মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

আমার মা আমার অক্সিজেন

মা। ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দিয়ে যেমন শব্দটির পরিপূর্ণতা প্রকাশ করা যায় না, তেমনই মায়ের মমত্ব ও ভালোবাসার পরিমাপ কিংবা পরিধি নির্ণয় করাও সম্ভব নয়। অনুভব-অনুভূতি কিংবা সংকোচ-অসংকোচ প্রকাশের জায়গা তো ওই একটাই। আজ বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে উদযাপিত হয়ে আসছে প্রতি বছর। যদিও এবার করোনার কারণে মা দিবস নিয়ে আলাদা কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না, তবে মা-সন্তানের নির্ভেজাল ও নিখুঁত ভালোবাসায় কোনো বাধা হতে পারছে না মহামারি করোনা। আজকের মা দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদের প্রকাশ করা নিজেদের মায়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও আবেগ-অনুভূতির কথা জেনেছেন জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ০৯ মে ২০২১, ০০:০০
আমার মা আমার অক্সিজেন
আমার মা আমার অক্সিজেন

মমতাজ বেগম

উজালা বেগম আমার মার নাম। সারাটা জীবনই আমার মা তার সন্তানের জন্যই কষ্ট করে গেলেন। আমার আজকের মমতাজ হয়ে ওঠা, আমার আজকের সংসদ সদস্য হয়ে ওঠা সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠার নেপথ্যে যে মানুষটির অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই তিনি আমার মহান হৃদয়ের অধিকারী আমার মা। মা সব সময়ই বলতেন, আশা ছেড়ো না-জীবনে সুন্দর সময় একদিন না একদিন আসবেই। মায়েদের স্বপ্ন যে অপূরণ রাখেন না আল্লাহ; আমাকে দিয়েই যেন আল্লাহ তা আবারও প্রমাণ করে দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা যে, তিনি এমন মায়ের গর্ভে আমাকে জন্ম দিয়েছেন। এখন শুধু মাকে ঘিরে একটাই চাওয়া, আমার মা যেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন, আমিসহ আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে তিনি যেন হাসি-আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারেন বাকিটা জীবন।

কনকচাঁপা

মা, একটি অনুভব, দৃঢ় একটি বন্ধন। এটা তো বিধাতার বড় নেয়ামত যা আসলে বাতাসে অক্সিজেনের মতো। দেখা না গেলেও উপস্থিতি টের পাওয়া যায় দমে দমে। আমার মা আমার অক্সিজেন, আমার ডিকশনারি, আমার কাঁটাতারের বেড়া, আমার বেলী ফুলের বাগান, আমার ঘড়ি, আমার ক্যালেন্ডার, আমার দাড়িপাল্লা এবং অনুভবের বিশ্বকোষ। মায়ের জন্য আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ আলহামদুলিল্লাহ। আমার মায়ের বয়স হয়েছে ৭৪। ধর্ম-কর্মের পাশাপাশি এখনো তিনি নিজের কাজ নিজে করেন। তিনি আমার কাছে থাকলে আমার ঘড়ি দেখতে হয় না, আমি বুঝি আম্মা গোসলে যাচ্ছেন মানে সাড়ে এগারোটা অথবা শোবার আয়োজন করছেন মানে রাত দশটা। কিন্তু মাঝরাতে কখন ওঠেন, তাহাজ্জুতের জন্য কখন জাগেন, সুবহে সাদিক-এ দাঁত মেসওয়াক করেন তা আমি টের পাই না, তবে আমি এখন আমার মায়ের মতো সাধনা করতে চাই। নিজেকে তার পথের অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

অরুণা বিশ^াস মা হচ্ছেন সেই একজন মানুষ; যার তুলনা পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই। মায়ের সঙ্গে কারো তুলনা চলে না। শুধু একজনের সাথেই তুলনা চলে তিনি হলেন ঈশ^র। মা হচ্ছেন আমার সেই ঈশ^র। মায়ের জন্য অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে। আমি আমার মাকে বিশ^াস করেই পৃথিবীতে বেঁচে আছি, বেঁচে থাকব। এই সুন্দর পৃথিবী আমাকে আমার মাই দেখিয়েছেন। তাই মাকে ছাড়া আমি একেবারেই অচল। আমার গরবিনী মায়ের জন্য সবার কাছে আশীর্বাদ কামনা করছি যেন মা সব সময়ই সুস্থ থাকেন, ভালো থাকেন।

মৌসুমী প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মের পর থেকেই অনেক আদর, ¯েœহ মায়া-মমতায় আমি বেড়ে উঠেছি। মায়ের সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকেই আমার সখ্য। মায়ের আদর, ¯েœহ-ভালোবাসায় প্রত্যেক সন্তানই বেড়ে ওঠে। আমার কাছে মনে হয় আমার মা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন। তাই কখনোই আমার মা আমাকে চোখের আড়াল হতে দিতেন না। আমি যখন মিডিয়ার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করলাম এবং পরর্তীতে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলাম, আমার প্রয়াত বাবাই প্রতিটি মুহূর্তে আমার পাশে থেকে থেকে আমাকে উৎসাহ দিতেন। এটা সত্য যে, আমার বাবার কারণেই কিন্তু অভিনয়ে নিজেকে আমি এতটা ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমি বেড়ে উঠেছি, সেই ভালোবাসার মায়াজালেই। আমার আম্মুকে সারাটা জীবন আমি আমার কাছে রাখতে চাই। কিন্তু আম্মু দীর্ঘদিন দেশে নেই। তাকে কাছে থেকে স্পর্শ করতে পারছি না, অনুভব করতে পারছি না, এটাও একটা কষ্টের বিষয়। তারপরও আম্মু যেখানে আছেন যেন সুস্থ থাকেন, ভালো থাকেন-এই দোয়া করি।

ফেরদৌস কুমিল্লার দাউদকান্দির রাজপুরে আমার আম্মার জন্ম। আমাদের পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আমার অবস্থান পঞ্চম। আমার অভিনয় জীবনের চলার পথে আমার আম্মুর অনুপ্রেরণা, নির্দেশনা কিংবা আদেশ যাই বলি না কেন আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে চলেছি। মায়ের আদেশ মেনে চলেছি বলেই আজ জীবন আমার আলহামদুলিল্লাহ পরিপূর্ণ। আমার মনে আছে আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালে যখন ‘গরবিনী মা’ সম্মাননা পদক চালু হয় তখন আমার মা’ই চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে প্রথম ‘গরবিনী মা’ সম্মাননা পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। এজন্য অবশ্য আমি এখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তীকে। আম্মা এখনো আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। পৃথিবীর সব মায়েরা ভালো থাকুক।

পূর্ণিমা মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়ায় আমি আজকের পূর্ণিমা। তাই মায়ের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমার মাকে সব সময় ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন। সেই মায়েরই মেয়ে আমি নিজেও একজন মা। তাই মায়ের কষ্টটা এখন খুউব ভালোভাবে বুঝতে পারি। মায়ের কোনো তুলনা হয় না। না জেনে না বুঝে মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আর কখনো মাকে কষ্ট দিতে চাই না। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আর আমার বাবাকে যেন আল্লাহ বেহেস্তবাসী করেন সেই দোয়াও চাই সবার কাছে।

আঁখি আলমগীর আমি খুব ভাগ্যবান একজন সন্তান। আমার বাবার কারণে আমাদের বাসায় অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসতেন। আবার আমার মায়ের কারণে অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল বাসায়। আমার সংগীত জীবনের পথচলায় আমার বাবা-মা সব সময়ই আমার পাশে ছিলেন এবং এখনো আছেন। আমার মায়ের লেখা অনেক গান আছে। মায়ের লেখা গান নিয়ে আমার গাওয়া এবং বিশিষ্ট শিল্পী যারা গেয়েছেন সেই হিট গানগুলো নিয়ে একটি অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করছি। এটা আমার মায়ের প্রতি, মায়ের লেখা গানের প্রতি ভালো লাগা ভালোবাসা থেকেই করব। কারণ এখন পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম কেউ শুনেন না। কিন্তু আমার মায়ের গানগুলো সংরক্ষণ করার জন্যই আমি তা করব। মা যে কতটা আগলে রেখে আদর-ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছেন তা নিজের সন্তানের প্রতি সেই ভালোবাসার অনুভব থেকে উপলব্ধি করি প্রতি মুহূর্তে।

চঞ্চল চৌধুরী আমাদের জীবনজুড়েই রয়েছেন মা। আমার মা নমিতা চৌধুরী। আমার প্রতি আমার মা তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেই আজ আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি। আমিও আমার মাই শুধু নয় আমার বাবার প্রতিও দায়িত্ব পালনের সর্বাত্মক চেষ্টা করি। আমার ভালো লাগার বিষয় হলো আমার জন্য আমার মা ২০১৭ সালে ‘গরবিনী মা’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন। সে বছরের মা দিবসটি ছিল আমার জন্য অনেক বেশি বিশেষ। বিরাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে মাকে সম্মাননা জানানো হয়েছিল। আমার কারণে মায়ের সেই প্রাপ্তির মধ্যে যে সুখ আমি অনুভব করেছি তা আমাকে শান্তি দিয়েছিল। প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। বিশ^ মা দিবসে সকল মায়ের প্রতি রইল শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।

তারিন জাহান

আমার আম্মুর নাম তাহমিনা বেগম, আমার জীবনের আদর্শ। আমার শক্তি, আমার অনুপ্রেরণা, আমার সবকিছুই আমার মাকে ঘিরে। মা, মাটি দেশÑ এই তিনটি বিষয়ে মানুষের জীবনে অবদান অনস্বীকার্য। মা শব্দটি তাবৎ পৃথিবী সম্পর্কিত একটি শ্রদ্ধার শব্দ। এই পৃথিবীর আলো-বাতাস এই যে নিঃশ^াস নিচ্ছি তা মায়ের ত্যাগের কারণেই জন্মের শুরু থেকেই নিতে পারছি। মায়ের যেমন বিকল্প হয় না, ঠিক তেমনি মায়ের কোনো তুলনা হয় না। আমার জীবনে মায়ের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। ছোটবেলা থেকে আমার বেড়ে ওঠা, আমার শিক্ষা, আমার নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠা, সংগীতশিল্পী হয়ে ওঠা, সর্বোপরি একজন অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে আমার মায়েরই অবদান সবচেয়ে বেশি। মায়ের কাছেই আমার গানে হাতেখড়ি। অভিনয় জীবনের শুরুতে মা’ই ছিলেন আমার কোআর্টিস্ট। যখন কোনো স্ক্রিপ্ট হাতে পেতাম তখন মাই হতেন আমার কোআর্টিস্ট। অভিনয়ের চর্চা করতাম এভাবেই। আর এভাবেই আমার অভিনেত্রী হয়ে ওঠা।

অপূর্ব মাকে কতটা ভালোবাসি- সেটা বিশেষ আয়োজন করে বলা হয়ে ওঠে না। বিশেষ এই দিনেও হয়তো আম্মুকে বলা হয়ে উঠবে না যে তাকে কতটা ভালোবাসি। তবে আমার জন্য আম্মু ‘গরবিনী মা সম্মাননা’ পেয়েছিলেন ২০১৬ সালে। সেটাও ছিল আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আমার খুউব মনে পড়ে আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার টিউশনির টাকা দিয়ে আম্মুকে ইমিটিশনের গহনা কিনে দিয়েছিলাম। সেটা পেয়ে আম্মুর উচ্ছ্বসিত সেই মুখটি এখনো আমার চোখে ভাসে। আম্মুর শতভাগ উৎসাহে অনুপ্রেরণায় আমি আজকের অপূর্ব। এটা সত্য যে, আমার সৌভাগ্য যে আমি আমার আম্মুর পছন্দের স্ক্রিপ্টে অভিনয় করতে পারি। আমার আম্মুর জন্য সবাই দোয়া করবেন।

জাকিয়া বারী মম আমার আব্বু আম্মুকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। আর কোনোদিন আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে চাই না। কোনোভাবেই না, কোনো কারণেই না। আমার জীবনে একটিই প্রধান চাওয়া আমার শেষ নিঃশ^াস পর্যন্ত তারা যেন আমার কাছ থেকে আর কোনো কষ্ট না পান। তাদের মুখে যেন সারাক্ষণ হাসিই লেগে থাকে। আমার জীবনে আমি যা কিছুই ভালো করেছি তার সবই আমার আম্মা-আব্বার অবদান। আর যা খারাপ করেছি সবই আমার। আম্মু আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি আমার আদর্শ। আমার আম্মু একজন অধ্যাপক। একজন মানুষ এতো পরিশ্রমী হয় তা আম্মুকে না দেখলে বিশ^াস করা সম্ভব না। আব্বু আমাদের পরিবারের স্তম্ভ। আমার ছোট ভাই মনন ও তার স্ত্রী মৌমিতার মতো আমার দু’জন ভালো বন্ধু আছে একই পরিবারে, এটাও আমার জন্য আশীর্বাদ।

শবনম বুবলী মায়ের কথা বলতে গেলেই সবার আগে আমার নানুর কথা ভীষণ মনে পড়ে। বিশেষত রোজার মাস এলে নানুর কথা যেন একটু বেশিই মনে পড়ে। কারণ নানুর সঙ্গে থেকে থেকেই আমি নামাজ পড়া শিখেছি, রোজা রাখতে শিখেছি। সেই নানু যখন আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন তখন আমার আম্মুকে দেখেছি তিনি কতটা কষ্ট পেয়েছেন। সত্যি বলতে কী মা এমন একজন মানুষ প্রতিটি মানুষ তার মনের ভেতরে শ্রদ্ধার স্থানে রেখে দেন। নানু চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু নানু আমার মায়ের মাঝে, আমার মাঝে বেঁচে আছেন। আমরা যখন শুধু তিন বোন ছিলাম, তখন সবার ছোট বলে আম্মু আমাকে মোহাম্মদ বলে ডাকতেন। আমাকে ছেলেদের পোশাক পরিয়ে রাখতেন। কিন্তু যখন আমি একটু বড় হতে লাগলাম, যখন বুঝতে শিখেছি যে মোহাম্মদ ছেলেদের নাম তখন আমার খুউব অভিমান হতো, কেন আমাকে ছেলেদের নামে ডাকা হবে। যাই হোক পরবর্তীতে আম্মু আমাকে ভুবন বলে ডাকতে শুরু করেন। সেই যে আমাকে আম্মু ভুবন বলে ডাকতে শুরু করলেন, এখনো ভুবন বলেই ডাকেন। আমার আজকের অবস্থানের পেছনে আম্মুরই অবদান সবচেয়ে বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে