শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার

আবেদন ফি থেকে ঢাবির আয় বেড়েছে তিনগুণ

আমানুর রহমান
  ১৪ মে ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ মে ২০২২, ০৯:২৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকারীদের কাছ থেকে আয় করেছে ২৯ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। বিগত তিন বছরের (তিন শিক্ষাবর্ষে) মধ্যে ঢাবি'র আয় বেড়েছে তিনগুণ। অথচ কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি পরীক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে গত শিক্ষাবর্ষে কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ যুক্তিতেই এবারের ভর্তির আবেদন ফি বাড়িয়েছে গত তিন বছরের চেয়ে তিনগুণ বেশি। এ কারণেই আয় বেড়েছে তিনগুণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারি বিভাগের দেয়া তথ্যানুসারে দেখা গেছে, বিগত তিন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৮ কোটি ১৭ লাখ ৫৩ হাজার, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার এবং সর্বশেষ এবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয় করে ২৯ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। অনলাইন সার্ভিস ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতি আবেদনে ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা খরচ বাদ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রকৃত আয় ২৭ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ৮৬২ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডক্টর মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার জানান, এবারের আবেদন ফি ছিল ১ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৪৮ জনের আবেদন ফি জমা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি আসনের জন্য এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ জন। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৩ জুন থেকে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৩৫টি। বছর বছর বেড়েছে আবেদন ফি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফি ৪৫০ টাকা করা হয়। এর পরের শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি করা হয় ৬৫০ টাকা। সর্বশেষ এবার ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি এক লাফে ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ থাকায় ফি 'সামান্য' বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার অতিরিক্ত খরচের কথা। এবার একলাফে ৩৫০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে গত বছরের ফিতে খরচ সংকুলান না হওয়ার কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আখতারুজ্জামান। উপাচার্য বলেন, 'গত শিক্ষাবর্ষে ঢাকার বাইরে ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য ঢাবিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এজন্য এবার ভর্তি ফি ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় প্রায় সব কয়টি ছাত্র সংগঠন ভর্তি ফি বাড়ানোর বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ করেছে। ছাত্রদলের সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ যায়যায়দিনকে বলেন, সরকারের শিক্ষা বিমুখী চরিত্রের অংশ হচ্ছে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংখ্যা কমানোর পর এবার শিক্ষা ব্যয় বাড়িয়েছে। মেধাহীন প্রজন্ম দিয়ে সরকারের ক্ষমতা পোক্ত করার মানসিকতার অংশ এটি, উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করাই মূল লক্ষ্য সরকারের। ছাত্র সমাজ এটি মেন নেবে না। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বৃহস্পতিবার বিকেলে যায়যায়দিনকে বলেন, বারবারই আমরা শিক্ষা ব্যয় কমানো এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রতিবাদ করে আসছি। সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে সব ধরনের শিক্ষাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছি। তিনি আরও বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য শুরু থেকেই আমরা ঢাবি কর্তৃপক্ষকে যে কোনো ফিসহ বেতন মওকুফের আহ্বান জানিয়েছি। সরকারকে এ খাতে ভর্তুকির দাবি করেছি। অথচ দু'পক্ষই উল্টো পথে হাঁটছে। শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি কখনোই ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি আরও বলেন, ফি বাড়ানোর কারণেই এবার ভর্তির আবেদনও অন্য যে কোনো বারের চেয়ে কম হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে