শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২
পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা

গণভবন জাদুঘরে আয়নাঘরের রেপিস্নকা তৈরি করা উচিত

আরও সৌদি বিনিয়োগ সহায়তা চান ড. ইউনূস দেশবাসীকে অনলাইনে আয়কর দেওয়ার আহ্বান
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
গণভবন জাদুঘরে আয়নাঘরের রেপিস্নকা তৈরি করা উচিত
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণভবন পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ -সংগৃহীত

প্রবল গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর জনরোষে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া তার সরকারি বাসভবন 'গণভবন'কে দ্রম্নত 'জুলাই গণঅভু্যত্থান স্মৃতি জাদুঘর' করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের প্রায় তিন মাস পর গণভবন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এই নির্দেশ দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন- উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'গণভবন জাদুঘরে আয়নাঘরের রেপিস্নকা তৈরি করা উচিত, যেখানে হাসিনার কুখ্যাত আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলো গোপনে শত শত ভিন্নমতের ও বিরোধী নেতাকর্মীদের আটকে রাখত। গণভবন পরিদর্শনে আসা ব্যক্তিদের এই আয়নাঘর তাদের গোপন বন্দিশালার নির্যাতনের কথা মনে করিয়ে দেবে।'

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে 'গণভবন'কে 'জুলাই গণ-অভু্যত্থানের স্মৃতি জাদুঘর' হিসেবে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। জাতীয় সংসদের উত্তর কোণে শেরেবাংলা নগরের প্রাসাদোপম গণভবন নামের বাড়িটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন ছিল। প্রবল গণ-আন্দোলন ও জনরোষের মুখে গত ৫ আগস্ট এই বাড়ি থেকেই পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর জনতার রুদ্ররোষে তছনছ হয় পুরো গণভবন, লুটপাট হয় ভবন এবং ভবন এলাকার সব কিছু।

জাতীয় সংসদের উত্তর কোণে শেরেবাংলা নগরের প্রাসাদোপম গণভবন নামের বাড়িটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন ছিল। তিনি 'জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯' অনুযায়ী এটি ব্যবহার করে আসছিলেন।

ভবনটির ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনকালে

\হউপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া হাসিনা শাসনের অপকর্মগুলো জাদুঘরে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হবে। তারা অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করছেন, যারা তাদের নিজ নিজ দেশে বিপস্নব ও গণ-অভু্যত্থান স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছেন।

আরও সৌদি বিনিয়োগ

সহায়তা চান ড. ইউনূস

এদিকে, বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশে আরও সৌদি বিনিয়োগ এবং জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুহাইলান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এই আহ্বান জানান। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রদূতকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এটাই সময় যখন সৌদি আরব আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করতে পারে।'

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা উলেস্নখ করে ড. ইউনূস দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে অনন্য এবং অন্য দেশগুলোর চেয়ে আলাদা হিসেবে উলেস্নখ করেন।

ড. ইউনূস অর্থনৈতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে তারল্য সহায়তা বাড়ানোর জন্য সৌদি আরবকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূতকে এই অনুরোধ সৌদি সরকারের পৌঁছে দিতে বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস বলেন, 'এটা অন্তর্র্বর্তী সরকারের জন্য একটি চমৎকার সহযোগিতা হবে।'

এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা সৌদি আরবকে বাংলাদেশে বিশেষ ছাড়ে জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহের অনুরোধ করেন।

ড. ইউনূস বাংলাদেশি তরুণদের প্রশিক্ষণে সৌদি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান, যাতে তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে বাংলাদেশ আরও বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠাতে পারে।

রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন, 'দক্ষতা অর্জন তাদের আরও ভালো বেতন পেতে এবং বাংলাদেশে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে সাহায্য করবে।'

রাষ্ট্রদূত বলেন, 'সৌদি আরব প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী ও মুসলিম হজযাত্রীদের ভিসা দেয়।'

রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান বলেন, তার দেশ বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং বন্দর ও লজিস্টিক খাতে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রস্তাবিত সৌদি বিনিয়োগের সুবিধার্থে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সহায়তা চান তিনি।

রাষ্ট্রদূত সৌদি জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দুটি চিঠি হস্তান্তর করেন।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমাদের সরকার বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চায় এবং ইনশাআলস্নাহ, বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত।'

এ সময় রাষ্ট্রদূত দুহাইলান প্রধান উপদেষ্টাকে পবিত্র কোরআনের একটি অনুলিপি এবং সৌদি আরবের জাতীয় পাখি বাজপাখির রেপিস্নকা উপহার দেন।

দেশবাসীকে অনলাইনে

আয়কর দেওয়ার আহ্বান

অন্যদিকে, দেশবাসীকে অনলাইনে আয়কর ই-রিটার্ন জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, 'এখন থেকে ব্যাংকে লাইন দিয়ে আয়কর জমা দেওয়া বা আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়ার ঝামেলা আর করতে হবে না। আপনি ঘরে বসেই আয়কর জমা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন, এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'

সোমবার দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, 'আয়কর নিয়ে দুটি কথা বলছি। আপনাদের দেওয়া কর-ই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অথচ সরকারের কাছে করের টাকা জমা দিতেই পোহাতে হয় নানা ঝামেলা।'

সে জন্য ঘরে বসে অনলাইনে কর দিয়ে রিটার্ন দাখিল সহজ করার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহরের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এভাবে আয়কর রিটার্ন দেওয়া এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশের বাকি সবাইকে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।'

ড. ইউনূস বলেন, 'কোন প্রতিষ্ঠান কত বেশি করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দিচ্ছেন, এর ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জনের জন্য জেলায় জেলায়, শহরে শহরে প্রতিযোগিতা হোক। আপনার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবকে শিখিয়ে দিন, কীভাবে ঘরে বসে অনলাইনে ই-রিটার্ন আয়কর জমা দিতে হয়। তরুণ-তরুণীদের অনুরোধ করছি, এ ব্যাপারে করদাতাদের সাহায্য করার জন্য। ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রস্তুতি এখান থেকেই শুরু হতে পারে।'

ধীরে ধীর সব ধরনের কর অনলাইনে সংগ্রহ করার জন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'সবার জন্য এখন থেকে আয়কর দেওয়ার অভিজ্ঞতা মসৃণ ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত হোক।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে