রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মহামারি সামাল দিতে দরকার শক্ত নেতৃত্ব : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পদ্মশ্রীকন্যা বন্যার সাক্ষাৎ রোহিঙ্গাদের জন্য আরও তহবিলের আহ্বান প্রকল্পে জনগণ কতটা উপকৃত হবে, তা ভাবার তাগিদ
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করেন ভারতের মর্যাদাপূর্ণ পদক 'পদ্মশ্রী' পাওয়া উপমহাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের বরেণ্য শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা -ফোকাস বাংলা

ভবিষ্যতে যে কোনো মহামারি পরিস্থিতি কার্যকরভাবে সামাল দিতে দৃঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং তাদের প্রতিশ্রম্নতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার গণভবন থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্যানেল ফর প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস এবং রেসপন্সের কো-চেয়ারম্যান ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এ গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং প্রতিশ্রম্নতি একান্তভাবে প্রয়োজন। যা ভবিষ্যতে মহামারি প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ এবং কার্যকরভাবে সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে পারে।'

তিনি বলেন, 'মহামারি প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্পর্কিত সংস্কারের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বৈশ্বিক সহযোগিতার ঐক্য তৈরি করে, জনস্বাস্থ্যে আস্থা স্থাপন এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবন বাঁচায়।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'ভবিষ্যৎ মহামারির জটিলতাগুলো সঠিকভাবে সামাল দিয়ে আরও স্থিতিস্থাপক এবং উপযোগী বিশ্বের জন্য শক্তিশালী ও দৃঢ় নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'জরাজীর্ণ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালী করতে আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ হতে হবে।'

'জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় অতীতের সাফল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা

অব্যাহত রাখবে' বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গাদের জন্য আরও

তহবিল চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যামি পোপ সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'যেহেতু (বাংলাদেশে) মিয়ানমার থেকে বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএমের উচিত এ উদ্দেশ্যে আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা।'

সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম গণভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার জন্য বলেছেন। কারণ এখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থানসহ সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।'

বৈঠকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আইওএম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে।' রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে।'

অ্যামি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সরকার অন্য দেশের কাউকে বোঝার জন্য পেশা ও ভাষার ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দক্ষ জনসংখ্যা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সারাদেশে ১১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছে সরকার।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অভিবাসন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু দারিদ্র্য কমলে অভিবাসনের সংখ্যা উলেস্নখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'সরকার অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আয়োজক ও উৎস দেশ উভয়েরই অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। যেহেতু তারা উভয় দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অভ্যন্তরীণভাবেও মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে।'

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রবাসী, কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন ছিলেন।

আগে ভাবতে হবে প্রকল্পে জনগণ

কতটা উপকৃত হবে: প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতি কতটা চাঙা হবে এবং স্থানীয়রা কতটা উপকৃত হবে তা বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, 'আমাদের প্রথমে ভাবতে হবে ফলাফল কী হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেওয়ার পর জনগণ কতটা উপকৃত হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।'

মঙ্গলবার সকালে নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের রূপরেখা সংক্রান্ত উপস্থাপনা দেখার সময় তিনি এ কথা বলেন।

রূপরেখা দেখার পর প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। তিনি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে এবং প্রকল্পগুলো দ্রম্নত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেসসচিব কেএম সাখাওয়াত মুন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের কতটা উন্নয়ন হবে এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে তা আপনাদের বিবেচনা করতে হবে। দ্রম্নত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একটি লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, 'গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা সফলভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।'

তিনি বলেন, তার সরকার রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তর করা। আমরা সেই রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।

এ সময় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রেজওয়ানা

চৌধুরী বন্যার সাক্ষাৎ

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের মর্যাদাপূর্ণ পদক 'পদ্মশ্রী' পাওয়া উপমহাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের বরেণ্য শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বন্যা।

পদ্মশ্রী পদক পাওয়ায় শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'মর্যাদাপূর্ণ এ পদক বাংলাদেশের জন্য গর্বের।'

এ সময় প্রধানমন্ত্রী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

সম্প্রতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে ভারত সরকার। গত ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে পুরস্কারটি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার হাতে তুলে দেন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে