বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

অধ্যায়-১১

বাংলাদেশের সম্পদ ও শিল্প

অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি

কৃষিপণ্য : কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাভজনক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষিব্যবস্থা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১২-১৩ অর্থবছরের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ শতাংশ। এদেশের শ্রমশক্তির মোট ৪৭.৫০ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত।

র. বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের মধ্যে ধান প্রধান। এদেশে আউশ, আমন, বোরো প্রভৃতি ধরনের ধান চাষ হয়। বাংলাদেশের সকল জেলায় ধান উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের উর্বর দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য বিশেষ সহায়ক। গম চাষের জন্য ১৬ক্ক থেকে ২২ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। উত্তরাঞ্চল গম চাষের জন্য ভালো।

রর. যেসব ফসল সরাসরি বিক্রির উদ্দেশ্যে উৎপাদিত হয় তাকে অর্থকরী ফসল বলে। পাট, ইক্ষু, চা বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল।

বাংলাদেশের বনাঞ্চল : কোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মোট ভূমির ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১২-১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ। বাংলাদেশের বনভূমিকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।

১. বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার অধিক বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং কম বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে পাতাঝরা গাছের বনভূমি দেখা যায়।

২. বাংলাদেশের পস্নাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহে ক্রান্তীয় পাতাঝরা গাছের বনভূমি দেখা যায়। শীতকালে এ বনভূমির বৃক্ষের পাতা ঝরে যায় এবং গ্রীষ্মকালে আবার নতুন পাতা গজায়।

৩. খুলনা বিভাগের ৬,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্রোতজ বনভূমি বা সুন্দরবন বিস্তৃত। সমুদ্রের জোয়ারভাটা ও লোনা পানি এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য এ অঞ্চল বৃক্ষসমৃদ্ধ।

বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ : প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে খনিজ সম্পদ হিসেবে খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও কঠিন শিলা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের এই খনিজ সম্পদসমূহের অনুসন্ধান, উৎপাদন এবং বিতরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রধান শিল্প : কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত হচ্ছে শিল্পায়ন। আর্থসামাজিক ও দারিদ্র্যবিমোচনে শিল্প খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৪ অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান হলো শতকরা ২৯ ভাগ।

বাংলাদেশের প্রধান শিল্পগুলো হলো :

পাট শিল্প : বাংলাদেশে কৃষিনির্ভর শিল্পগুলোর মধ্যে পাট শিল্প অন্যতম। এদেশে পর্যাপ্ত ও উৎকৃষ্ট পাট চাষ হওয়ায় পাট শিল্পের উন্নতিতে সহায়তা করছে।

কার্পাস বয়নশিল্প : কার্পাস বয়নশিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তুলা ও সুতা দিয়ে বাংলাদেশের সুতা ও বস্ত্রকলগুলো পরিচালিত হয়।

সার শিল্প : বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭টি সার কারখানা থেকে সার উৎপাদন হচ্ছে।

তৈরি পোশাক শিল্প : বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প বিকাশের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। ২০১২-১৩ সালে এ শিল্পে বাংলাদেশ ৮০৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে, যা মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৪১.১০ ভাগ।হু বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প : পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্র সৈকত, ঘন অরণ্য, পাহাড়ি এলাকা প্রকৃতিগতভাবেই এখানে বিদ্যমান। বাংলাদেশের পর্যটকদের ভ্রমণ কেন্দ্রগুলোর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য এ দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এ দেশে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় সমুদ্রসৈকত, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, দ্বীপ, হ্রদ, নদী ও পালতোলা নৌকার অনুপম দৃশ্যাবলি, সবুজ-শ্যামলিমা ঘেরা পাহাড়ি ভূমি রয়েছে, যা দেখলে মন ভরে যায়।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব : বাংলাদেশ পর্যটনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ২০০৫ সালে প্রণীত জাতীয় শিল্পনীতিতে একে অগ্রাধিকার শিল্প হিসেবে চি?িহ্নত করা হয়। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে আয়, কর্মসংস্থান ও জাতীয় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশে ২০০৬ সালে বিদেশি পর্যটক এসেছে প্রায় ২,০০,৩১১ জন এবং ২০০৯ সালে ২,৬৭,১০৭ জন। এতে বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আয় হয়েছে ২০০৬ সালে ৫৫৩০.৬০ মিলিয়ন টাকা এবং ২০০৯ সালে ৫৭৬২.২৪ মিলিয়ন টাকা।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে-কৃষি।

বাংলাদেশের কৃষিজ ফসল ২ প্রকার- খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল।

বাংলাদেশে- আউশ, আমন, বোরো প্রভৃতি ধরনের ধান চাষ হয়।

বাংলাদেশে বৃষ্টিহীন শীত মৌসুমে- পানি সেচের মাধ্যমে গম চাষ ভালো হয়।

বাংলাদেশের উর্বর দোআঁশ মাটি- গম চাষের জন্য সহায়ক।

বাংলাদেশে দু'ধরনের পাট চাষ হয়- দেশি এবং তোষা।

ইক্ষু চাষের জন্য প্রয়োজন- সমতলভূমি।

চা চাষের জন্য প্রয়োজন- উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর।

জমিতে একই শস্য চাষ- মাটির পুষ্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বনভূমি থেকে যে সম্পদ পাওয়া যায় তাকে বলে- বনজ সম্পদ।

বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ- শতকরা ১৭ ভাগ।

জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণের তারতম্যের কারণে- বাংলাদেশের বনভূমি ৩ ভাগে বিভক্ত।

পাহাড়ের অধিক বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে দেখা যায়- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ গাছের বনভূমি।

সমুদ্রের জোয়ার ভাটা ও লোনা পানি এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য স্রোতজ বনভূমি বৃক্ষ সমৃদ্ধ।

পারস্পরিক ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মোট ভূমির-২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন।

পাতাঝরা গাছের বনভূমি দেখা যায়- কম বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে।

শীতকালে বৃক্ষের পাতা ঝরে যায়- ক্রান্তীয় পাতাঝরা গাছের বনভূমিতে।

স্রোতজ বনভূমি- খুলনা বিভাগের ৬,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে