শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আগে দেওয়া সুবিধার টাকা ফেরত চায় অর্থ মন্ত্রণালয়!

পৌনে আট বছরেও জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান হয়নি
ম আমানুর রহমান
  ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

সরকারি নির্দেশনার আলোকে কোনো কর্মচারীকে সুবিধা দেওয়ার পর তা ফেরত দেওয়ার আদেশ জারির নজির না থাকলেও, জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। পৌনে আট বছর (২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি) আগে ওই শিক্ষকদের সরকার যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিধিমালা প্রণয়ন ও কার্যকর করেছে, প্রায় আট বছর পর সে সুবিধা ফেরত চেয়ে নতুন পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

২০২০ সালের ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, টাইম স্কেল প্রাপ্ত শিক্ষকদের ভোগকৃত টাইম স্কেলের টাকা ফেরত না দিলে অন্যথায় সুবিধা ভোগকারীদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ, পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেড বাধাগ্রস্ত হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে বলেন,

\হ'সরকারের বিদ্যমান নীতি ও বিধির সঙ্গে ওই সুবিধা প্রদান সাংঘর্ষিক। এজন্যই নতুন করে পরিপত্র দিয়ে সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলার নেই।'

এ ব্যাপারে জাতীয়করণকৃত শিক্ষক নেতারা যায়যায়দিনকে বলেন, 'নানা টাল-বাহানায় জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের এখনো গেজেটভুক্ত করা হয়নি। এসব দাবি নিয়ে শিক্ষকরা যখন সোচ্চার হচ্ছেন, তখন ২০১৩ বিধি (৯)উপবিধি (১)-র অপব্যাখা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা। তারা ভুল ও মনগড়া ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এসব ব্যাখ্যা মেনে নেওয়া হবে না।'

প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের আওতায় আনার জন্য বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি ও আন্দোলন করতে গিয়ে অবস্থান ধর্মঘট ও আমরণ অনশন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মহা-সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। ফলে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সেখানে কর্মরত শিক্ষকের চাকরিও জাতীয়করণের আওতায় আসেন। পরবর্তী তিন অর্থবছরে তিন ধাপের এক লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে। সে ঘোষণার আলোকে এখনো ৫ শতাধিক তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে গেজেটভুক্ত করে চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। ২০১৩ সালে জাতীয়করণকৃত বিধিমালা অনুসারে ৫০ শতাংশ কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা প্রদানের নির্দেশনা ও বিধান করা হলেও, সেটিকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে। ফলে যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও জাতীয়করণকৃত শিক্ষকরা বাদ পড়েছেন বার বার। নতুন করে গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়নে জন্য মাঠ পর্যায়ে তালিকা চাওয়া হয়েছে, তাতেও বাদ পড়তে যাচ্ছেন বলে আফঙ্কা জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের। এরূপ নানা জটিলতার কারণে জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক ধরনের অপ্রকাশ্য ও অঘোষিত দূরত্ব চলছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, এক লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ২০১৩ সালে বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের মতামত ও সমর্থন নিয়ে 'বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক (চাকরির শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। তাতে, রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি, গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়ন, টাইম স্কেল ও উচ্চতর গ্রেড নিয়ে নানাবিধি সংবলিত ছিল। সে অনুসারে জাতীয়করণকৃত শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নত সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিলেন এবং এখনো পাচ্ছেন।

পরে অর্থ মন্ত্রণালয় ওইসব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দফায় দফায় আপত্তি জানালেও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপে সেসব আপত্তি ধোপে টেকেনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবসরে যাওয়ার পর ২০২০ সালের ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করে নতুন সংকট তৈরি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাইম স্কেল ভোগকারী শিক্ষকদের অনেকের চাকরি জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে, অনেকে অবসর জীবনযাপন করছেন, অনেক শিক্ষক মৃতু্যবরণও করেছেন। বর্তমানে আরও ৪৮ হাজার ৭২০ জন জাতীয়করণকৃত শিক্ষক চাকরিরত আছেন। তারাই মূলত ১২ আগস্টে পরিপত্র নিয়ে শঙ্কিত। এ ছাড়া ২০১৭ সাল থেকেই জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের আগের (জাতীয়করণের আগের) চাকরিকাল গণনা করা হচ্ছে না।

জানতে চাইলে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষক মহাজোট আহ্বায়ক ও বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব আমিনুল ইসলাম চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন. 'অধিগ্রহণ করা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরি শর্তাবলি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ অনুযায়ী কর্মরত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার এক পর্যায়ে বিধিমালা ২০১৩, বিধি ৯, উপবিধি-১ এর ভুল ব্যাখা দিয়ে শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর ফলে অধিগ্রহণ করা শিক্ষকরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন।' তিনি সরকারকে বিষয়টি নিয়ে দ্রম্নত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে