বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাখাইনে মুহুর্মুহু বিমান হামলা-বোমা বিস্ফোরণ টেকনাফে আতঙ্ক

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রাখাইনে মুহুর্মুহু বিমান হামলা-বোমা বিস্ফোরণ টেকনাফে আতঙ্ক

কয়েকদিন বিরতির পর ফের গোলাগুলি শুরু হয়েছে টেকনাফের ওপারে। বৃহস্পতিবার রাতভর একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দে স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। টেকনাফ সীমান্তবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তারা এত জোরাল শব্দ শোনেননি। খবর : বিবিসি বাংলা

তাদের ভাষ্য, দিনের বেলায় সবকিছু মোটামুটি শান্ত থাকলেও গত এক সপ্তাহের বেশি সময় যাবত সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিরাতে বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। এর মাঝে বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণ সবচেয়ে 'ভীতিকর' ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন প্রতিটি শব্দের পর টেকনাফ কেঁপেছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আলাদা করেছে নাফ নদী। নদীর এপারে বাংলাদেশের টেকনাফ। আর ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাজ্য রাখাইনের মংডু শহর।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার আর্মি ও বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত দীর্ঘদিনের। তাদের মধ্যে সংঘাত যখনই জোরাল হয়, তখনই তা টের পায় বাংলাদেশও। এই দফায়ও সেটি হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মকর্তারা। সেখানে দু'পক্ষের মাঝে এখন গোলাগুলি হচ্ছে, বিমান হামলা চলছে।

টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া আলফাজ শুক্রবার বলেন, 'বিমান হামলা হলে বিকট শব্দ হয়। এতে আমাদের মাটি, ঘর-বাড়ি পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। রাতে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বাচ্চারা অনেক ভয় পায় তখন। গত সাত থেকে ১০ দিন ধরে বোমা বিস্ফোরণের অনেক বিকট শব্দ শোনা যায়। মনে হয়, বোমাগুলো আমাদের গ্রামেই পড়তেছে। ওইসময় মানুষের ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে।'

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতেও তারা সাতটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দিনেও কি একই রকম পরিস্থিতি থাকে?

উত্তরে তিনি বলেন, 'দিনে পরিবেশের অনেক শব্দ থাকে। তখন এই শব্দ বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু রাতে আর ভোরে যে বিস্ফোরণটা হয়, সেটা মারাত্মক।'

তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি যোগ করেন, 'এই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। এটা যদি সাময়িক হতো, তাহলে তেমন উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় ছিল না। কিন্তু এটি এখন নিয়মিত হচ্ছে।'

বৃহস্পতিবার রাতের পরিস্থিতি বর্ণনা করে কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক আজিম নিহাদ জানান, 'এই ধরনের বিকট শব্দ খুব একটা শোনা যায় নাই আগে। বৃহস্পতিবার রাতে ১১টা থেকে একটার মাঝে টেকনাফের লোকজন শুনতে পেয়েছে।' মংডু ও তমব্রম্ন, দুই সীমান্ত থেকেই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে তিনি জানান।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উলস্নাহ নিজামীও বলেন যে, বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফের চারপাশ বা সেন্টমার্টিনের আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, 'মাঝখান থেকে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার শোনা গেল। আমরা বিজিবির সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সেখানে এয়ার স্ট্রাইক হয়েছে। আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকারের সংঘর্ষ হচ্ছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারে দুই পক্ষের মাঝে ক্রমাগত ঝামেলা চললেও এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের ভেতরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশের জন্য সেটি 'সমস্যা হতে পারে' বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখন যে ধরনের সংঘর্ষ চলছে এবং মিয়ানমার আর্মি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে, এটি একটি 'স্মার্ট মুভ' হবে।

মিয়ানমার আর্মি আরাকান আর্মিকে মোকাবিলা করার জন্য রোহিঙ্গাদেরকে নিয়োগ দিয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, তারা রোহিঙ্গাদেরকে 'কিছু অস্ত্র দিয়ে অল্প সময় ট্রেনিং দিয়ে'।

এদিকে, মিয়ানমারের অনেক রোহিঙ্গা এখন মিয়ানমার আর্মির পক্ষে থেকে আরাকান আর্মির বিপরীতে লড়ছে। আরাকান আর্মি হচ্ছে জাতিগত রাখাইনদের একটি বিদ্রোহী সংগঠন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চলতি বছরের আগস্ট মাসে এক প্রতিবেদনে বলেছে, আরাকান আর্মিকে ঠেকানোর জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের নিয়োগ করেছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমার বাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে জাতিগত রাখাইনদের ওপর হামলা করেছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়। এর ফলে আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে