ঘ. দৃশ্যকল্প -১ ও দৃশ্যকল্প -২ এর মধ্যে দৃশ্যকল্প-২ এর বৃহৎ শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অধিক ভূমিকা রাখে। দৃশ্যকল্প -১ ও ক্ষুদ্রশিল্প এবং দৃশ্যকল্প-২ ও বৃহৎ শিল্প নির্দেশিত হয়েছে। দৃশ্যকল্প -২ এ দেখা যায় মামুন সাহেব ৬ কোটি টাকা মূলধনে সাভারে একটি পোশাক শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পাঠ্যপুস্তকে উলিস্নখিত হয়েছে বৃহৎ শিল্প সাধারণত শহরের কাছাকাছি গড়ে ওঠে এবং এতে প্রচুর শ্রমিক ও মূলধনের প্রয়োজন হয়। এ আলোকে দৃশ্যকল্প-২ এর শিল্পটি বৃহৎ শিল্পের অন্তর্গত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৃহৎ শিল্পের ভূমিকা ব্যাপক। এই শিল্পের ব্যাপক অবকাঠামো, প্রচুর শ্রমিক ও বিশাল মূলধনের প্রয়োজন হয়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বৈদেশিক মুদ্রার আয় এবং হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে বৃহৎ শিল্পের মধ্য দিয়ে। সরকার ও দেশের উন্নয়নে রপ্তানিমুখী বৃহৎ শিল্পের ওপর জোর দিচ্ছে। উদ্দীপকেও দেখা যায় দৃশ্যকল্প-২ এ মামুন সাহেব তার পোশাক শিল্প কারখানার উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেন। অন্যদিকে দৃশ্যকল্প-১ এর ক্ষুদ্র শিল্প বেকারত্ব দূরীকরণে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও জাতীয় অর্থনীতিতে অপেক্ষাকৃত নগন্য ভূমিকা পালন করে। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর মধ্যে অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্পের মধ্যে বৃহৎ শিল্পই অধিক ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন: নিচের ছকটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. বাংলাদেশে কী কী খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়?
খ. বাংলাদেশে ধান চাষের উপযোগী অবস্থা ব্যাখ্যা কর।
গ. বাংলাদেশের একটি মানচিত্র অঙ্কন করে অ, ই ও ঈ অর্থকরী ফসল কোন অঞ্চলে ভালো জন্মে তা চিহ্নিত কর।
ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসলটির উৎপাদন অঞ্চল ও চাষের উপযোগী অবস্থা বর্ণনা কর।
উত্তর:
ক. বাংলাদেশে ধান, গম, ডাল, তেলবীজ, আলু, ভুট্টা, সবজি, ফলমূল ইত্যাদি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়।
খ. নদী অববাহিকার পলিমাটি ধান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এজন্য বাংলাদেশের সর্বত্রই ধান জন্মে। ধান চাষের জন্য ১৬ক্ক থেকে ৩০ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। ১০০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় ধানের ফলন ভালো হয়। বাংলাদেশে প্রায় সারাবছরই এরূপ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত বিরাজ করায় ধান চাষের উপযোগী অবস্থা বিদ্যমান।
গ. নিচে বাংলাদেশের একটি মানচিত্র অঙ্কন করে ছকের অ, ই, ঈ তথা পাট, ইক্ষু ও চা উৎপাদনকারী অঞ্চলসমূহ চিহ্নিত করা হলো :
চিত্র : বাংলাদেশের পাট, ইক্ষু ও চা উৎপাদনকারী অঞ্চলসমূহ
ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হলো পাট যা অ দ্বারা চিহ্নিত। রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কুমিলস্না, যশোর, ঢাকা, কুষ্টিয়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা প্রভৃতি জেলায় পাট উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশে সাধারণত দুই শ্রেণির পাট চাষ হয়, দেশি এবং তোষা পাট। পাট উষ্ণ অঞ্চলের ফসল। পাট চাষের জন্য অধিক তাপমাত্রা (২০ক্ক থেকে ৩৫ক্ক সেলসিয়াস) এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের (১৫০ থেকে ২৫০ সেন্টিমিটার) প্রয়োজন হয়। নদীর অববাহিকার পলিযুক্ত দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বিশেষ সহায়ক।
প্রশ্ন: দুই বন্ধু বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ নিয়ে আলোচনা করছে-
জামাল : প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে খনিজ সম্পদ হিসেবে তেল-গ্যাস, কয়লা ও কঠিন শিলা গুরুত্বপূর্ণ।
একরাম : দেশের এই খনিজ সম্পদসমূহের অনুসন্ধান, উৎপাদন এবং বিতরণের মধ্যে সমন্বয় আনয়ন করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
ক. কত সালে সিলেট জেলার হরিপুরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সপ্তম কূপে তেল পাওয়া গেছে?
খ. এককভাবে জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কিভাবে হ্রাস করা যায়?
গ. মানচিত্রে উদ্দীপকের খনিজ সম্পদসমূহ চিহ্নিত কর।
ঘ. জামালের উলিস্নখিত খনিজ সম্পদগুলোর ব্যবহার ও অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
ক. ১৯৮৬ সালে সিলেট জেলার হরিপুরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সপ্তম কূপে তেল পাওয়া গেছে।
খ. জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে খনিজ তেলও ব্যবহার করা যায়। খনিজ তেল পরিশোধিত করে গ্যাসোলিন, ডিজেল, গ্যাস, কেরোসিন, পিচ্ছিলকারক তেল, প্যারাফিন প্রভৃতি পাওয়া যায়। রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, জাহাজ, বিমান ইত্যাদি চালাতে পেট্রল ও ডিজেল ব্যবহার করা যায়। তেল কেন্দ্রগুলো থেকে পর্যাপ্ত তেল উত্তোলনের মাধ্যমে এককভাবে জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়।
গ. উদ্দীপকে জামাল ও একরামের কথপোকথনে খনিজ তেল, গ্যাস, কয়লা ও কঠিন শিলার উলেস্নখ রয়েছে। মানচিত্রে উক্ত খনিজ সম্পদগুলো চি?িহ্নত করা হলো :
ঘ. উদ্দীপকে জামালের উলিস্নখিত খনিজ সম্পদগুলো হলো তেল, গ্যাস, কয়লা ও কঠিনশিলা। খনিজসম্পদগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. তেল : বাংলাদেশের সিলেট জেলার হরিপুরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সপ্তম কূপে তেল পাওয়া গেছে। এ কূপ থেকে দৈনিক প্রায় ৬০০ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল তোলা হচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলার বরমচালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় তেলক্ষেত্র অবস্থিত। এ থেকে দৈনিক প্রায় ১,২০০ ব্যারেল তেল উত্তোলিত হয়।
২. প্রাকৃতিক গ্যাস : বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। দেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের প্রায় ৭৩ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস পূরণ করে থাকে। বর্তমানে ১৯টি গ্যাসক্ষেত্রের ৮৩টি কূপ থেকে গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এর অধিকাংশই দেশের উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত।
৩. কয়লা : কলকারখানা, রেলগাড়ি, জাহাজ প্রভৃতি চালানোর জন্য কয়লা ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি হিসেবেও কয়লা ব্যবহৃত হয়। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আবিষ্কৃত মোট ৫টি কয়লাক্ষেত্রে মজুত প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন টন।
৪. কঠিন শিলা : রেলপথ, রাস্তাঘাট, গৃহ, সেতু, বাঁধ নির্মাণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কাজে কঠিন শিলা ব্যবহৃত হয়। রংপুরের রানীপুকুর ও শ্যামপুর এবং দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়