৪র্থ অধ্যায়
প্রশ্ন : সম্প্রতি পাঠ্যবই বা গল্পের বইয়ের বাইরে কেউ কি এমন কোনো লেখা দেখেছ যা বিশেষভাবে মনে আছে বা গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর : সম্প্রতি পাঠ্যবই বা গল্পের বইয়ের বাইরে দেয়াল লিখন দেখেছি। যেটা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে। দেয়াল লিখন এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা খুব সহজেই কোনো নির্দিষ্ট বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা যায়। গত একুশে ফেব্রম্নয়ারি প্রভাতফেরিতে যাওয়ার সময় শহীদ মিনার সংলগ্ন একটি দেয়ালে বেশ কিছু লেখা দেখতে পাই এবং তার সবই ছিল আমাদের মাতৃভাষার ইতিহাসভিত্তিক স্মৃতিবিজড়িত বাণী ও গানের পঙ্ক্তি।
যেটা দেখে তৎক্ষণাৎ আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, আমার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। এটি এমন একটি পদ্মা যেখানে কোনো বার্তা প্রত্যক্ষভাবে প্রচার করা সম্ভব। কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া সম্ভব হয় দেয়াল লিখনের মাধ্যমে।
প্রশ্ন : পড়াশোনার কাজের বাইরে আর কি কোনো ধরনের কাজে কেউ কিছু লেখো? কোন ধরনের লেখা লিখে থাকো?
উত্তর : পড়াশোনার কাজের বাইরে আরও বিভিন্ন ধরনের লেখা লিখতে হয় আমাদের। পড়াশোনার বাইরে বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার বদৌলতে প্রায়ই ভিন্নতর লেখালেখির প্রয়োজন হয়।
যেকোনো সংগঠনে সদস্য সংগ্রহের প্রচারে সাংগঠনিক লেখা, দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র লেখা, বিভিন্ন কর্মশালার রিপোর্ট রাইটিং, পত্রিকায় প্রচারের জন্য গল্প-প্রবন্ধ, আর্টিকেল প্রভৃতি বিষয়ভিত্তিক লেখা লিখে থাকি আমরা। অনুষ্ঠান উপস্থাপনার প্রিন্টসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা-বিজ্ঞাপনেও ভিন্নধর্মী লেখার প্রচলন রয়েছে। এভাবেই পড়াশোনা ব্যতীত বিতর্ক-বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনে যুক্ত থাকার দরুন বিভিন্ন বিষয়ে লেখার অভিজ্ঞতা গড়ে ওঠে।
২য় পরিচ্ছেদ
নমুনা-১
রেলগাড়ি চলে রেললাইনের উপর দিয়ে। দেশে-বিদেশে যত রকম যানবাহন আছে, তার মধ্যে রেলগাড়ি সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয়। ছেলেবুড়ো সবাই এর কু-ঝিকঝিক শব্দ শুনে মুগ্ধ হয়। নদী-নালা, পাহাড়-পর্বতের পাশ দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে রেলগাড়ি ছুটে চলে। গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালে মাঝে মাঝে দেখা যেতে পারে কুঁড়েঘর, ধানক্ষেত, নীল আকাশ।
বাংলাদেশের রেলগাড়িতে অনেক সময়ে হকার দেখা যায়। তারা ডিম সিদ্ধ, ঝালমুড়ি, চিড়াভাজাসহ আরও কত কিছু যে বিক্রি করেন! অনেকে পত্র-পত্রিকা বিক্রির জন্যও রেলে ওঠেন। একবার একতারা হাতে একজনকে রেলগাড়িতে উঠতে দেখেছিলাম। তিনি পলিস্নগীতি শুনিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন। তার গান শুনে সবার সঙ্গে আমিও হাততালি দিয়েছিলাম।
রেল-ভ্রমণের আনন্দ অনেক। রেলগাড়িতে না উঠলে তা ঠিক বোঝা যাবে না।
নমুনা-১ থেকে আলাদা অর্থযুক্ত শব্দগুলো নিচে লেখা হলো। (মূল বইয়ের ৩১ নম্বর পৃষ্ঠা)
রেলগাড়ি, রেললাইন, যানবাহন, জনপ্রিয়, ছেলেবুড়ো, কুঁড়েঘর, ধানক্ষেত, ডিম সিদ্ধ, ঝালমুড়ি, চিড়াভাজা, একতারা, পলিস্নগীতি।
সমাস কী?
সমাস শব্দগঠনের অন্যতম একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় নতুন শব্দ তৈরি করা যায়। যেসব শব্দের দুটো অংশই অর্থযুক্ত তাকে সমাস-সাধিত শব্দ বলে। যেমন-
ভাই + বোন = ভাই-বোন
ভালো + মন্দ = ভালোমন্দ
টাক + মাথা = টাকমাথা
হাত + ঘড়ি = হাতঘড়ি
আসা + যাওয়া = আসা-যাওয়া
আলু + সিদ্ধ = আলুসিদ্ধ
চৌ+ রাস্তা = চৌরাস্তা
কাজল + কালো = কাজলকালো
সমাস-সাধিত শব্দ তৈরি করি
ফুল + বাগান = ফুলবাগান
ফল + গাছ = ফলগাছ
গোলাপ + জল = গোলাপজল
জীব + বিজ্ঞান = জীববিজ্ঞান
প্রাণী + জগৎ = প্রাণীজগৎ
বই + খাতা = বইখাতা
পাঠ্য + পুস্তক = পাঠ্যপুস্তক
ঠেলা + গাড়ি = ঠেলাগাড়ি
আলু + ভর্তা = আলুভর্তা
অনুচ্ছেদ লিখে সমাস-সাধিত শব্দ খুঁজি
একদেশে ছিল এক রাজা। তার নাম বাহুবলী। তিনি ছিলেন শান্তিপ্রিয় এবং প্রজা দরদি একজন রাজা। তিনি রাজ্যের প্রজাদের অনেক ভালোবাসতেন। প্রজাদের যেকোন সমস্যা তিনি রাজদরবারে সমাধান করতেন। মানুষের উপকারকে তিনি দেশসেবার মতো মহৎ কাজ বলে মনে করতেন। তিনি যেমনই ছিলেন দানবীর, তেমনই ছিলেন মহানুভব। রাজ্যাভিষেকের অল্প সময়ের মধ্যেই তার খ্যাতি রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজারাও তাদের মহারাজকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। যার কারণে রাজ্যের যেকোন প্রয়োজনে রাজা বাহুবলী প্রজাদের পাশে পেতেন। একবার রাজ্যে বহিঃশত্রম্নর আক্রমণ হলে রাজা এবং তার প্রজারা মিলে দেশরক্ষায় শত্রম্নর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রচুর প্রাণহানি এবং সম্পদহানী ঘটে। কিন্তু তারপরেও রাজা বাহুবলীর যোগ্য নেতৃত্ব এবং প্রজাদের অসীম সাহসিকতায় তারা জয়লাভ করেন। ফলে তাদের রাজ্য শত্রম্নমুক্ত হয়।
উপরে উলিস্নখিত অনুচ্ছেদ সমাস-সাধিত শব্দ
শান্তি + প্রিয় = শান্তিপ্রিয়
প্রজা + দরদী = প্রজাদরদী
রাজ + দরবার = রাজদরবার
দেশ + সেবা = দেশসেবা
দান + বীর = দানবীর
রাজ্য + অভিষেক = রাজ্যাভিষেক
রাজ্য + জুড়ে = রাজ্যজুড়ে
মহা + রাজ = মহারাজ
বহি + শত্রু = বহিঃশত্রম্ন
দেশ + রক্ষা = দেশরক্ষা
ক্ষয় + ক্ষতি = ক্ষয়ক্ষতি
প্রাণ + হানি = প্রাণহানি
সম্পদ + হানী = সম্পদহানী
জয় + লাভ = জয়লাভ
শত্রু + মুক্ত = শত্রম্নমুক্ত
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়