শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

পিলখানা হত্যাকান্ডের দ্রম্নত পুনঃতদন্ত হবে

বিজিবির কর্মকর্তাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিনিধি
  ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পিলখানা হত্যাকান্ডের দ্রম্নত পুনঃতদন্ত হবে
পিলখানা হত্যাকান্ডের দ্রম্নত পুনঃতদন্ত হবে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের তদন্তে কমিশন গঠন করা হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে পুনঃতদন্ত অবশ্যই হবে এবং তা দ্রম্নত হবে।

সোমবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পুনঃতদন্তে কমিশন গঠন করা হবে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর বলেন, 'কী হবে বলতে পারব না। যেকোনো একটা হতেই হবে।'

উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে খুব সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছতে আরও সময় লাগবে।

মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সীমান্তে কোনো শিথিলতা দেখানো যাবে না। সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারি বজায় রাখতে হবে। জাতীয় স্বার্থ বজায় রেখে চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, বিজিবিকে তাদের আইন ও ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তাদের পারফরম্যান্স আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। সে জন্য সাধারণ জনগণ বিজিবির কর্মকান্ডে খুশি।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবিকে জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একটি সুশৃঙ্খল ও প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিজিবি সদস্যদের চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করতে হবে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বেআইনি আদেশ মানা যাবে না। আদেশের ক্ষেত্রে তা বৈধ ও আইনসঙ্গত কিনা, তা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদও দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এই বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকান্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। এতে ১৩৯ আসামির মৃতু্যদন্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে