বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ইসু্যতে প্রশ্নের মুখে বিএনপি

হাসান মোলস্না
  ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
দুই ইসু্যতে প্রশ্নের মুখে বিএনপি

পরবর্তী আন্দোলন ও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা জানতে চেয়েছেন, এত ত্যাগ স্বীকারের পরে সফলতার মুখ না দেখা আন্দোলনের ভবিষ্যত কি? এছাড়া উপজেলা নির্বাচন বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আরও আগে কেন জানানো হলো না। সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই দুই ইসু্যতে নীতি নির্ধারক নেতারা আলোচনা করেছেন। আগামী বৈঠকে পরবর্তী আন্দোলন ও বর্জনের ঘোষণা দেওয়া উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় কৌশল চূড়ান্ত হতে পারে।

গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত বিগত দুই বছরের আন্দোলনের মূল্যায়নের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমরা দুই বছর আন্দোলন করলাম। আন্দোলন সফল হলো না। এজন্য তৃণমূলের নেতারা হতাশ। ঠাকুরগাঁও গিয়েছি। সেখানে নেতারা জানতে চান, পরবর্তী আন্দোনের লক্ষ্য কি। জবাব দিতে পারিনি। তাই দুই বছরের আন্দোলনের মূল্যায়ন করে লক্ষ্য স্থির করা দরকার- আমরা কি করব। তখন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, স্থায়ী কমিটির পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বিএনপি মহাসচিবই নয় তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন সব নেতাই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে নেতারা দলীয় সিদ্ধান্ত নয়, নিজেদের মতামত কর্মীদের কাছে উপস্থাপন করেন।

তৃণমূলকে দেওয়া নেতাদের মতামত অনুযায়ী চলতি বছর সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই বিএনপির। দল পুনর্গঠন করে সময় নিয়ে একটি কার্যকর আন্দোলন করতে চায় দলটি।

বিএনপি সূত্রমতে, সরকার পতনের এক দফার কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বছর শুরু করলেও নির্বাচনের পরে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর

কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায় না হওয়ায় আবারও এমন কর্মসূচিতে গিয়ে নতুন করে মামলা এবং 'দমন-পীড়নের' পরিস্থিতিতে পড়তে চায় না তারা।

বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে দলটির ৪০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়ে আছেন। এরই মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন বিভিন্ন স্তরের প্রায় ১৩শ নেতা। মামলা, গ্রেপ্তার এবং সাজার কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের বিপর্যস্ত অবস্থা এবং বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণে আপাতত কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে দলটি। চলতি বছরের সরকার পতনের আন্দোলন থেকে পিছু হটলেও ইসু্যভিত্তিক জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি বাড়ানো হবে। এজন্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়লেও কর্মসূচি দেওয়া হবে। চলতি গরম মৌসুমে বিদু্যতের লোডশেডিং বাড়বে। তখন শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক কিছু কর্মসূচি থাকবে।

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে যুগপতের কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তবে সরকার পতনের কঠোর কোনো কর্মসূচি নিয়ে নয় বরং জনসম্পৃক্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঠিক করতেই শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বসবে বিএনপি নেতারা।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, আন্দোলন বললেই হয়ে যায় না। যারা মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন করবে সেসব নেতাকর্মীদের মামলা, হামলা, নির্যাতনে কোমর ভেঙ্গে গেছে। এজন্য আগে তাদের উজ্জীবিত করতে হবে। কর্মসূচিতে যাওয়ার আগেই নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করে রাজপথে নামাতে হবে।

নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং আবারও আন্দোলন শুরু করতে অনেক বিলম্ব হওয়ার কারণ যায়যায়দিনকে ব্যাখ্যা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সরকার বিদায় নেবে। কিন্তু তা হয়নি। স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় দেয়ার আন্দোলন যে সহজ নয়, তা আরও ভালোভাবে অুনধাবন করা উচিত ছিল। সফলতা পেতে যে আরও সময় লাগবে এখন দল উপলব্ধি করছে। বিএনপি সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবাস্তব বা কল্পিত চিন্তার মাধ্যমে আন্দোলনকে পরিচালিত না করে বাস্তবতাকে নিয়েই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, বর্তমান প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ ও অতীতের ভুল পর্যালোচনা করতে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ভাবছে দলটি। এছাড়া দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়াতে ডাকা হতে পারে বর্ধিত সভাও। সবমিলে প্রশাসনিক পর্যায়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং সংগঠন শক্তিশালী করে সরকার পতন আন্দোলনে ফিরতে বিএনপির বেশ সময় লাগবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এদিকে আন্দোলনের মতো আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ইসু্যতে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলে আছে ক্ষোভ, হতাশা ও নানা প্রশ্ন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন শেষ হওয়ার পর ভোট বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচন বর্জনে আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হবে এমন বিবেচনায় হতাশা থেকে শীর্ষ নেতাদের কাছে তারা জানতে চাচ্ছেন, শেষ মুহূর্তে কেন বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? বিএনপি নেতারা মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তথ্য থাকার পরেও শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্ত অনেকে মানতে পরছে না। অনেকে নির্বাচনের মাঠে থাকার কথাও ভাবছেন।

\হখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৫ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য পদে আছে বিএনপি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এমন অবস্থায় দল কঠোর হওয়ায় বিগত সময়ে বহিষ্কারাদেশের কথা মনে করছেন অনেকে। কারণ এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় প্রায় ২০০ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য পরে অনেকেরই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সূত্রে জানা গেছে, দলের কাছে তথ্য আছে, প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ৪৫ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন। তার পরও যদি কেউ দলের নির্দেশ অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তার ব্যাপারে নমনীয় থাকবে না দল। দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বিএনপি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ আগামী ২২ এপ্রিলে যারাই ভোটের মাঠে থাকবে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে