শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

মিয়ানমার সীমান্তে ফের গোলাগুলি, সতর্ক বিজিবি

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মিয়ানমার সীমান্তে ফের গোলাগুলি, সতর্ক বিজিবি
মিয়ানমার সীমান্তে ফের গোলাগুলি, সতর্ক বিজিবি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রম্ন পয়েন্টের ওপারে মিয়ানমারে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত থেকে গোলাগুলি শুরু হওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সীমান্তের মানুষ। সোমবার সকালেও গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন স্থানীয়রা। গোলাগুলির শব্দের তীব্রতা আগের চেয়ে কম হলেও আতঙ্কে টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন জেলেরা। পাশাপাশি স্থানীয়দের বহনকারী নৌযান চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে। সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ রোধসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সোমবার টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় থেকে থেমে থেমে বন্দুক ও মর্টার শেল ছাড়াও ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তবে রোববার থেকে শব্দের তীব্রতা কমে যায়। এ দিন ঘণ্টা দু'য়েক পর পর ১/২টি করে গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা যায়।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে থেমে থেমে আবারও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন জানিয়ে আব্দুস সালাম বলেন, 'সকাল থেকে আধা ঘণ্টা পর পর ১/২টি গুলির শব্দ ভেসে আসছে।'

তিনি জানান, তারা নানা মাধ্যমে খবর পাচ্ছেন, মিয়ানমার অভ্যন্তরে মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুলস্নাপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই অব্যাহত আছে। ওই এলাকাগুলো রোহিঙ্গা অধু্যষিত।

এদিকে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, গত কয়েক দিন গোলাগুলির শব্দ একটু কমায় দ্বীপবাসীর মনে আতঙ্ক কাটলেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ইনানী-সেন্টমার্টিন নৌরুটে দুই পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে।

টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী জানান, সংঘাতের বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ। তবে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে এখানে (বাংলাদেশে) যেন কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ড টহল বাড়িয়েছে। এ নিয়ে সীমান্তের বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

টেকনাফ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ সোমবার বলেন, 'সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটি মিয়ানমারের অনেক ভেতরে। তবে নতুন করে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সীমান্তে গোলাগুলিতে নিরাপত্তার কারণে নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে মানুষ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'রোববার শাহপরীর দ্বীপসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ১৬৫ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনকে জরুরি কাজ ছাড়া সীমান্তে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে।'

শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটের টোল আদায়কারী সিদ্দিক আহমদ বলেন, 'নাফ নদের বুকে জেটিঘাটে ভ্রমণে প্রতিনিয়ত মানুষের আনাগোনা ছিল। কিন্তু সীমান্তের গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার কারণে এই জেটিতে দুই দিন ধরে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ ছিল। আমরা যারা সীমান্তের বাসিন্দা রয়েছি, তাদের ওপর ওপারের গোলাগুলির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।'

টেকনাফের হ্নীলার বাসিন্দা মো. সাইফুল বলেন, 'আমার এলাকায় রাতে অনেক ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। সকাল থেকে গোলার শব্দ কমেছে। কিন্তু থেমে থেমে গোলার শব্দ পাচ্ছে সীমান্তের লোকজন। ফলে মানুষের মাঝে ভয়ভীতি কমেনি।'

অন্যদিকে গোলাগুলির ঘটনার ১০ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল ৯টায় তুমব্রম্ন রাইট ক্যাম্প থেকে আবারও ভারী অস্ত্রের গোলার আওয়াজ পেয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। যদিও তা মিনিট দশেক স্থায়ী ছিল।

তুমব্রম্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, তুমব্রম্ন রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকুবুনিয়ায় গোলাগুলি হয়েছে। এতে তুমব্রম্ন ও হেডম্যানপাড়ার মানুষ আবারও সেই আগের মতো ভয়ে আতঙ্কিত।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, 'এ গোলাগুলি প্রায় সময় হয়। সোমবারও তাই হয়েছে। তবে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা করবে এ ধরনের কথা রটে গেছে সর্বত্র। ফলে সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছে।'

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধে রাখাইনের মংডু শহরের বাঘগোনা, হাদিবিল, নলবনিয়া নয়াপাড়া গ্রামে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এ জন্য কয়েকদিন ধরে এসব এলাকার প্রায় চার হাজার লোক বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্তবর্তী সিকদারপাড়া ও মন্নিপাড়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে।

টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হাসমত উলস্নাহ বলেন, 'মংডু শহরের এতিলস্নাপাড়ায় বসবাসরত চাচাতো ভাই আব্দুলস্নাহর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। মিয়ানমার জান্তা সরকার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে