মৌলবিপাক : বিপাক ক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌলবিপাক বলে।
খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন : যেসব জৈব রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যে সামান্য পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন ক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে সাহায্য করে তাদের ভিটামিন বলে।
খনিজ লবণ : দেহকোষ ও দেহ তরলের জন্য খনিজ লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। প্রধানত দুই ভাবে খনিজ লবণ দেহে কাজ করে। যথা-দেহ গঠন উপাদানরূপে ও দেহ অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
পানি : প্রাণীদেহের ৬০-৭০ ভাগই পানি। তাই দেহগঠনে পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শুষ্কতা : কোনো কারণে দেহে পানির পরিমাণ কমে গেলে কোষগুলোতে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়, একে বলে শুষ্কতা।
রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাদ্য : শস্যদানা, ফলমূল, সবজির অপাচ্য অংশকে রাফেজ বলে। এটি কোনো পুষ্টি উপাদান নয়। তবে দেহের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: কিলোক্যালরি কী?
উত্তর: কিলোক্যালরি হলো খাদ্যে তাপশক্তি মাপার একক। ১০০০ ক্যালরিতে ১ কিলোক্যালরি হয়। দেহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে কী পরিমাণ শক্তি লাগবে তা কিলোক্যালরি একক থেকে নির্ণয় করা হয়।
প্রশ্ন: ভিটামিন 'এ'-র অভাবে কী কী অসুবিধা দেখা দেয়?
উত্তর: ভিটামিন 'এ'-র অভাবে রাতকানা রোগ হয়। এর অভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে জেরপথালমিয়া রোগ দেখা দেয়। এতে ব্যক্তি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় সর্দি, কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
প্রশ্ন: রিকেটস রোগের লক্ষণগুলো কী কী?
উত্তর: ভিটামিন 'ডি' ও ক্যালসিয়ামের অভাবে রিকেটস রোগ হয়। এ রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ :
১. রিকেটস রোগে শিশুদের হাড় নরম হয় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
২. পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যায় এবং দেহের চাপে অন্যান্য হাড়গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. হাত-পায়ের অস্থিসন্ধি বা গিঁট ফুলে যায়।
৪. বুকের বা পাঁজরের হাড় বেঁকে যায়।
প্রশ্ন: রক্তে হিমোগেস্নাবিনের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: রক্তে হিমোগেস্নাবিন নামক লৌহঘটিত প্রোটিন জাতীয় রঞ্জক পদার্থ থাকায় রক্তের রং লাল হয়। হিমোগেস্নাবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগেস্নাবিন যৌগ গঠন করে অক্সিজেন পরিবহন করে এবং কার্বন-ডাই অক্সাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্বো-অ্যামাইনো হিমোগেস্নাবিন যৌগ গঠন করে কার্বন-ডাই অক্সাইড পরিবহন করে। রক্তে হিমোগেস্নাবিনের পরিমাণ কমে গেলে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
প্রশ্ন: বিশুদ্ধ খাদ্য কাকে বলে?
উত্তর: যে খাদ্যে শুধুমাত্র একটি উপাদানই থাকে, তাকে বিশুদ্ধ খাদ্য বলে।
প্রশ্ন: মিশ্র খাদ্য কাকে বলে?
উত্তর: যে খাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে, তাকে মিশ্র খাদ্য বলে।
প্রশ্ন: শর্করা কী কী উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত?
উত্তর: শর্করা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এ তিনটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
প্রশ্ন: কোন শর্করা রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয়?
উত্তর: গস্নুকোজ রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয়।
প্রশ্ন: আমাদের ক্যালরির শতকরা কত ভাগ শর্করা থেকে গ্রহণ করা দরকার?
উত্তর: আমাদের ক্যালরির শতকরা ৬০-৭০ ভাগ শর্করা থেকে গ্রহণ করা দরকার।
প্রশ্ন: আমিষের অভাবে কী রোগ দেখা দেয়?
উত্তর: আমিষের অভাবে কোয়াশিয়রকর ও মেরাসমাস রোগ দেখা দেয়।
প্রশ্ন: স্নেহ পদার্থ পরিপাক হয়ে কিসে পরিণত হয়?
উত্তর: স্নেহ পদার্থ পরিপাক হয়ে ফ্যাটি এসিড ও গিস্নসারলে পরিণত হয়।
প্রশ্ন: জেরপথালমিয়া রোগে চোখের কী ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
উত্তর: জেরপথালমিয়া রোগে চোখের কর্নিয়ার আচ্ছাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশ্ন: ভিটামিন ডি-এর অভাবে বয়স্কদের কী রোগ হয়?
উত্তর: ভিটামিন ডি-এর অভাবে বয়স্কদের অস্টিওম্যালেশিয়া রোগ হয়।
প্রশ্ন: দেহের প্রথ্রোম্বিন নামক প্রোটিন কোন ভিটামিন তৈরি করে?
উত্তর: দেহে প্রথ্রোম্বিন নামক প্রোটিন ভিটামিন কে তৈরি করে।
প্রশ্ন: খাদ্যের কী কী কাজ পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত?
উত্তর: পুষ্টি প্রক্রিয়াতে খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত হয় তা দেহ শোষণ করে নেয়। শোষণের পরে দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য নতুন কোষ গঠন করে। তাছাড়া তাপ উৎপাদন, রোগ-প্রতিরোধ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুষ্টি জোগায়। দেহে খাদ্যের এই সকল কাজই পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত।
প্রশ্ন: চালকে শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ কেন বলা হয়?
উত্তর: সেদ্ধ চালে ৭৯% শ্বেতসার ও ৬% স্নেহ পদার্থ থাকে। এছাড়া, সামান্য পরিমাণ আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। সেদ্ধ চালে শ্বেতসারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই চালকে শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ বলা হয়।
প্রশ্ন: একজন লোকের দৈনিক কী পরিমাণ শক্তির দরকার তা কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর: একজন লোকের দৈনিক কী পরিমাণ শক্তির দরকার তা প্রধানত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যথা : ১. মৌলবিপাক, ২. দৈহিক পরিশ্রম ও ৩. খাদ্যের প্রভাব।
প্রশ্ন: খাদ্য নির্বাচনের সময় আমাদের কী বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে?
উত্তর: খাদ্য নির্বাচনের সময় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, খাদ্য থেকে দেহ যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরি পেতে পারে এবং ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো যেন এতে থাকে।
প্রশ্ন: ভিটামিন এ-এর উৎস কী কী?
উত্তর: মাছের তেল ও প্রাণিজ স্নেহে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ক্যারোটিনসমৃদ্ধ শাক-সবজি যেমন: লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, টমেটো, গাজর, বীট, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি ভিটামিন এ-এর ভালো উৎস। বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন: পেঁপে, আম ও কাঁঠালে ভিটামিন এ থাকে। মলা ও ঢেলা মাছেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়