সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য

তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন দেশের ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন দেশের ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ

বাংলাদেশে গত বছর (২০২৩) নিষ্ফলা মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ (গবেষণার আওতায় আসা ব্যক্তিদের ৩১ শতাংশ) তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চমাত্রার সম্মুখীন হয়ে থাকতে পারে। তাদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বা শরণার্থী শিবিরের ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীও রয়েছে।

এসব মানুষের তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় বিশেষভাবে প্রভাব রেখেছে প্রতিকূল আবহাওয়া, বৈশ্বিক যুদ্ধ-সংঘাত ও উচ্চমাত্রায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি।

বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে বুধবার ফুড সিকিউরিটি ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (এফএসআইএন) প্রকাশিত প্রতিবেদন ২০২৪-এ এসব তথ্য উলেস্নখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ নেটওয়ার্কের সদস্য। এটির অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বজুড়েই গত বছর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। ওই বছর ২৮ কোটি ২০ লাখের

মতো মানুষ সংঘাত, বিশেষ করে গাজা ও সুদানে লড়াই চলার কারণে তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হয়।

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশটিতে খাদ্যসংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে পালিয়ে আসায় ২০১৭ সাল থেকে এ জেলাকে জিআরএফসিতে (খাদ্যসংকট নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিবেদন) একটি বড় খাদ্য সংকটপ্রবণ এলাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

২০২৩ সালে আইপিসির (দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন) বিশ্লেষণে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা ও ২৩ শতাংশ জনসংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস ও নদীভাঙনপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া কক্সবাজারের বাসিন্দারাও রয়েছেন।

২০২২ সালে রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদন ও ২০২৩ সালে খাদ্যের সহজলভ্যতার উন্নতি হলেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ধাক্কায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তিই থেকেছে বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ তা এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশে।

এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে জ্বালানি, গমের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যশস্য, সার ও গবাদিপশুর খাবার আমদানিতে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব পণ্যের আমদানি ব্যাহত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। ফলে একদিকে খাদ্যশস্যের আমদানি কমার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে (এফএও-জিআইইডবিস্নউএস, অক্টোবর ২০২৩; ডবিস্নউএফপি, অক্টোবর ২০২৩)।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অব্যাহত উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য সুবিধা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এসব মানুষের আয় ক্রমেই কমেছে ও তাদের খাদ্যপণ্য কেনার খরচ বেড়েছে (এফএও-জিআইইডবিস্নউএস, অক্টোবর ২০২৩; ডবিস্নউএফপি, অক্টোবর ২০২৩)।

২০২২ সালে ৭০ লাখের বেশি মানুষ অস্বাভাবিক মৌসুমি বন্যার শিকার হন এবং প্রধানত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহহীন হন ২০ লাখের বেশি মানুষ। এতে তাদের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ কারণে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলা করার সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের।

আগস্টে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী মৌসুমি বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস সৃষ্টি হয়। এর শিকার হন ১৩ লাখ মানুষ (ডবিস্নউএফপি, আগস্ট ২০২৩)।

ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের মধ্যে ছয় লাখের খাবার, সুপেয় পানি, ওষুধ ও বিদু্যতের মতো মৌলিক সেবার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয় (ইউএন বাংলাদেশ, সেপ্টেম্বর ২০২৩)। একই সময় রাজশাহীতে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ দেখা দেয় এবং দেশে ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটে (ডবিস্নউএফপি, অক্টোবর ২০২৩)। মৌসুমভিত্তিক কর্মসংস্থানের প্রভাব এবং খাদ্যসুবিধা ও প্রাপ্যতার ওপর পুনঃপুন বিপর্যয় মানুষের মধ্যে বড় ধরনের পুষ্টির ফারাক তৈরি করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে