চিত্রনায়িকা পরীমনি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। সোমবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদের আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে, সকাল ১০টার দিকে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। মানুষের ভিড়ে হাসতে হাসতে আদালতে প্রবেশ করেন তিনি।
জামিন পাওয়ার পর গণমাধ্যমে পরীমনি বলেন, আপনারা সবাই শুরু থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে পাশে থেকেছেন, ভেবেছেন সেটা দেখে নিজের কষ্ট ভুলে গেছি। এভাবে আমার সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমি কাল থেকে আপনাদের ভালোবাসা পাচ্ছি। আপনাদের এই ভালোবাসার প্রতি আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। চিত্রনায়িকা আরও বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর এ কারণেই একদম শেষ অবধি আমি বিশ্বাস রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার পাব। আর আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন। আপনাদের ভালোবাসা নিয়েই আমি জিততে চাই।
জানা গেছে, অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য ছিল। তবে অসুস্থ থাকায় পরীমনি আদালতে হাজির হননি। এ জন্য তার আইনজীবী সময় চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে, বাদীপক্ষ অভিযোগ গঠন শুনানির পক্ষে আবেদন করে। আদালতে সময়ের আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করেন। আগামী ২০ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়। একই সঙ্গে পরীর জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। সে মামলায় আদালতে পরীমনির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন আইনজীবী সোহেল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পরীর পক্ষের আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী আদালতে সময় আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করে চার্জগঠনের আদেশ দেন এবং আগামী ২০ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।
পরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অভিনেত্রী ও তার সহযোগী ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ও জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিম অ্যালকোহল সেবনে অভ্যস্ত। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামিদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। মূল্য দাবি করলে পরীমনি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলার হয়রানির ভয় দেখান। পরীর বিরুদ্ধে করা মামলায় উলেস্নখ করা হয়, ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর পরী তার সহযোগীদের নিয়ে বোট ক্লাবে ঢোকেন। ওই সময় বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম ক্লাব ত্যাগ করছিলেন।
ওই সময় পরী উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাসির ও আলমকে ডাক দেন। তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসারও অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে পরীমনি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাসিরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একটি বস্নু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেয়ার জন্য চাপ দেন। নাসির উদ্দিন এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাকে গালমন্দ করেন। নাসির এবং আসামিদের মধ্যে বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমনি হত্যার হুমকি দিয়ে বাদীর দিকে একটি সারভিং গস্নাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির মাথায় এবং বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি ৫ দিন পর ২০২১ সালের ১৪ জুন ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পরীমনি সাভার থানায় বাদী নাসির উদ্দিন, তুহিন সিদ্দিকী অমি ও অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪ জনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যদিও সে মামলার তদন্তে ধর্ষণ বা হত্যাচেষ্টার কোনো প্রমাণ পাননি পুলিশ।