জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?
না, না, একদমই কোনো পরিকল্পনা নেই। এই দিনটা কখনও সে রকম বিশেষভাবে পালন করি না। আমি সব সময়ই পারিবারিক আবহে নিভৃতে জন্মদিন পালন করার পক্ষপাতী। পরিবারের পাঁচজন মিলেই একসঙ্গে কোথাও খাওয়া-দাওয়া করি। এটাই আমাদের জন্মদিন উদযাপন। এছাড়া তেমন কিছু করা হয় না। কাছের মানুষ, শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি আমার দলের ছেলেমেয়েরা আসে। এটাই আনন্দের।
জন্মদিনে আলাদা কোনো অনুভূতি অনুভব করেন?
প্রতিবারই নিজের জন্মদিন এলে একটা কথাই সবচেয়ে বেশি মনে হয়, সেটা হলো- জীবন থেকে আরও একটি বছর ঝরে পড়ল। মনে হয় ধীরে ধীরে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছি। নতুন নতুন কিছু করার সাধ জাগে। এ কাজগুলো আর করব না, সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাব- এ রকম নতুন অনেক প্রতিজ্ঞা করি। কিন্তু সেসব প্রতিজ্ঞা রাখতে পারি বলে মনে হয় না সব সময়। ৮১ বছর আমার জীবনে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। আমি পরিপূর্ণ জীবনযাপন করেছি। কিছু স্বপ্নপূরণ এখনও বাকি। আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার ইচ্ছে আছে। নতুন আশায় বুক বেঁধে ৮২-এর দিকে যাত্রা করতে চাই।
সেই আশা কিংবা স্বপ্নের কথাগুলো যদি বলতেন...
ওই যে বললাম, সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাব- এ রকম নতুন অনেক প্রতিজ্ঞা করি। কিন্তু সেসব প্রতিজ্ঞা রাখতে পারি বলে মনে হয় না সব সময়। এখন লেখালেখি করার খুব ঝোঁক ওঠে মাথায়। ইচ্ছে আছে এখন লেখালেখিতে মনোনিবেশ করব। জানি না, সেই সুযোগ পাব কিনা।
তাহলে বর্তমান সময় কীভাবে কাটছে?
বেশিরভাগ সময়ই বাসায় কাটে। বিটিভিতে প্রতি ১৫ দিন পর পর 'চেনা-জানা' আমার একটি অনুষ্ঠান হয়। সাক্ষাৎমূলক এ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করি। এখানে অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিরা অতিথি হয়ে আসেন। আর আমার দলের নতুন নাটক 'পোহালে শর্বরী' নির্দেশনা দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত এই নাটকের ৬টি প্রদর্শনী হয়ে গেছে। এটা নিয়েই এখন আছি। টিভি নাটক একদমই ছেড়ে দিয়েছি বলা যায়।
'পোহালে শর্বরী' বিষয়বস্তু কী?
এটি থিয়েটারের ৪৭তম প্রযোজনা। আমরা যখন নতুন নাটকের জন্যে পান্ডুলিপির খোঁজ করছিলাম, তখন সুরেন্দ্র বর্মার এ নাটকটির সন্ধান দেন খ্যাতিমান সমালোচক প্রীতিভাজন অংশুমান ভৌমিক। বিষয়বস্তুর কথা জেনে উৎসাহিত হই, কারণ সমাজে নারীর অবস্থান আমরা আমাদের একাধিক নাটকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
সামাজিক বিধিবিধান, ব্যক্তিমানস বিশেষ করে নারীর চাওয়া-পাওয়াকে মর্যাদা দিতে এখনও উদাসীন। পাশাপাশি ধর্মের অনুশাসন ও রাজনীতির কূটকৌশলের কারণে পুরুষের শিকার হওয়ার বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। 'পোহালে শর্বরী' যদি দর্শকদের এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ভাবায়, তবেই এ প্রচেষ্টা অর্থবহ বলে মনে করি। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে অনেকটাই সার্থক আমরা। নাটকটির সহকারী নির্দেশক হিসেবে আছে আমার মেয়ে ত্রপা মজুমদার।
মূলত ত্রপাই নির্দেশনার সিংহভাগ কাজ করছে।
জীবন যেভাবে কাটাতে চেয়েছিলেন,
সেভাবে পেরেছেন?
বলা চলে অনেকটা পেরেছি। নাটকের জন্য কাজ করে গেছি। কিছুটা হলেও বাংলাদেশের মঞ্চনাটক ও সংস্কৃতির জন্য অবদান রাখতে পেরেছি। আইটিআইর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমি খুবই সৌভাগ্যবান, ফেরদৌসীর মতো স্ত্রী পেয়েছি। ত্রপাকে নিয়েও আমি গর্বিত। এখন মাঝেমধ্যে মনে হয়, আবার যদি এই জীবনটা ফিরে পেতাম, তাহলে অর্থপূর্ণ কাজ করে জীবনটাকে আরও পরিপূর্ণ করতাম। স্বীয় ক্ষমতাবলে যে জায়গা থেকে আমি উঠে এসেছি, সে অনুযায়ী জীবনে অনেক পেয়েছি।
জীবনকে আপনি কীভাবে দেখেন?
কেবল নিজের জন্য নয়, সবাইকে নিয়ে ভালোভাবে আনন্দে বেঁচে থাকার নামই জীবন। মানুষের কল্যাণে যদি কিছু করতে পারি, তবেই জীবন সার্থক বলে মনে করি।
জীবনের এই প্রান্তে এসে তরুণ শিল্পী কিংবা আপনার ভক্ত-অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন-
এ পর্যায়ে আমার নিজের কোনো বিশেষ চাওয়া নেই। প্রত্যাশা একটাই সবাই যেন আমার জন্য প্রার্থনা করেন। আমি সবার আশীর্বাদ চাই। আর নতুনদের বলতে চাই কোনো প্রাপ্তির আশায় নয়, কাজকে ভালোবাসতে হবে। কাজটি ভালোবাসি বলে করছি- এটি ভাবলেই তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে।