শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

আবারও দেশব্যাপী টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ

সারা দেশে আরও ৮টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ অবরোধে মাঠে ছিল না কর্মসূচি আহ্বানকারীরা
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আবারও দেশব্যাপী টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
নাটোরে বড়হড়িশপুর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা দু'টি বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা -যাযাদি

বুধবার থেকে আবারও দেশব্যাপী টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন পালনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এদিকে সোমবারও অবরোধের মধ্যে সারা দেশে ৮টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। ঢাকায় অবরোধের কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। অবরোধ ডাকলেও মাঠে ছিলেন না নেতাকর্মীরা। স্বাভাবিক হয়ে আসছে দূরপালস্নার বাস চলাচল। রাজধানীর বাইরেও এমনই চিত্র ছিল বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির কবির রিজভী বলেন, বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টা দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। ওইদিন দিবসটি উপলক্ষে গুম, খুন, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের

\হশিকার বিএনপির দলীয় নেতাকর্মী এবং নাগরিকদের পরিবারের সমন্বয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে ও মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রোববার দিনগত রাতে ঢাকার রামপুরা বাজারে সোনালী ব্যাংকের পাশে একটি পিকআপে আগুন দেয় অগ্নিসন্ত্রাসীরা। এছাড়া সোমবার গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের সামনে অগ্নিসন্ত্রাসীরা তানজিল পরিবহণ নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাহজাহান শিকদার জানান, গত ৩ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে সোমবার ৪ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় ঢাকা ছাড়াও গাজীপুরে দু'টি, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও নাটোরে একটি করে মোট চারটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার যানবাহনের মধ্যে রয়েছে চারটি বাস, দু'টি ট্রাক, একটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি পিকআপ। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১৪ ইউনিট এবং ৮০ জন ফায়ার ফাইটারকে কাজ করতে হয়েছে। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৫২টি অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে নাশকতাকারীরা।

সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলের কোনো নেতাকর্মীকে অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহলস্নায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ঝটিকা মিছিল করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ভোরে পুরানা পল্টন মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখা ঝটিকা মিছিল করেছে।

ঢাকার রাস্তায় প্রচুর যানবাহন চলাচল করেছে। কোনো কোনো সিগন্যালে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস ও উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালত পাড়ায় ছিল ব্যাপক লোক সমাগম। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।

সোমবার ঢাকার মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, অবরোধ ডেকে মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা ভাড়া করা লোক দিয়ে যানবাহনে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করছে। ককটেল মেরে আতঙ্কের সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারদের অনেকেই যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলার নেপথ্যের কারিগরসহ সহায়তাকারীদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতার বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশ কাজ করছে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও আদালত কর্তৃক ইসু্যকৃত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারাই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।

আমাদের ফেনী প্রতিনিধি জানান, সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে শহরের গ্রিন টাওয়ারের সামনে পার্কিং করে রাখা দু'টি অটোরিকশায় পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় অন্তত ৮ থেকে ১০ জন অগ্নিসন্ত্রাসী। এরপর তারা দু'টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া ইটের আঘাতে ইকবাল হোসেন নামক এক অটোরিকশা চালকের মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান।

আমাদের নাটোর প্রতিনিধি জানান, রোববার দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বড়হরিশপুর এলাকায় ভিআইপি হোটেলের সামনে পার্কিং করে রাখা সামি জনি ও রাজকীয় পরিবহণ নামের দু'টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে নাটোর সদরের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম দ্রম্নত ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে আগুনে নেভাতে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে বাস দু'টি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ জানান, অগ্নিসন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আমাদের উলস্নাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, রোববার দিনগত রাত ১০টার দিকে জেলার উলস্নাপাড়ার পাবনা-বগুড়া মহাসড়কের নবগ্রামে বগুড়াগামী করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিস অ্যান্ড পার্সেলের একটি মালবাহী কনটেইনারবাহী গাড়িতে আগুন দেয় অগ্নিসন্ত্রাসীরা। পরে জনতা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কনটেইনারে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ওষুধ ও পস্নাস্টিক সামগ্রী ছিল। উলস্নাপাড়া মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, পাবনার কাশিনাথপুর থেকে করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িটি বগুড়া যাওয়ার পথে তাতে আগুন দেয় অগ্নিসন্ত্রাসীরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আমাদের স্টাফ রিপোর্টার নেত্রকোনা জানান, জেলা বিএনপির উদ্যোগে রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচনী তফসিল বাতিল ও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নবম ধাপের অবরোধের সমর্থনে নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ মহসড়কের বনুয়াপাড়া এলাকায় জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল করেছেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে মশাল মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুল হাসান আরিফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ সাইফুলস্না মুন্না, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আজহারুল ইসলাম কমল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহাবুব চৌধুরী ও সহ-সভাপতি শামছুল হুদা শামীমসহ অন্যান্য নেতারা।

আমাদের রংপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার অবরোধে রংপুর থেকে ট্রেন ও আন্তঃজেলার বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলারসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করেছে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটও খোলা ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো। রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক শংকর গাঙ্গুলী জানান, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে সকালে অবরোধের সমর্থনে নগরীর কেরানিপাড়ায় ঝটিকা মিছিল করেছেন মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করেন তারা। এছাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।

রংপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ফেরদৌস আলী চৌধুরী জানান, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। শহর ও মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

টাঙ্গাইল থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়ার মুখে ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কে বিএনপির মশাল মিছিল পন্ড হয়ে যায়। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলুর নেতৃৃত্বে মিছিলটি বের হয়েছিল। মিছিলটি ভূঞাপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার জাহিদ হাসানের লোকজন মিছিলকারীদের ধাওয়া করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা মশাল ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার জাহিদ হাসান জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বালাও-পোড়াও করার উদ্দেশ্যে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মশাল মিছিল বের করেছিল। এ সময় সাধারণ জনতা মিছিলকারীদের ধাওয়া করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

ভূঞাপুর থানার ওসি মো. আহসান উলস্নাহ্‌ জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

র্

যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঢাকাসহ সারা দেশে অবরোধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতের্ যাবের ৪২৪টি টহল দল কাজ করছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, অবরোধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা ও এর আশপাশে ২০ পস্নাটুনসহ সারা দেশে ১৫৪ পস্নাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে