মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস জনজীবন

সর্বোচ্চ ৪২.৭ ডিগ্রি চুয়াডাঙ্গায় তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস জনজীবন

অস্বাভাবিক গরমে পুড়ছে দেশ। কখনো তীব্র আবার কখনো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের বেশকিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন। চলতি মাসে ২৪ দিন টানা তাপপ্রবাহ বইছে, যা ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে (১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত)। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এ অবস্থা এপ্রিল মাসজুড়েই অব্যাহত থাকতে পারে। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি মাসে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয় যশোরে। আর এ বছর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে। সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তরের 'বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন' শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দুটোই বাড়লেও দ্রম্নত বাড়ছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে সব বছরে সব স্টেশনের উপাত্ত নেই। উপাত্তগুলো একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। তারপরও আগের স্টেশনগুলো বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মলিস্নক দীর্ঘদিন ধরে তাপপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, '১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। বলা যায়, ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল।'

এবার টানা যেমন তাপপ্রবাহ হয়েছে, আবার এর বিস্তৃতিও বেশি ছিল। এ বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনোই ছিল না। এমনটাই জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভান্ডারে থাকা ১৯৮১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালের এপ্রিলে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি ২০ দিন মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। কোনো একক মাসে এর আগে এতদিন ধরে তাপপ্রবাহ হয়নি। গত ৪৩ বছরের মধ্যে দেখা গেছে যশোরে তাপ প্রবাহের দিন সবচেয়ে বেশি। এরপরই আছে ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা।

আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক জানান, গত ৯ ও ১০ এপ্রিল সারাদেশে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগে গত ১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগটির তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এরপর ঢাকা, খুলনা ও রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা বাড়ে এবং দুই দিন তা অব্যাহত থাকে। ৮ এপ্রিল কক্সবাজার ও সীতাকুন্ডে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের গত ৪ এপ্রিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ুবিদ ও আবহাওয়া ইতিহাসবিদ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরেরা বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে একটি 'ঐতিহাসিক তাপপ্রবাহ' অনুভব করা হচ্ছে।

আর যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জুলি অ্যান রাইগলি গেস্নাবাল ফিউচারস ল্যাবরেটরির সিনিয়র গেস্নাবাল ফিউচার সায়েন্টিস্ট অধ্যাপক রাশেদ চৌধুরী বলেন, 'এল নিনো লা নিনায় পরিণত হচ্ছে এবং চলতি বছর সর্বোচ্চ উষ্ণতম হিসেবে রেকর্ড হতে পারে। এল নিনোর সময় মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে যায়, প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে এবং পুবের বাতাস স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। লা নিনার সময় সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে বাতাস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকে। একই সঙ্গে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগই স্বাভাবিকের চেয়ে শীতল থাকে।'

চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড ৪২.৭ ডিগ্রি

চুয়াডাঙ্গা থেকে স্টাফ রিপোর্টার রেজাউল করিম লিটন জানান, চলতি মৌসুমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা একের পর এক রেকর্ড করছে। তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাটি। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই রোদ আর গরমে। এরই মধ্যে জেলাটিতে ফের চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত দু'দিনে এ জেলায় ২ থেকে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১১ শতাংশ। এর আগে ২০ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২২ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৩ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি ও ২৫ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, জেলার ওপর দিতে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির তেমন আভাস নেই। তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি এ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

এদিকে অতি তীব্র তাপদাহে রোববার থেকে স্কুল খোলার সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এ জেলার অভিভাবকরা। যেখানে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ চলতি তাপপ্রবাহে বাংলাদেশের শিশুদের 'অতি উচ্চ ঝুঁকির' মধ্যে রেখেছে; সেখানে স্কুলগুলো চলমান তাপপ্রবাহ পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

পাবনায় ৪২.৪ ডিগ্রি

পাবনা প্রতিনিধি আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী জানান, পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে অতি তীব্রমাত্রার দাবদাহ। অসহনীয় এই দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চারদিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার ছাড়িয়ে গেল চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

শুক্রবার পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগের দিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২১ এপ্রিল রোববার পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ।

দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে

শুক্রবার আবহাওয়া অফিস জানায়, দেশের ২৬টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এদিন সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অন্য জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু'-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

দাবদাহের মধ্যে ঢাকায় পানির সংকট

তীব্র দাবদাহের মধ্যে সুপেয় পানির পাশাপাশি গোসল, বারবার হাত-মুখ ধোয়া এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য পানি অপরিহার্য। তবে ভুক্তভোগীরা জানান, তীব্র গরমে পানি না পেয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছেন তারা। বিকল্প পানির গাড়ি চেয়েও সহজে পানি পাচ্ছেন না তারা। যদিও ঢাকা ওয়াসার দাবি-পানি সংকটের কথা জানামাত্রই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তারা। পাশাপাশি পথচারীদের সুবিধার জন্য মহানগরীর জনসমাগমস্থলে বিনামূল্যে খাবার পানির ব্যবস্থা করেছেন তারা।

নগরবাসীর অভিযোগ, মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক ও আগারগাঁও এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে। এলাকাবাসী বলছে, বিশ দিনের বেশি সময় ধরে পানি সংকট থাকলেও ঢাকা ওয়াসা এর সমাধান করছে না। পাশাপাশি গুলশান, নন্দীপাড়া, ইব্রাহিমপুর, মনিপুর, সোলমাইদ, মাটিকাটা, জুরাইন এবং আগারগাঁওয়ের ৬ তলা গার্মেন্ট এলাকার বিভিন্ন গলিতে পানি সংকট চলছে।

ঢাকা ওয়াসার অঞ্চল-২ এর নবাবগঞ্জ, ঢুরি আঙুলি লেন, জাফরাবাদ ও কাঁটাসুর, অঞ্চল-৪ এর বড়বাগ, মনিপুর, আগারগাঁও ও মিরপুর ১২, জোন-৫ এর মালিবাগ বাজার রোডের গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী পানি পাচ্ছেন না। অঞ্চল-৬ এর বনশ্রীর এফ বস্নক, অঞ্চল-৭ এর রসুলপুর, পাগলা, শাহী মহলস্না, নুরবাগ, আদর্শনগর, নামা শ্যামপুর, নিশ্চিন্তপুর, দেলপাড়া, শান্তিধারা ও দৌলতপুর এবং অঞ্চল-১০ এর ইব্রাহিমপুর, পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১১ নম্বরের মদিনানগর, বাইগারটেক, মাটিকাটা এবং উত্তরা ১৫, ১৬, ১৭ নম্বর সেক্টরে পানির সংকটে নাকাল বাসিন্দারা।

ঢাকা ওয়াসা জানায়, রাজধানীর প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে তারা। এজন্য ঢাকা ওয়াসা ৯৬০টি গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন করছে। পাশাপাশি চাঁদনীঘাট, সায়েদাবাদ, পদ্মা, সাভারের ভাকুর্তা-তেতুলঝোড়া ও মেঘনা পানি শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ করছে। দৈনিক ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৮০ থেকে ২৯০ কোটি লিটার পর্যন্ত। গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা ৩০০ কোটি লিটারের বেশি চলে যায়। এজন্য ঢাকা ওয়াসার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

চার কারণে এত তাপপ্রবাহ

আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণের কথা উলেস্নখ করেছেন। সেগুলো হলো- উপমহাদেশীয় উচ্চ তাপ বলয়, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, এল নিনোর সক্রিয়তা এবং বজ্রমেঘের কম সংখ্যা।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, 'চৈত্র মাসের শেষ থেকে দেশে গরম বাড়ে। বৈশাখ মাসজুড়েই এর প্রভাব থাকে। আসলে এবার বা সাম্প্রতিক সময়ে যে প্রচন্ড তাপ, এর কারণ তো বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে।'

এই যে তাপপ্রবাহ, তা উপমহাদেশজুড়েই বিস্তৃত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে একটি অতিমাত্রার তাপবলয় তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয় পশ্চিমবঙ্গসহ ভারত ও পাকিস্তানেও এবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানান তারা।

এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তর এল নিনোর সমাপ্তির কথা ঘোষণার পাশাপাশি লা নিনার আগমনের কথা জানিয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, 'বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এ বছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। এ বছর তাপপ্রবাহের দিন ইতোমধ্যে রেকর্ড অতিক্রম করেছে।'

আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের এসব অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান। ওইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এ সময় তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবজাতি এখনো বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমন্ডলে ছাড়াতে থাকায় ২০২৪ সাল বিগত আরও বেশি গরম হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে আবহাওয়াবিদ সামান্থা বার্জেস বলেছেন, 'আমরা জানি যে, ২০২৪ সালে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। তবে এই তাপপ্রবাহ কোথায় ও কখন বয়ে যাবে তা নিয়ে পূর্বাভাস দিতে পারছি না।'

তবে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, 'এখন যে প্রচন্ড গরম পড়েছে, তা স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হওয়া কোনো মেঘের মাধ্যমে বৃষ্টি হলে কমবে না। বড় ধরনের বজ্রঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় তাপপ্রবাহের অঞ্চল ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, খুলনা ও রাজশাহীর গরম বজ্রঝড়েই কমা সম্ভব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে