শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ববির নবনিযুক্ত উপাচার্যের যোগদান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  ১৬ মে ২০২৫, ২০:৪০
ববির নবনিযুক্ত উপাচার্যের যোগদান
ফাইল ছবি

গত বৃহস্পতিবার ১লা মে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপচার্য নিয়োগ হয় চার বছর মেয়াদের জন্য। সে হিসাবে ১৪ বছর বয়সী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) এ পর্যন্ত ৪জন ভিসির দায়িত্ব পালনের কথা। আগের ৫জনের তিনজনকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিদায় নিতে হয়েছে। শিক্ষাথীদের আন্দোলনের মুখে সকলের অগোচরে তাদের ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়। রাজধানীতে অবস্থান করে গ্রহন করতে হয় বিদায়ের পত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে কমপক্ষে ৩০ জনের সাথে কথা হলে তারা যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, ৩ ভিসির অনাকাংক্ষিত বিদায়ের মুল কারন হলো- শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরী ও তাদেরকে বিশেষ সুযোগ প্রদান। এক্ষেত্রে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মকর্তারা সুযোগ খুঁজতে থাকেন। তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন উস্কে দেন বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মকর্তারা। আন্দোলনের মুখে পড়া তিন ভিসিরই আস্থাভাজন ছিলেন সাবেক প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল কাইউম।

1

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মেয়াদ শেষ করতে না পারা ভিসিরা হলেন, মঙ্গলবার রাতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন (৮মাস দায়িত্ব পালন), গত ২০ আগষ্ট পদত্যাগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটিলিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভুইয়া (১০ মাস দায়িত্ব পালন)। ববির দ্বিতীয় ভিসি মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এস.এম ইমামুল হককে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৬ দিন আগে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল বাধ্যতামুলক ছুটিতে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে ড. এসএম ইমামুল হক দু:খ্য প্রকাশ এবং ড. বদরুজ্জামান ভুইয়া ক্ষমা প্রার্থনা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। সর্বশেষ ভিসি ড. শুচিতা বিদায়ের আগের দিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ইমামুল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বরিশালের রাজনীতিতে প্রভাবশালী বঙ্গবন্ধুর ভাগনে পরিবারের ইন্ধন ছিলো বলে গুঞ্জন রয়েছে। বদরুজ্জামান ভুইয়া ৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনের পর ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে চিহিৃত হন। সদ্য বিদায়ী ড. শুচিতার সঙ্গে প্রোভিসি ড. গোলাম রাব্বানী ও কোষাধ্যক্ষ মামুনর রশিদের বিরেধ আন্দোলনের সুত্রপাতের অন্যতম কারন বলে জানা গেছে। যদিও ভিসির সঙ্গে প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

চার বছরের পূর্ন মেয়াদে দায়িত্বপালন করা দুই ভিসি হলেন প্রথম ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেণ্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুননর রশীদ ও চতুর্থ ভিসি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন।

৩ ভিসির অনাকাংক্ষিত বিদায় প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদ্য সাবেক শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু শিক্ষক, কমকর্তা, কর্মচারী ভিসিকে নিজেদের বলয়ে নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করেন। এতে ভিসি বিতর্কিত হন। অনাকাংক্ষিত বিদায়ী ৩ ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই গ্রুপের বলয়ে ছিলেন। ৩জনকে বিতর্কিত করার জন্য দায়ী সাবেক একজন প্রক্টর। সদ্য অপসারতি ভিসিকে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করা, উপ উপাচার্যকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেয়া এবং কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে নানাভাবে নাজেহাল করার জন্য ভিসিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেই প্রক্টর।

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা-কমচারী বিরক্তিকর। এদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নস্ট হচ্ছে। এদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। তিনি দাবী করেন, এই আন্দোলন আর আগের আন্দোলন মেলালে হবে না। এই আন্দোলনে ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবীতে কথা বলেছে। কিন্তু আগের আন্দোলনে ছাত্রদের বাহিরের নানা প্রভাব ও স্বার্থ ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন এ প্রসঙ্গে বলেন, যখন ভিসি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন, সকলকে দিয়ে নয়, কোন একটা গোষ্ঠীকে নিয়ে চলতে থাকেন। ড. সুচিতা কয়েকজনকে নিদিস্ট সুবিধা দিয়েছেন।

নবনিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম যোগদানের দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন এখানে বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমি আমার সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করব বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে