অর্ধশত বছরের বেশি পুরনো লাইন দিয়েই চলছে রাজধানীর গ্যাস পরিবহণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা। ফলে গ্যাসের লিকেজ হয়ে উঠেছে নগরবাসীর জন্য নিয়মিত ঘটনা। সর্বশেষ এসব পাইপ লাইন সংস্কারে ২০১৯ সালে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তিতাস গ্যাস ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে নানা জটিলতায় প্রকল্পটি বেশির ভাগ কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার গ্যাসের পাইপলাই সংস্কার ও প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। তবে রাজধানীর সংস্কার প্রকল্পে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। সংস্থাটির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেছেন, ঢাকার আশপাশে অনেক কাজ হলেও শহরের মধ্যের পাইপলাইন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। শীর্ষ পর্যায়ের অনুমতি পেলে কাজ শুরু হবে।
এদিকে ২০ বছর আগেই তিতাস গ্যাসের বেশির ভাগ পাইপলাইনের 'টেকনিক্যাল লাইফ' শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জ্বলানি বিশ্লেষকরা। সেই হিসেবে গোটা রাজধানীজুড়ে যে গ্যাস পরিবহণ ও সঞ্চালন লাইনের নেটওয়ার্ক রয়েছে তার বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কয়েকটি ভবনে বিস্ফোরণে গ্যাস লিকেজের কারণে হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে ওঠে এসেছে। সবশেষ সোমবার রাতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় জ্বালানি বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, 'কলকারখানা বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত চাপের কারণে পাইপ লাইনের লিকেজ দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।'
বিশ্লেষকরা বলেছেন, গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ দূর করা না হলে এ সমস্যা যে কোনো সময় হতে পারে। আর এর থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই যত দ্রম্নত সম্ভব এসব পাইপলাইন প্রতিস্থাপন কিংবা সংস্কার প্রয়োজন। তবে রাজধানীতে এ সংস্কার কার্যক্রমে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোলস্নাহ জানান, পুরনো জরাজীর্ণ গ্যাস বিতরণ লাইন প্রতিস্থাপন, বিদ্যমান লাইনে কোথাও ছিদ্র থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে মেরামতসহ বেশকিছু কাজের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ কাজে একটি বিদেশি কোম্পানিকে জরিপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা অস্থায়ীভাবে বন্ধ গ্যাস সংযোগ চিহ্নিত করেছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, ১৯৭০ সালে যেসব পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছিল তার টেকিনিক্যাল লাইফ ধরা হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ বছর। সেই হিসাবে তিতাসের ৬০ শতাংশের বেশি পাইপলাইনের বয়স ৫৫ থেকে ৬০ বছরের অধিক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে তিতাস গ্যাসের পুরো পাইপলাইন সংস্কারের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও পাইলাইন সংস্কার ও প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।
তিতাসের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও গ্যাসলাইন সংস্কার বা প্রতিস্থাপন বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। যার প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো রাজধানীর গ্যাস পাইপলাইনের পরিপূর্ণ কোনো ম্যাপ না থাকা। এছাড়াও অসংখ্য বাসাবাড়ির গ্যাস সংযোগ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত থাকা অনেক লাইনের ওপর দিয়ে সড়ক এতটাই উঁচু হয়েছে যে কাজ করা দুষ্কর। এর বাইরে বর্তমানে ঢাকা ও এর আশপাশে প্রায় ৫০ হাজার সংযোগ আছে যেগুলোর লাইন কেটে দেওয়া হলেও রাইজার রয়ে গেছে। এগুলো থেকে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।