রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে 'ইকোস অব রেভলু্যশন' কনসার্টে মঞ্চ মাতালেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় সঙ্গীংতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। জুলাই গণ-অভু্যত্থানে আহত ও নিহতদের সাহায্যার্থে আয়োজিত এ কনসার্টে রাত ১০টার দিকে মঞ্চে ওঠেন তিনি। শনিবার বিকাল ৪টায় ব্যান্ড সিলসিলার কাওয়ালি গানের মাধ্যমে কনসার্টটি শুরু হয়। এরপর ম?ঞ্চে আসেন 'আওয়াজ উডা' গা?নের জন্য প?রি?চিত র?্যাপার হান্নান। শুরু?তে র?্যাপ গান?টি পরিবেশন ক?রেন তি?নি, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থা?নে গান?টি গাওয়ার জন্য জেল খে?টে?ছেন হান্নান। হান্না?নের প?রি?বেশনার পর ম?ঞ্চে আসেন আরেক আলো?চিত র?্যাপার সেজান। 'কথা ক' গান দি?য়ে সাধারণ শ্রোতা?দের মা?ঝে প?রি?চিতি পে?য়ে?ছেন সেজান। ম?ঞ্চে গানটি ধর?লে শ্রোতা?দের ম?ধ্যে সাড়া ফে?লে। বির?তির পর সা?ড়ে ৫টার দি?কে ম?ঞ্চে আসে রক ব্যান্ড 'আফটারম্যাথ'। মাইক্রোফোন হা?তে ব্যা?ন্ডের ভোকা?লিস্ট না?ভিদ ইফ?তেখার চৌধুরী শ্রোতা?দের বল?লেন, 'এর আগে কখ?নোই আর্মি স্টেডিয়া?মে আফটারম্যাথ কনসার্ট ক?রে?নি। প্রথমবা?রের ম?তো আর্মি স্টে?ডিয়া?মে গাইছি। এবার স্বপ্ন পূরণ হ?লো।' কনসার্টে শুরু?তেই ব্যান্ড?টি গে?য়ে?ছে তরুণ?দের মধ্যে আলোচিত গান 'অধিকার'। এরপর 'উৎসর্গ', 'মা?টির রোদ'সহ আরও ক?য়েক?টি গান প?রি?বেশন ক?রে?ছে আফটারম্যাথ। সন্ধ্যায় মঞ্চে আসে ব্যান্ডদল চিরকুট। শুরুতে বাদ্যযন্ত্রীরা জাতীয় সঙ্গীতের সুর তোলেন। স্টেডিয়ামে দর্শকের আসনে বসে থাকা শ্রোতারা জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। এরপর দেশাত্মবোধক গান 'ধনধান্য পুষ্পভরা' দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে ব্যান্ডের ভোকা?লিস্ট সু?মি। এরপর 'ম?রে যাব', 'জাদুর শহর', 'আহা?রে জীবন'-এর ম?তো গান দিয়ে ঘোরলাগা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ড?টি। মোলায়েম সু?রের এসব গানে যাতনা খুঁজে খুঁজে ফিরেছেন শ্রোতারা। এরপর হাজারো দর্শকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে আসেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। পর পর তিনি তার জনপ্রিয় চারটি গান পরিবেশন করেন। এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন বরেণ্য এই শিল্পীর ছেলে শাজমান খান। সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মঞ্চে তার পরিবেশনা চলছিল। বিকাল পর্যন্ত বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ততটা দর্শক দেখা যায়নি। যদিও স্টেডিয়ামের বাইরে লক্ষ্য করা গেছে অস্বাভাবিক যানজট। সন্ধ্যা নামতেই অবশ্য বদলে যায় দৃশ্য। আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। যেন তরুণদের দখলে চলে যায় বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম। শনিবার বেলা দুইটা থেকে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় আর্মি স্টেডিয়ামের গেট। তার আগে থে?কেই আর্মি স্টে?ডিয়া?মের বাইরে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সা?রি দেখা গে?ছে। সময় বাড়ার স?ঙ্গে স?ঙ্গে শ্রোতা?দের উপ?স্থি?তি বাড়?ছে। তবে স্টেডিয়ামের বাইরে রাস্তায় ভীষণ যানজটে নাকাল অবস্থায় দেখা গেছে মানুষকে। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও স্কাউটরা জানান, বনানীগামী রাস্তা সাময়িকভাবে বন্ধ, এই তথ্য অনেকে জানতেন না। এ কারণে তাদের যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওই রাস্তায় চলাচলরত গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তারা জানিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে আজ টোল নেওয়া হচ্ছে না। যৌথভাবে এ কনসার্টের আয়োজন করেছে 'স্পিরিটস অব জুলাই' পস্ন্যাটফর্ম ও স্কাইট্র্যাকার লিমিটেড। কনসার্টে জুলাই-আগস্ট অভু্যত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের শতাধিক সদস্য উপস্থিত রয়েছেন বলে আয়োজকেরা জানান। জুলাই-আগস্ট গণ-অভু্যত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তার জন্য এ কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। এই কনসার্ট থেকে আয় হওয়া সব অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা 'জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন'-এ দেওয়া হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, সঙ্গীত ছাড়াও কনসার্ট ইভেন্টে জুলাই বিপস্নব-সংক্রান্ত গ্রাফিতি প্রদর্শনী, মঞ্চনাটক, মুগ্ধ ওয়াটার জোনসহ বিভিন্ন কর্নার রাখা হয়েছে। কনর্সাটের উপস্থাপনায় ছিলেন জুলহাজ জুবায়ের ও দীপ্তি চৌধুরী।
কনর্সাট শুরু হওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তৃতা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, জুলাই অভু্যত্থানে হাত হারানো গাজী আতিক, শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধ ও শহীদ আহনাফ ফাইয়াজের মা।
সারজিস আলম বলেন, 'খুনি হাসিনার গুলিতে আমাদের ভাইয়েরা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়ে আমাদের ফ্যাসিবাদের কবল থেকে রক্ষা করেছেন। যার কারণে তাদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ।'
মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, 'জুলাই অভু্যত্থানে আহতদের চিকিৎসার লক্ষ্যেই এই ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন কখনো নগদ টাকা গ্রহণ করে না। বিকাশ, রকেট, নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের তহবিল গঠন করা হয়ে থাকে। আমরা গণ অভু্যত্থানকে যেভাবে সফল করেছি সংস্কার প্রক্রিয়াকেও সেভাবে সফল করবো।'
হাত হারানো গাজী আতিকুল ইসলাম বলেন, লুটপাট গুম,হত্যা, চাঁদাবাজি কি করেন নি ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বৈরাচার হাসিনা সবকিছু করেছেন। পিলখানায় আমাদের ৫৭ জন গণহত্যা, শাপলা চত্বরে হাজার হাজার আলেমদেরকে হত্যা করে শেখ হাসিনা গোটা দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছেন। ংেয কোনো মূল্যে এ দেশে খুনি হাসিনার বিচার করা হবে।
শহীদ আহনাফ ফাইয়াজের মা বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'আমাদের আশপাশে স্বৈরাচারের যেসব দোসররা ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। খুনি হাসিনাকে ফাঁসি না দিলে আমার আহনাফ ফাইয়াজের মতো কোনো শহিদের আত্মা শান্তি পাবে না। আমরা খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।