শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
  ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা

২. বিগত বছরে হাওড় অঞ্চলে অকাল বন্যায় কৃষকের প্রধান ফসল ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকে। জরুরি চিকিৎসা সেবায়ও সংকট দেখা দেয়। আয়-রোজগার না থাকায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেনি।

ক. মানবজীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা কী?

খ. শিক্ষাকে কেন মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়?

গ. উদ্দীপকে কোন মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি

লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে অনুপস্থিত মানবজীবনের মৌল মানবিক

চাহিদার তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তর :

ক. মানবজীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য।

খ. সামাজিকভাবে উন্নত জীবনযাপনের জন্য মানুষকে যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয় শিক্ষা তার অন্যতম। তাই একে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।

শিক্ষার মাধ্যমেই একজন মানুষ তার জীবন ও জগৎ

সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে। এটি মনুষ্যত্ব

অর্জনের একমাত্র উপায়। শিক্ষাই পারে মানুষের সুপ্ত

প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠন,

মানবিক মূল্যবোধ অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব

সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। এ কারণে শিক্ষাকে মৌল

মানবিক চাহিদা বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বস্ত্র, চিত্তবিনোদন ও সামাজিক নিরাপত্তার

মতো মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।

সমাজে বাস করার জন্য মানুষকে কিছু চাহিদা পূরণ

করতে হয়। এগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষের শারীরিক,

মানসিক ও সামাজিক বিকাশ সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়। এসব

চাহিদা পূরণ ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা বা উন্নত

জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো- খাদ্য, বস্ত্র,

বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন ও সামাজিক

নিরাপত্তা। এর মধ্যে উদ্দীপকে তিনটি চাহিদার কথা

উলেস্নখ করা হয়নি।

উদ্দীপকে দেখা যায়, হাওর অঞ্চলের বন্যায় মানুষের

ফসলহানি ঘটেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বন্ধ থাকছে,

চিকিৎসাসেবায় সংকট দেখা দিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তরা

ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না। কিন্তু খাদ্য, শিক্ষা,

চিকিৎসা ও বাসস্থান ছাড়াও মানুষের আরো কিছু মৌল

মানবিক চাহিদা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো

বস্ত্র। এটি দৈনন্দিন প্রয়োজনের বিষয় ছাড়াও সভ্যতার

অন্যতম প্রতীক। বস্ত্র ছাড়া কোনো মানুষ সভ্য সমাজে

থাকতে পারে না। আবার চিত্তবিনোদন হলো মানুষের

মনের খোরাক। সুস্থ বিনোদন মানুষকে কাজ করার শক্তি ও প্রেরণা জোগায়। এর অভাবে মানুষ স্বাভাবিক কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে পড়ে।

ইদানিং সামাজিক নিরাপত্তাকেও মৌল মানবিক চাহিদা

হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধান

অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা (বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বেকার ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি) পাওয়ার অধিকার আছে। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকে বস্তু, সামাজিক নিরাপত্তা এবং চিত্তবিনোদন্তএ মৌল মানবিক চাহিদাগুলোর ইঙ্গিত অনুপস্থিত।

ঘ. উদ্দীপকে অনুপস্থিত মৌল মানবিক চাহিদা অর্থাৎ বস্ত্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও চিত্তবিনোদনের তাৎপর্য অপরিসীম।

মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য মৌল মানবিক চাহিদা প্রয়োজন। প্রত্যেক মানুষের জন্য এসব চাহিদা পূরণ

হওয়া জরুরি। বস্ত্র মানবজীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। সভ্যতার সূচনা থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। বস্ত্র ছাড়া কোনো মানুষ সমাজে বাস করতে পারে না এবং এর অভাবে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বস্ত্র লজ্জা নিবারণ ছাড়াও মানুষকে অতি শৈত্য বা উষ্ণতা এবং নানা ধরনের সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে। আবার খাদ্য যেমন দেহের বৃদ্ধি ঘটায়, তেমনি চিত্তবিনোদন মানুষের মনের খোরাক জোগায়। এর ফলে কাজে উদ্দীপনা আসে। কাজের ব্যস্ততার কারণে মানুষের জীবন মাঝে মাঝে একঘেয়ে হয়ে ওঠে। তখন চিত্তবিনোদনমূলক কাজ মানুষের মনকে চাঙ্গা করে। ক্লান্তি করে কাজের প্রেরণা জোগায়। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই নয় শিশু, কিশোরদের ক্ষেত্রেও চিত্তবিনোদনের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।

যান্ত্রিক ও ভোগবাদী এই যুগে মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতির পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। তাই অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্তমানে এটি মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মাধ্যমে বেকার, প্রতিবন্ধী, বিধবা, এতিম, প্রবীণসহ অসহায় ও দুস্থ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে পরিবর্তন আসছে। তাই সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায় বস্ত্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও চিত্তবিনোদন মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পঞ্চগড়ের সফিকুলের নাম দেশবাসীর মুখে মুখে। কারণ সে এবার ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অথচ কখনও দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খাবার পায়নি। এক কাপড়ে কেটেছে, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে গাদাগাদি করে জরাজীর্ণ ঘরে সে রাত কাটাত। অবশ্য পরিবারটি 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির আওতায় ছিল। আর এর মধ্যেই সফিকুল স্বপ্ন দেখতো সে ডাক্তার হবে, অসুস্থ মাকে সুস্থ করে তুলবে, সাথে সাথে গ্রামবাসীর সেবা করবে।

ক. মৌলিক মানবিক চাহিদা কয়টি?

খ. বস্তুকে কেন মানবিক চাহিদা বলা হয়?

গ. উদ্দীপকে সফিকুল কোন চাহিদা পূরণের স্বপ্ন

দেখেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত কর্মসূচি কি মৌলিক মানবিক

চাহিদা পূরণে যথেষ্ট? মতামত দাও।

উত্তর:

ক. মৌলিক মানবিক চাহিদা ছয়টি; যেমন- খাদ্য, বস্ত্র,

বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন।

খ. মানুষের পক্ষে বস্ত্র ছাড়া সভ্য সমাজে বসবাস সম্ভব নয়। এ কারণে বস্ত্রকে মানবিক চাহিদা বলা হয়। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোই মানবিক চাহিদা। সামাজিক পরিচিতি ও মর্যাদা রক্ষার জন্য মানবিক বা সামাজিক চাহিদার গুরুত্ব অপরিসীম। বস্ত্র এ ধরনেরই একটি চাহিদা। বস্ত্র ছাড়া মানুষের পক্ষে সভ্য সমাজে থাকা সম্ভব নয়। পোশাক একদিকে লজ্জা নিবারণ করে মানুষকে সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে সাহায্য করে, অন্য দিকে শীত ও গরম এবং নানা ধরনের রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে।

পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে