হলেও তাদের লোভ এবং আসক্তি গ্রাস করে নিচ্ছে জ্ঞানচর্চা ও বিতরণের অধিকাংশ সময়। শিক্ষার্থীদের কাছে সামাজিক সমস্যার মতো রূপ ধারণ করেছে অনলাইন জুয়া। বিশেষ করে সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাদের আয়ের উৎস নেই বললেই চলে। তাদের কাছে জনপ্রিয় কিছু অনলাইন জুয়ার সাইট নবঅনলাইন ক্যাসিনো, অনলাইন লুডুসহ আরও অনেক ধরনের খেলা। এ ধরনের জুয়ার সাইটে সাধারণ মোবাইল নম্বর বা ইমেইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় এবং তার বিপরীতে ই-ওয়ালেট খুলে ব্যালেন্স যোগ করে ওই টাকায় জুয়া খেলা হয়। জুয়া বাবদ মোবাইল ওয়ালেট ছাড়াও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেও লেনদেন হয়। আবার এজেন্টের মাধ্যমে নগদে জুয়ার টাকা লেনদেন করা হয়।

দিন দিন দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আর সীমাবদ্ধতার বাধ্যবাধকতা রাখছে না এই অনলাইন জুয়া। সময়ের পরিক্রমায় এখন এই জুয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর- কিশোরীদের মধ্যেও। যার ফলে, বৃদ্ধি পাচ্ছে সমাজের অপরাধ প্রবণতামূলক কাজের পরিমাণ। কিশোর গ্যাং এসবের জুয়াড়ির টাকা সংগ্রহের জন্য সর্বোপরি কাজের প্রতি স্পৃহা জাগ্রত করছে। ফলে, হত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজের প্রতিও তাদের বিবেক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। গত ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড গ্যাম্বলিং মার্কেটের তথ্য অনুসারে শুধু অনলাইন জুয়ারবাজার মূল্য ছিল ৬৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে এর ব্যাপ্তি বেড়ে যায় ১১.৭ শতাংশ। তবে জুয়ায় এ বাজার মূল্যের গ্রাফ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী।

তবে বাংলাদেশে জুয়া প্রতিরোধে প্রচলিত কিছু আইন আছে। এছাড়া, ১৮৬৭ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে প্রণীত জুয়া প্রতিরোধ আইন এবং এতে সাজার পরিমাণও খুব নগণ্য। পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট-১৮৬৭, সেকশন ৩ অনুযায়ী যে কোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদন্ড বা অনুর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট-১৮৬৭ সেকশন ৪ অনুযায়ী কোনো ঘরে তাস, পাশা, কাউন্টার বা যে কোনো সরঞ্জামসহ কোনো ব্যক্তিকে জুয়া খেলারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি এক মাস পর্যন্ত কারাদন্ড বা ১০০ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। তবে কী আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম এভাবেই ধ্বংস হবে?

আরিফ আনজুম : শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে