সপ্তম অধ্যায়
অবাধ অভিবাসন : নিজের ইচ্ছায় বাসস্থান ত্যাগ করে আপন পছন্দমতো স্থানে বসবাস করাকে অবাধ অভিবাসন বলে।
বলপূর্বক অভিবাসন : প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক চাপের মুখে কিংবা পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টির ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে যে অভিগমন করে তাকে বলপূর্বক অভিবাসন বলে।
উদ্বাস্তু ও শরণার্থী : বলপূর্বক অভিবাসনের ফলে যেসব ব্যক্তি কোনো স্থানে আগমন করে ও স্থায়ীভাবে আবাস স্থাপন করে তাদের বলে উদ্বাস্তু। যারা সাময়িকভাবে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সুযোগমতো স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় থাকে তাদের বলে শরণার্থী।
অভিবাসনের কারণ : যেসব কারণে মানুষকে পুরাতন বাসস্থান পরিত্যাগ করে অন্যস্থানে যেতে বাধ্য হয় সেগুলোকে উৎসস্থানের ধাক্কা বা বিকর্ষণমূলক কারণ বলে। যেসব কারণ নতুন কোনো স্থানে বসতি স্থাপনের জন্য মানুষকে উৎসাহিত বা প্ররোচিত করে সেগুলোকে গন্তব্যস্থলে টান বা আকর্ষণমূলক কারণ বলে।
অভিবাসনের ফলাফল : অভিবাসনের স্বাভাবিক ফলাফল হচ্ছে জনসংখ্যা বণ্টন বা অবস্থানিক পরিবর্তন। অবস্থানগত পরিবর্তন ছাড়াও অভিবাসনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জনবৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন হতে পারে।
প্রাকৃতিক সম্পদের উপর জনসংখ্যার প্রভাব : সম্পদ ও জনসংখ্যা জাতীয় উন্নয়নের দুই মৌলিক উপাদান। এই সম্পদ ও জনসংখ্যার মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম বা বেশি হলে উভয় ক্ষেত্রেই জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষিযোগ্য ভূমির পরিমাণ জনসংখ্যার মতোই অসমানভাবে বণ্টিত। কোথাও কৃষিযোগ্য ভূমির প্রাচুর্য, কোথাও জনসংখ্যার তুলনায় এর পরিমাণ কম।
কাম্য জনসংখ্যা : কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির অনুপাতে ভারসাম্য থাকলেই তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে।
অতি জনাকীর্ণতা : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ অল্প থাকলে তাকে অতি জনাকীর্ণতা বলে।
জনস্বল্পতা : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ বেশি থাকলেও জনসংখ্যার স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সম্পদ এবং ভূমি ব্যবহার না করা গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই অবস্থানকে জনস্বল্পতা বলে।
জনসংখ্যার বণ্টন : স্থানভেদে জনসংখ্যার অবস্থানগত বিস্তৃতি বা বিন্যাস হচ্ছে জনসংখ্যার বণ্টন। ভূপৃষ্ঠের ৫০-৬০ শতাংশের মতো এলাকায় মাত্র শতকরা প্রায় ৫ ভাগ লোকের বসতি। স্থলভাগের মাত্র শতকরা ৫ ভাগ এলাকায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বসবাস।
জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বণ্টনের প্রভাবক : কতকগুলো প্রাকৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় রয়েছে যা জনসংখ্যার ঘনত্ব কম বা বেশি হতে সাহায্যে করে। এই বিষয়গুলোকে জনসংখ্যার ঘনত্ব বা বণ্টনের প্রভাবক বলে। প্রথমত একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. প্রাকৃতিক প্রভাবক ও ২. অপ্রাকৃতিক প্রভাবক।
প্রাকৃতিক প্রভাবক : ১. ভূপ্রকৃতি, ২. জলবায়ু, ৩. মৃত্তিকা, ৪. পানি ও ৫. খনিজ।
অপ্রাকৃতিক প্রভাবক : ১. সামাজিক, ২. সাংস্কৃতিক ও ৩. অর্থনৈতিক।
বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার ঘনত্ব : আদমশুমারি রিপোর্ট মার্চ, ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখা প্রায় ১৪.৯৭ কোটি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্ব ১,০১৫ জন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : বাংলাদেশের জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রম্নতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.১৭%, ২০০১ সালে ১.৪৮% এবং ২০১১ সালে ১.৩৭%।
জনসংখ্যা পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট সমস্যা : মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে- ১. ভূমি খন্ডবিখন্ড হয়, ২. বাসস্থান চাহিদা বাড়ে, ৩. মাথাপিছু আয় হ্রাস পায়, ৪. বন নিধন হয় ও পাহাড় কাটা বাড়ে, ৫. কর্মহীন লোকের সংখ্যা বাড়ে, ৬. মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়, ৭. শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়।
জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় : ১. জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সফল প্রয়োগ, ২. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বন্ধ করা, ৩. ধর্মান্ধতা, বংশ রক্ষা প্রভৃতি কুসংস্কার দূর করা, ৪. নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, ৫. চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা।
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
১. সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা দেখা দেয়। ফলে নিজেদের জীবন রক্ষার্থে রোহিঙ্গা মুসলমানরা কক্সবাজারের উখিয়াতে আশ্রয় নেয়।
ক. অভিবাসন কী?
খ. শরণার্থী বলতে কী বোঝায়?
গ. কক্সবাজারের উখিয়াতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় গ্রহণ কোন ধরনের অভিগমন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রোহিঙ্গাদের অভিগমন ওই অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে-বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. নিজের বাসস্থান ছেড়ে অন্যস্থানে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করাকে অভিবাসন বলা হয়।
খ. গৃহযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক বৈষম্য বা যুদ্ধের কারণে অনেক সময় মানুষের বলপূর্বক অভিগমন হতে হয়। বলপূর্বক অভিগমনের ফলে যারা সাময়িকভাবে অন্যত্র আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সুযোগমতো স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় থাকে তাদের বলা হয় শরণার্থী। যেমন :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ দেশের লাখ লাখ মানুষ ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং যুদ্ধ শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করে। ভারতে অবস্থানকালে এদের শরণার্থী বলা হতো।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়