রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
জেলায় জেলায় স্বস্তির বৃষ্টি হ বজ্রপাতে ৭ জনের মৃতু্য

কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড চট্টগ্রাম

যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
সোমবার কালবৈশাখী ঝড়ে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার সার্কিট হাউসের পাশে দুটি গাছ বাতাসের চাপে উপড়ে গেছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে পড়ে, বিদু্যতের ট্রান্সফরমারসহ খুঁটি ভেঙে পড়ে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদু্যৎ সরবরাহ -স্টার মেইল

কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে। এছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ে নগরীসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কয়েক জায়গায় সড়কে গাছ আছড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহ কমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। সোমবার চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অনেক জেলায় বৃষ্টিপাত হয়। এমন বৃষ্টি টানা ৭ দিন চলতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে। একই সঙ্গে চলতি মাসেই ঘূর্ণিঝড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ অঞ্চলে দেওয়া হয়েছে সতর্কতা। অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে বজ্রপাতে নেত্রকোনায় কৃষক, শরীয়তপুরে দুই নারী, মাদারীপুরে দোকান কর্মচারী, ফরিদপুরের মধুখালীতে দুইজন এবং সিলেটে এক ওমান প্রবাসীর মৃতু্য হয়েছে। চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, মৌসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলজট। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এতে বিপাকে পড়েন পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। সোমবার বিকাল ৩টার পর থেকে বজ্রসহ কালবৈশাখীর ভারী বৃষ্টি শুরু হয় নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় সড়কে চলমান এক সিএনজি চালকের পেটে শিলাখন্ড ঢুকে গুরুতর আহত হয়েছেন। বিকাল ৫টার দিকে কমে আসে বৃষ্টিপাত। কর্মব্যস্ত দিন শেষে এমন বৃষ্টিতে নগরবাসী স্বস্তি পেলেও নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। নগরবাসীর ভাষ্য, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৫-৬ বছর ধরে কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। যা এখন শেষের পথে। এরপরও বৃষ্টিপাতের পর সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। নগরবাসীর তথ্য মতে, বৃষ্টিপাতে নগরীর ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, কাপাসগোলা, চকবাজার, পাঁচলাইশ, ফিরিঙ্গিবাজার, কোতোয়ালি, চাক্তাই, বাকলিয়া, সদরঘাট, পতেঙ্গা, হালিশহরের সব এলাকার সড়ক ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। ফলে সড়কের কোথাও যানবাহন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েন পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে স্কুল ছুটির পর চরম বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। অনেককে পানি কমার জন্য ঘণ্টাব্যাপী রাস্তার ধারে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। নগরীর জিইসি এলাকায় দেখা যায় রাস্তার ধারে হকার ও পথচারীরা রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকান ও শপিংমলের সামনে কোনোমতে মাথা গুঁজেছেন। এর মধ্যে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. নুরুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'যে বৃষ্টি আর বাতাস। এই দোকানে এসে আশ্রয় নিলেও শরীরের ৮০ শতাংশই ভিজে গেছে। আধঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বাসায় যেতে পারছি না। সকালে রোদ থাকায় ছাতাও আনিনি।' নগরীর দুই নম্বর গেটের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, 'জিইসি এসেছিলাম একটি কাজে। বাসার দিকে যাব ঠিক ওই মুহূর্তেই ঝুম বৃষ্টি। এখন দাঁড়িয়ে আছি বাস পাচ্ছি না। সড়কে সিএমজি অটোরিকশাও নাই। কোমর সমান পানিতে কোনো গাড়ি চলবে না। তাই অপেক্ষায় আছি পানি কমার জন্য।' নতুন ব্রিজ এলাকায় কথা হয় সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা কাউছার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'খুলশীতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম দুপুরে। হঠাৎ এমন বৃষ্টি আসবে ভাবিনি। আর রাস্তায় পানি উঠে গেছে। গাড়িও পাচ্ছি না।' কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসা তন্নি পানির স্রোত ডিঙ্গিয়ে হেঁটে বাসার দিকে ছুটছিলেন। তিনি বলেন, 'সকালে স্কুলে আসার সময় রোদ ছিল। এখন বৃষ্টিতে সড়কে কোমর সমান পানি উঠেছে। বাসার সঙ্গে যোগাযোগ করারও কোনো সুযোগ নেই। সড়কে গাড়িও নেই। তাই জলে ভিজে বাসায় যাচ্ছি।' খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালবৈশাখীর তান্ডবে নগরের বিভিন্ন কলোনির কাঁচাঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উড়ে যায় বিভিন্ন বাড়ির চাল। নগরের জাকির হোসেন রোডের এমইএস কলেজ এলাকায় সড়কের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। পরে স্থানীয় এবং পথচারীরা মিলে সেটি সরানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া ভারী বৃষ্টিতে নগরীর জাকির হোসেন রোডে বৈদু্যতিক খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এতে এমইএস কলেজ মোড় থেকে জিইসি মোড়ের যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। বৈদু্যতিক খুঁটি ও গাছপালা সরাতে একযোগে কাজ করছে বিদু্যৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। খুলশী বিদু্যৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নুর উদ্দিন বলেন, 'ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে দুটি বৈদু্যতিক খুঁটির সঙ্গে সংযুক্ত ট্রান্সফরমার রাস্তায় ভেঙে পড়েছে। সংযোগ বন্ধ থাকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে বিদু্যৎ বিভাগের লোকজন কাজ করছে।' এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার আমজুরহাট, কমলমুন্সিরহাট, বাইপাস ও চন্দনাইশের কাঞ্চননগর এলাকায় সড়কের ওপর গাছ পড়ে। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড ও মিরসরাই উপজেলার কয়েকটি স্থানে গাছ পড়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। সেখানে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সড়কে চলমান সিএনজির পস্নাস্টিকের ছাদ ছেদে চালকের পেটে শিলাখন্ড ঢুকে গেছে। তাকে স্থানীয় এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এটিই মৌসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টিপাত। এতে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতে নগরীর নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। নগরীর সড়কগুলো ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলজট সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী হাসান সামশ বলেন, 'চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতে সড়কে পানি জমবে কিছুটা- এটা স্বাভাবিক। আবার ওই পানি দ্রম্নত নেমেও যাবে। এটাই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল। তবে চট্টগ্রামে এখনো জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প শেষের পথে হলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নিশ্চয় সুফল মিলবে।' বজ্রপাতে প্রবাসীসহ ৭ জনের মৃতু্য এদিকে, কালবৈশাখী ঝড়ে বজ্রপাতে নেত্রকোনায় কৃষক, শরীয়তপুরে দুই নারী, মাদারীপুরে দোকান কর্মচারী, ফরিদপুরের মধুখালীতে দুইজন এবং সিলেটে এক ওমান প্রবাসীর মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে তাদের মৃতু্য হয়। । আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নেত্রকোনা: নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার হাওড়ে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দিলোয়ার মিয়া (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার স্বরমুশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে। শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই নারীর মৃতু্য হয়েছে। মৃতরা হলেন- জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়ার আলতু মাঝির মেয়ে আমেনা বেগম (২৬) ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নের বেড়াচাক্কি গ্রামের নেছার উদ্দিন মাঝির স্ত্রী কুলসুম বেগম (৩৮)। দুপুরে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে তাদের মৃতু্য হয়। মাদারীপুর : মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে সঞ্জীব বলস্নভ (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার পুরানবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বজ্রাহত হয়েছেন দিগেন বৈদ্য (৪০) নামের আরও একজন। সঞ্জীব গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার নগেন বলস্নভের ছেলে। তিনি মাদারীপুর পুরান বাজারের একটি মিষ্টির দোকানের কর্মচারী ছিলেন। অপরদিকে, কালকিনিতে বজ্রপাতে জসিম হাওলাদার (৪০) নামে আরও এক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে। বিকালে উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জসিম হাওলাদার ওই এলাকার হান্নান হাওলাদারের ছেলে। ফরিদপুর : ফরিদপুরের মধুখালীতে বজ্রপাতে মুরাদ মলিস্নক (৫৩) নামে এক কৃষকের মৃতু্য হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন কামরুল শেখ (৩৫) নামে আরেক কৃষক। তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের কাপাসাটিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুরাদ মলিস্নক উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের মিরাপাড়ার লকাই মলিস্নকের ছেলে। সিলেট : সিলেটের কানাইঘাটে মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে মাহতাব উদ্দিন মাতাই (৪৫) নামে এক ওমান প্রবাসীর মৃতু্য হয়েছে। সকালে উপজেলার দীঘিরপার ৩ নম্বর পূর্ব ইউনিয়নে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাহতাব উদ্দিন মাতাই উপজেলার দর্পনগর পশ্চিম করচটি গ্রামের রফিকুল হকের ছেলে। জেলায় জেলায় স্বস্তির বৃষ্টি এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ কমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। সোমবার চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অনেক জেলায় বৃষ্টিপাত হয়। এমন বৃষ্টি টানা ৭ দিন চলতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে। একই সঙ্গে চলতি মাসেই ঘূর্ণিঝড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ অঞ্চলে দেওয়া হয়েছে সতর্কতা। এর আগে রোববার দিবাগত রাতে ঢাকায় শিলাবৃষ্টি ঝরে। এ সময় ঝড়ো হাওয়ায় দেয়ালে চাপা পড়ে তিনজনের মৃতু্যর খবর পাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় সোমবার কালবৈশাখী তান্ডব চালায়। এতে বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। রাজধানীতে সোমবার সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। রোদের তাপ তেমন মেলেনি। বিকালের দিকে আকাশ পুরোটা মেঘে ঢেকে যায়। তার সঙ্গে বইতে শুরু করে দমকা বাতাস। এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বজ্রপাত শুরু হয়। কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিপাতও হতে থাকে। আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন সোমবার রাত ১টা পর্যন্ত এক পূর্বাভাসে জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, কুমিলস্না, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত (পুনঃ) ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর আগে চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। ১৫ তারিখের পর এটি আসতে পারে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সেটি থেকে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান জানান, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে ১৫ তারিখের পর দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মো. আবদুর রহমান খান বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোববার কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ও ঢাকায় হয়েছে ৩৬ মিলিমিটার। তিনি জানান, খুলনা-বাগেরহাটসহ রাজশাহী অঞ্চলে রোববার বৃষ্টিপাত হয়নি। এদিকে, টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে রোববার রাতে রাজধানীতে ঝড়ো হাওয়াসহ এক পশলা বৃষ্টি হয়। রাত ৯টার পর থেকেই বইতে থাকে ঝড়ো হাওয়া, ঝরে শিলাবৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাত ৯টার সময় আগারগাঁওয়ে সর্বোচ্চ ৫৯ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, কালবৈশাখীসহ শিলাবৃষ্টিতে তপ্ত রাজধানীতে আবেশ ছড়িয়ে দেয়। এটিই এই মৌসুমে রাজধানীতে প্রথম শিলাবৃষ্টি। রাত ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, হাতিরপুল, ফার্মগেট, বাংলামোটর, ধানমন্ডি, কলাবাগান, সেগুনবাগিচা, গেন্ডারিয়া, গুলিস্তান, মতিঝিল, শান্তিনগর, ফকিরাপুল, খিলগাঁও, বসুন্ধরা, মোহাম্মদপুর, কারওয়ানবাজার, টিকাটুলি, সায়েদাবাদ, মানিকনগর, গোলাপবাগ, রামপুরা, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ পুরো রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে। দেয়াল চাপায় তিনজনের মৃতু্য রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঝড়ো বাতাসে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের দেয়াল ভেঙে পাশের টিনশেড ঘরে পড়ে ঘুমিয়ে থাকা এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। তার নাম রেশমা। আহত হয়েছেন তিন শিশুসহ ৭ জন। রোববার রাত ১০টার পর এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। আহতরা হলেন- চার বছর বয়সি শিশু রুহান, সাত বছরের রাহাত, নয় বছরের রাফি, রুমা, লিমা, লুৎফা, ফারুক। নিহত রেশমার লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। জানা যায়, রাত ১০টার দিকে রাজধানীতে তীব্র ঝড় শুরু হয়। সেই সঙ্গে হয় শিলাবৃষ্টিও। এ সময় কিছু এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান সি-বস্নকে ১৫ তলা ভবনের ১১ তলায় নির্মাণ করা দেয়াল ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পাশের টিনশেড ঘরের পড়ে। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় রেশমা মারা যান। আহত হন সাতজন। এছাড়া ঢাকার ধামরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের দেয়াল চাপায় দুইজনের মৃতু্য হয়েছে। এ ঘটনায় আরও অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুর ২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম।

এর আগে রোববার দিনগত রাতে আহত চারজনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিলে চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতরা হলেন- নওগাঁ জেলার মান্দা থানার কুরুগ্রামের ফকির উদ্দিন সরকারের ছেলে আনিছুর রহমান (৫৩) ও গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থানার মৃত মতিয়ার রহমানের ছেলে শাহারুল আলম (৫২)। তারা ওই প্রোজেক্টের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।

এছাড়া আহত তিনজনের মধ্যে একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং আহত হামিদ আলী ও আল-মানুন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ জানায়, মধ্যরাতে শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এ সময় ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের এসএস অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেডের ভেতরের একটি কক্ষে সাতজন নিরাপত্তাকর্মী অবস্থান করছিলেন। তখন কালবৈশাখী ঝড়ে প্রথমে ওই কক্ষের চালা উড়ে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর পড়ে। পরে দেয়ালও তাদের ওপর ধসে পড়ে। এতে তাদের মধ্যে পাঁচজন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় ৪ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিলে চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দুইজনের চিকিৎসা চলছে। আহত একজন সামান্য আহত হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুইজন মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার সকালে প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বিভিন্ন অঞ্চলে স্বস্তির বৃষ্টি

টানা ৩৭ দিন তাপপ্রবাহের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজেছে চুয়াডাঙ্গা। এক মাসের বেশি সময় ধরে তীব্র দাবদাহে জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছিল। ত্রাহি অবস্থার মধ্যে জেলার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিতে ভিজে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সোমবার দুপুর ৩টার দিকে হঠাৎ করে আকাশে কালো মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। এর কিছুক্ষণ পর ৩টা ৩৭ মিনিটে বৃষ্টি শুরু হয়। ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলে স্বস্তির বৃষ্টি। বৃষ্টির সময় শিলার পরিমাণ ছিল এক সেন্টিমিটার। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই বৃষ্টির সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলা পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর রহমান বলেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৪ মিলিমিটার। বৃষ্টি শুরু হয় ৩টা ৩৭ মিনিটে এবং শেষ হয় ৫টা ১৫ মিনিটে। বৃষ্টির সময় শিলার পরিমাণ ছিল এক সেন্টিমিটার।

সিলেটে সোমবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। কোনো কোনো স্থানের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সোমবার সকাল ৭টা থেকেই সিলেটজুড়ে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল ১০টার দিকে খানিকটা থামলেও পৌনে ১১টা থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। কালবৈশাখী ঝড়ে গাছের শাখা-প্রশাখা ভেঙে পড়েছে, কোথাও বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়েছে। ফলে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় সিলেটে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

বরিশালে টানা দাবদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টির দেখা পেল নগরবাসী। এতে তাপমাত্রা এখন সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। সোমবার বিকাল থেকেই দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে পরে বিকাল ৪টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। যা পরে আরও তীব্র আকার ধারণ করে ঝুম বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতও হয়।

বরিশাল আবহাওয়া অফিস পর্যবেক্ষক মো. রুবেল হোসেন বলেন, ‘সোমবার বিকাল ৪টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। এতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পরে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে।’

এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় খুলনায় বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। ৬টায় শুরু হয় বাতাস। এতে পরিবেশ ধূলিময় হয়ে ওঠে। ৬টা ২০ মিনিটে দমকা হাওয়ার সঙ্গে নামে বৃষ্টি। ৬টা ২৫ মিনিটে শুরু হয় বজ্রপাত।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনায় দমকা হওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সেটি বাস্তবে হয়েছে। ফলে খুলনাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন।

ফরিদপুরেও অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য শহরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় সামান্য বৃষ্টির দেখা মিললেও শহরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর বজ্রপাতের ঝলকানিই সান্ত¡না জুগিয়েছে তৃষ্ণার্তদের মনে। বিকালের দিকেও কয়েকটি স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামার খবর পাওয়া গেছে।

ফরিদপুরের আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. সেলিম রেজা বলেন, বিকালে ফরিদপুর সদরসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফরিদপুরে ১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে