তোলপাড়
৪. রিকশায় ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে আমিন সাহেব পায়ে ভীষণ ব্যথা পেলেন। ফারুক তাকে উঠিয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা আমিন। ফারুক তাকে সালাম জানিয়ে কাছের বন্ধুদের ডেকে এনে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মুক্তিযোদ্ধা আমিন সুস্থ হয়ে ফারুককে কিছু বখশিশ দিতে চাইলে ফারুক একজন মুক্তিযোদ্ধার সেবা করতে পারাকেই বড় বখশিশ বলে জানায়।
ক. সাবুর মায়ের নাম কী?
খ. আর এখন কিছু করতে না পারলে অসোয়াস্তি'্ত সাবুর এই মনোভাবের কারণ লিখ।
গ. উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিনের সঙ্গে 'তোলপাড়' গল্পের মিসেস রহমানের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে করো, ফারুকের ভূমিকা 'তোলপাড়' গল্পের সাবুর ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর :
ক. সাবুর মায়ের নাম জৈতুন বিবি।
খ. আগে ফায়-ফরমাশ খাটতে বিরক্ত লাগলেও যুদ্ধের সময় অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে অসোয়াস্তি হয় সাবুর।
শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ জীবন বাঁচাতে সাবুদের গ্রাম পার হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের এ পরিস্থিতি দেখে সাবুর মনে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার ভাবনা উপস্থিত হয়। আলোচ্য উক্তিতে সাবুর মানসিক অবস্থাকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
গ. বিপদগ্রস্ত হয়ে অন্যের সাহায্য প্রাপ্তির দিক দিয়ে উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিন ও 'তোলপাড়' গল্পের মিসেস রহমান দুজনের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
'তোলপাড়' গল্পে মুক্তিযুদ্ধকালীন সাধারণ মানুষের দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। গল্পে শহরে পাকিস্তানিদের আক্রমণের শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের পালিয়ে যাওয়ার চিত্র লক্ষ্য করা যায়। মিসেস রহমানও তাদের একজন। তিনি শহর থেকে পালিয়ে আসার পথে সাবুর কাছে সাহায্য পান।
উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিন একজন বয়স্ক মানুষ, যার সঙ্গে মূল গল্পের মিসেস রহমানের বেশকিছু মিল রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আমিনকে ফারুক আহত অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে। সে জন্য তাকে আমিন সাহেব কিছু বখশিশ দিতে চাইলে ফারুক তা নেয়নি। 'তোলপাড়' গল্পেও মিসেস রহমানের বখশিশ না নিয়ে তার পাশে এসে সাবু সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। সুতরাং উভয় চরিত্রের মধ্যেই সাহায্য প্রাপ্তির পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাবোধ বিদ্যমান। এদিক থেকে উভয়ের মধ্যে মিল রয়েছে।
ঘ. 'তোলপাড়' গল্পের সাবুর ভূমিকা পালন করার ভাবনাই উদ্দীপকের ফারুকের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
'তোলপাড়' গল্পের সাবু পাকিস্তানিদের অত্যাচারের ভয়ে শহর থেকে পালিয়ে আসা মিসেস রহমান নামের এক বয়স্ক মহিলাকে সহযোগিতা করে। মিসেস রহমান ক্লান্ত হলে তাকে পানি পান করিয়ে তৃপ্ত করেছে সাবু। উদ্দীপকে মুক্তিযোদ্ধা আমিনকে হাসপাতালে নিয়ে ফারুকও মহান দায়িত্ব পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধা আমিন তাকে বখশিশ দিতে চাইলেও সে তা গ্রহণ করেনি। মুক্তিযোদ্ধার সেবা করতে পারাটাকেই সে বখশিশ বলে মনে করেছে।
গল্পের সাবু মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মিসেস রহমান তাকে টাকা দিতে চাইলেও সাবু টাকা গ্রহণ করেনি; বরং সে তার মায়ের দোহাই দিয়ে টাকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। উদ্দীপকের ফারুকের মধ্যেও একই মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। ফারুকের ভূমিকা 'তোলপাড়' গল্পের সাবুর ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি।
অমর একুশে
৫.
র. শহীদ মিনার
ভেঙেছে ভাঙ্গুক! ভয় কী বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী চার কোটি পরিবার।
রর. জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার
\হ তবু মাথা নোয়াবার নয়।
ক. ২১ ফেব্রম্নয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত কত তারিখে নেওয়া হয়?
খ. ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে কেন? বুঝিয়ে লেখো।
গ. প্রথম উদ্দীপকে 'অমর একুশে' প্রবন্ধের কোন দিকটিকে প্রকাশ করছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দ্বিতীয় উদ্দীপকে 'ভাষা-আন্দোলনকারীদের মনোভাবকেই ধারণ করে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :
ক. ২১ ফেব্রম্নয়ারিকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৪ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৫২ সালে।
খ. রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘোষণা করায় ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতির ভাষণে ঘোষণা করেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।' দেশের ছাত্রসমাজ এ ঘোষণার প্রতিবাদ জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-ধর্মঘট পালিত হয়।
গ. প্রথম উদ্দীপকে পাকিস্তানিদের ধ্বংসাত্মক দিকের পাশাপাশি বাঙালির লড়াকু মনোভাবও প্রকাশ পেয়েছে।
উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, এমন ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্ররা রাজপথে আন্দোলনে নামে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি বর্বর পাক-বাহিনী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি চালায়। শহীদদের স্মরণে ২৩ ফেব্রম্নয়ারি একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়।
প্রথম উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার কথা উঠে এসেছে। আলোচ্য প্রবন্ধের বর্ণনায় দেখি, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি শহীদদের উদ্দেশে যে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, তা পাক-বাহিনী ভেঙে দিলেও আন্দোলনরত ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়। একত্রে তারা আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং দাবি আদায়ে সমর্থ হয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়