আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে দলগুলোর মতানৈক্যের মধ্যে একই সঙ্গে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রের সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
শনিবার বাংলামোটর এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
গত কয়েকদিনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে আলোচনার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে গণ অভ্যুত্থানের পথ ধরে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার তৈরি হয়েছে এবং গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতা রয়েছে। কেবল একটি নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং জুলাই গণহত্যাসহ বিগত আমলের অপরাধগুলোর বিচার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের মধ্য দিয়েই সরকারকে যেতে হবে।’
তিনি বলেন. ‘ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্বে থেকেই সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যবস্থা করা উচিত। বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ একই সঙ্গে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে জনগণের স্বস্তি ও আস্থা তৈরি হবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশের বিষয় নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা পদ ছেড়ে রাজনীতিতে আসা নাহিদ।
গত বৃহস্পতিবার ওই তালিকা প্রকাশ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানায়, ওই সময় ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের একটি তালিকার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম। এটা গত ১৮ অগাস্টের ঘটনা। এই তালিকাটা যদি আরও আগে প্রকাশ করা হতো তাহলে জনমনে সন্দেহ-শঙ্কা তৈরি হতো না এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারো কথা বলার সুযোগ হতো না।’
গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘অতীতে বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর সাথে রাজনীতির একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যেমন ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা। এসব ঘটনা রাষ্ট্র, জনগণ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কখনো ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সেই বিষয়টা বিবেচনায় রেখে যার যেটা কাজ সে যেন সেই দায়িত্ব পালন করে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত আমলে আমলাতন্ত্র, পুলিশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে নানা ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই সময়ে এসে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্তদের বিচারের মধ্য দিয়ে শায়েস্তা করা হবে এবং জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘গুমের অভিযোগ যেসব সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদের অনেকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের অবস্থা এখন কী সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বিষয়গুলো স্পষ্ট করলে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনী জনগণের আরো আস্থার জায়গা পাবে। আমরা সেনাবাহিনীকে সেই আস্থার জায়গায় দেখতে চাই।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন নিয়ে এনসিপি-বিএনপির দ্বন্দ্ব এখন মাঠের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।
এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আদালতে গিয়ে আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলোর এক ধরনের বৈধতা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলোকে অবৈধ মনে করি। ফলে সেই নির্বাচন নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে আমাদেরকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা হারিয়েছে দাবি করে নাহিদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি আস্থার জায়গা ধরে রাখতে না পারে তাহলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জন করতে হবে অন্যথায় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।’
এক প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বাংলাদেশবিরোধী শক্তি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে, যাতে বাংলাদেশ কখনো শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে না পারে। ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনৈক্যের পেছনে মূলত রয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাখতে হলে আমাদেরকে রাজনৈতিক ঐক্যের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। এনসিপি সব সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। রাজনৈতিক পক্ষের জন্য এককভাবে এনপিপির উপর দায় চাপালে হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সামান্থা শারমিন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, আল আমীন, জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।