বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
তাপপ্রবাহে পুড়ছে ছয় জেলা

সারাদেশে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
প্রচন্ড গরমে একটু স্বস্তি পেতে মানুষজন কিনছেন হাতপাখা। প্রতিটি পাখা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকায়। ছবিটি বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম

বৈশাখের খরতাপে ভোগান্তি এনেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ; মৌলভীবাজার জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

দেশজুড়ে এমন তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে গত বুধবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হয় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন মঙ্গলবার রেকর্ড হয় ৪০.৬ ডিগ্রি। তবে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.৪ ডিগ্রি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণেই তাপপ্রবাহে অস্বস্তি বাড়ছে। এদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম হলেও অস্বস্তি কমেনি।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়েছে, সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় একই রকম থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের

কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।

বৃহস্পতিবারও দুপুরের রোদ থেকে যেন বের হচ্ছিল আগুনের হলকা। এমন রোদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গায়ে ফোসকা পড়ার মতো অনুভূতি হচ্ছিল। তবে রাজধানীতে আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরমের কষ্ট কমেনি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় গরমে অস্বস্তিকর অনুভূতি বেড়ে গেছে।

আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত আজ শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

শনিবারের পূর্বাভাসে উলেস্নখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।

এছাড়া আগামী পাঁচ দিনের বর্ধিত পূর্বাভাসে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, বৈশাখে সূর্যের তাপে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। দুই দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে জেলায়। মানুষ ও প্রাণিকুল গরমে অসহায় হয়ে পড়েছে। সূর্যের তাপের কারণে মানুষের শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বারবার পানি পান করলেও তৃষ্ণা মিটছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের প্রখরতা বাড়ছে। এজন্য সড়কে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র দাবদহ চলমান রয়েছে। দাবদহের কারণে মানুষের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। দুই দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বুধবার ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এখনো পর্যন্ত কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা হ্রাস পাবে না। ২০২৩ সালে ১৯ ও ২০ এপ্রিল জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার সাবেক শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, 'বারবার পানি পান করে তৃষ্ণা মেটানো যাচ্ছে না। বৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। পরিবেশের ভারসাম্য বাজায় রাখতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে প্রতিদিন।'

চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কামরুজ্জামান বেল্টু বলেন, 'মাঠে জমিতে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। মাটির ভাব আর সূর্যের তাপ। বেশিক্ষণ মাঠে অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমিতে সেচ দেওয়ার পরও মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে