শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
  ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
ইতিহাস ও ঐতিহ্য

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ হলো দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্যাটাগনিয়ান শেলফে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপপুঞ্জের প্রধান দ্বীপগুলো দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্যাটাগনিয়ান তীর হতে ৩০০ মাইল (৪৮০ কিলোমিটার) পূর্বে এবং এন্টার্কটিক উপদ্বীপের উত্তর প্রান্তর কেইপ ডুবোজেট হতে ৭৫২ মাইল (১,২১০ কিলোমিটার) দূরে প্রায় ৫২ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত। পূর্ব ফকল্যান্ড, দক্ষিণ ফকল্যান্ড ও ৭৭৬টি ছোট দ্বীপ নিয়ে, দ্বীপপুঞ্জটির মোট আয়তন ৮,৭০০ বর্গমাইল (১২,১৭৩ বর্গকিলোমিটার)। ফকল্যান্ড একটি স্বশাসিত অঞ্চল হলেও ব্রিটিশ বৈদেশিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় যুক্তরাজ্য এর প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। ফকল্যান্ডের রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর হলো স্ট্যানলি, যেটি পূর্ব ফকল্যান্ডে অবস্থিত।

ইউরোপিয়ানদের উপনিবেশ স্থাপন নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। বিভিন্ন সময়ে দ্বীপগুলোতে ফরাসি, ইংরেজ, স্প্যানিশ ও আর্জেন্টাইন বসতি ছিল। ব্রিটেন ১৮৩৩ সালে পুনরায় শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও আর্জেন্টিনা এখনো দ্বীপপুঞ্জটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে আর্জেন্টাইন সামরিক বাহিনী দ্বীপপুঞ্জটিতে আক্রমণ করে। ইতিহাসে এই আক্রমণ ফকল্যান্ড যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ প্রশাসন এই আক্রমণের দুই মাস পর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। ২০১৩ সালের একটি গণভোটে সব ফকল্যান্ড অধিবাসী ব্রিটিশ বৈদেশিক অঞ্চলে থাকার পক্ষে ভোট দেয়। এই অঞ্চলটির সার্বভৌমত্ব আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের চলমান বিবাদের একটি অংশ।

1

দ্বীপপুঞ্জটির অধিকাংশ জনগোষ্ঠী (২০২১ সালে ৩,৬৬২ জন) মূলত ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ফকল্যান্ড দ্বীপবাসী। এছাড়াও আছে ফরাসি, জিব্রাল্টারিয়ান ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান জাতিগোষ্ঠীর অধিবাসী। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আটলান্টিক দ্বীপ সেন্ট হেলেনা ও চিলি থেকে আগত অভিবাসী দ্বীপটির জনসংখ্যা হ্রাসের হার বন্ধ করে দিয়েছে। দ্বীপপুঞ্জের প্রধান ভাষা (ও রাষ্ট্র ভাষা) ইংরেজি। ব্রিটিশ জাতীয়তা (ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ) আইন ১৯৮৩ অনুযায়ী ফকল্যান্ড অধিবাসীরা ব্রিটিশ নাগরিক। দ্বীপপুঞ্জটি উপ-এন্টার্কটিক মহাসাগরীয় ও উত্তরমেরু অঞ্চলের সীমানায় অবস্থিত। দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দু'টি দ্বীপেই ২,৩০০ ফুট উঁচু পর্বত শ্রেণি আছে। দ্বীপ দু'টিতে বিপুল পরিমাণ পাখি বসবাস করে কিন্তু অধিকাংশ পাখি নবাগত প্রাণীর শিকারে পরিনত হওয়ায় প্রধান দ্বীপগুলোতে আর বংশ বৃদ্ধি করে না। এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক শিল্প হলো মাছ ধরা, পর্যটন ও উচ্চ মানের উল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ভেড়া পালন। আর্জেন্টিনার সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের কারণে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত তেল অনুসন্ধান বিতর্কিত হয়ে আছে।

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নামটি ফকল্যান্ড সাউন্ড থেকে উদ্ভুত, যেটি ফকল্যান্ডের বৃহৎ দুটি দ্বীপের মাঝ দিয়ে যাওয়া প্রণালীর নাম। ১৬৯০ সালে ইংরেজ ক্যাপ্টেন জন স্ট্রং দ্বীপপুঞ্জটিতে একটি অভিযান পরিচালনা করার সময় উক্ত প্রণালীর 'ফকল্যান্ড' নামকরণ করেন। তিনি ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর কোষাধ্যক্ষ এন্টনি ক্যারি, ৫ম ভিসকাউন্ট ফকল্যান্ডের সম্মানে এই নামটি বেছে নেন, যিনি এই অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ভিসকাউন্টের এই উপাধি স্কটল্যান্ডের ফকল্যান্ড শহর হতে উদ্ভূত। শহরটির নাম আনুমানিক গাইলিক শব্দ হতে উদ্ভুত হতে পারে, যেটি দ্বারা 'ঘের' বোঝানো হয়। আবার শব্দটি এঙ্‌েলা-স্যাক্সন শব্দ 'ফোকল্যান্ড' (ফোক-রাইট দ্বারা অধিকৃত এলাকা) থেকেও উদ্ভূত হতে পারে।

ফকল্যান্ড সংস্কৃতি তার ব্রিটিশ বসতি স্থাপনকারীদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে কিন্তু হিস্পানিক দক্ষিণ আমেরিকার দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে। ফকল্যান্ডাররা এখনো প্রাক্তন গাউচো বাসিন্দাদের কিছু পদ এবং স্থানের নাম ব্যবহার করে। ফকল্যান্ডের প্রধান এবং অফিসিয়াল ভাষা হলো ইংরেজি, যার প্রধান উপভাষা হলো ব্রিটিশ ইংরেজি; তবুও কিছু বাসিন্দা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। প্রকৃতিবিদ উইল ওয়াগস্টাফের মতে, 'ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ একটি খুব সামাজিক জায়গা এবং আড্ডা দেওয়ার জন্য থামানো জীবনের একটি উপায়'।

দ্বীপপুঞ্জে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র দ্য পেঙ্‌গুইন নিউজ এবং টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচার সাধারণত যুক্তরাজ্য থেকে প্রোগ্রামিং করে। ওয়াগস্টাফ স্থানীয় রন্ধন প্রণালিকে 'অত্যন্ত ব্রিটিশ চরিত্রে বর্ণনা করেছেন যেখানে দেশীয় শাকসবজি, স্থানীয় ভেড়ার মাংস, মাটন, গরুর মাংস এবং মাছের ব্যবহার অনেক বেশি'। খাবারের মধ্যে সাধারণ হলো 'বাড়িতে তৈরি কেক এবং চা বা কফির সঙ্গে বিস্কুট' সামাজিক কার্যকলাপ হলো, ওয়াগস্টাফের মতে, 'একটি ছোট ব্রিটিশ শহরের মতন যা বিভিন্ন ক্লাব এবং সংস্থা সম্প্রদায়ের জীবনের অনেক দিককে কভার করে'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে