বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরীকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ, এলডিপিসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্র্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানানো হয়েছে রিটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমসহ তিনজন আবেদনকারী হয়ে রিটটি করেছেন। অপর দুজন হলেন- মো. আবুল হাসনাত ও মো. হাসিবুল ইসলাম।
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে অপর একটি রিটও করেছেন তারা। রিটের ওপর আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানি হতে পারে। ১১টি দলের বিষয়ে করা রিটে জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), গণতন্ত্রী দল, মার্ক্সিস্ট-লেলিনিস্ট (বড়ুয়া) ও সোসিওলিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, বেআইনি প্রক্রিয়ায় অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দলগুলোকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে রিটে। দুটি রিট করার কথা জানিয়ে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুলস্নাহ।
রিট আবেদন আ'লীগ 'নিষিদ্ধের জন্য নয়': এদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুলস্নাহ।
তারা বলেন, তারা দুটো রিট আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের বিগত তিনটি নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে। সেখানে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়নি, মামলার
নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটিকে 'রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার' কথা বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ওপর 'নিষেধাজ্ঞা চেয়ে' সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুলস্নাহ রিট আবেদন করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে। পরে এ বিষয়ে একই বক্তব্য আলাদাভাবে ফেসবুকে পোস্ট করে বিষয়টি স্পষ্ট করেন দুই সমন্বয়ক।
সেখানে বলা হয়, তারা দুটো রিট আবেদন করেছেন। তবে দল হিসেবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন বাতিলের কোনো কথা রিটে নেই ?
'আওয়ামী লীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দেবে না সে বিষয়ে প্রথম রিট?এ মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদের পলিটিক্যাল সব অ্যাকটিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট।'
তাদের আইনজীবী আহসানুল করিম সোমবার বলেছেন, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি সিকদার মো. মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে 'সন্ত্রাসী সত্তা' হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ২৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। গত ১৫ বছর দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনে অংশ নেওয়া কোনো কোনো পক্ষের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে 'নির্বিচারে হত্যার' অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং ক্ষমতাচু্যত দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত আগস্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। 'সারডা সোসাইটি' নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক আরিফুর ওই আবেদন করেছিলেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সেটি খারিজ করে দেয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সে সময় শুনানিতে বলেছিলেন, 'অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের। সংবিধানে রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা খর্ব করবে না সরকার। বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের অনেক অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছে মানুষ। অনেক গুম-খুন হয়েছে। সেগুলোর বিচারের জন্য আইন ও আদালত রয়েছে।'
'তবে আওয়ামী লীগের অনেক ভালো নেতাকর্মীও রয়েছেন, তারা দলের মতাদর্শ ধারণ করেন। এজন্য দল নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই। তাদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করার ইচ্ছা এ সরকারের নেই।'
আর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, 'কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না, যদি না কোনো জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত থাকে।'
'সত্যিকার অর্থে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকে, তাহলে প্রচন্ড সততার সঙ্গে তদন্ত করে এমন কিছু (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।'
আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকান্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।'